দেশ

HIV Infection: থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত ৫ শিশুর শরীরে HIV সংক্রমণ, ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টার অভিযোগ হাসপাতালের বিরুদ্ধে

শিশুর মায়ের বক্তব্য, সেপ্টেম্বরে হাসপাতালের কর্মীরা হঠাৎ তাঁকে জানান যে তাঁর শিশু এইচআইভি আক্রান্ত।

Truth of Bengal: ঝাড়খণ্ডের চাইবাসা হাসপাতালে থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত শিশুদের শরীরে হিউম্যান ইমিউনো ভাইরাস (HIV)-এর সংক্রমণ নিয়ে চাঞ্চল্যকর অভিযোগ সামনে এসেছে। আক্রান্ত এক শিশুর মায়ের দাবি, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রায় এক মাস ধরে বিষয়টি গোপন করে রেখেছিলেন এবং গাফিলতি ঢাকতে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। মাসখানেক আগে ঘটনাটি প্রকাশ্যে এলেও, আক্রান্ত শিশুদের মায়েদের অভিযোগের ভিত্তিতে প্রশাসনিক তদন্ত শুরু হয়েছে। সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের একটি প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, চাইবাসার থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত এক শিশুর শরীরে এইচআইভি সংক্রমণের বিষয়টি মাসখানেক আগে প্রকাশ্যে আসে। আক্রান্ত শিশুর মায়ের বিস্ফোরক দাবি, সেপ্টেম্বর মাসেই তাঁর সন্তানের এইচআইভি সংক্রমণ ধরা পড়েছিল। কিন্তু চাপের মুখে সরকারিভাবে বিষয়টি ঘোষণা করা হয় ১৮ অক্টোবর—অর্থাৎ প্রায় এক মাস পর।

শিশুর মায়ের বক্তব্য, সেপ্টেম্বরে হাসপাতালের কর্মীরা হঠাৎ তাঁকে জানান যে তাঁর শিশু এইচআইভি আক্রান্ত। সঙ্গে সঙ্গেই চিকিৎসা শুরু হয় এবং তাঁকে আশ্বাস দেওয়া হয় যে ওষুধ খেলেই তাঁর সন্তান ‘সুস্থ’ হয়ে উঠবে। শিশুর মেডিক্যাল রেকর্ড ঘেঁটেও দেখা গিয়েছে যে, ২৪ সেপ্টেম্বর থেকে গোপনে শিশুটিকে অ্যান্টিরেট্রোভাইরাল (ART) দেওয়া হচ্ছিল। অর্থাৎ, ঘোষণার কয়েক সপ্তাহ আগে থেকেই চিকিৎসকেরা সংক্রমণ সম্পর্কে অবহিত ছিলেন। এ থেকেই প্রশ্ন উঠছে—কেন বিষয়টি গোপন রাখার চেষ্টা করা হয়েছিল? শিশুর মা আরও জানান, বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর থেকেই হাসপাতালের কর্মীরা তাঁদের সঙ্গে ভিন্নভাবে আচরণ করতে শুরু করেন। “তাঁরা কেউ আমার সন্তানকে স্পর্শ পর্যন্ত করছিলেন না। অন্যদেরও আমার সন্তানকে স্পর্শ করতে বারণ করা হচ্ছিল। আমি ভিতরে ভিতরে খুবই আঘাত পাচ্ছিলাম। সে কারণেই শুরুতে আমিও এ বিষয়ে কাউকে কিছু জানাতে চাইনি,” বলেন তিনি।

তিনি আরও দাবি করেন যে, তিনি আগে কখনও এইচআইভি সম্পর্কে শোনেননি, ফলে এই গুরুতর অসুস্থতার গুরুত্ব সম্পর্কেও তাঁর কোনো ধারণা ছিল না। হাসপাতালের এক কর্মী পরে তাঁকে বিষয়টি ব্যাখ্যা করেন। কী ভাবে তাঁর সন্তান হঠাৎ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হল, সে সম্পর্কেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাঁকে কিছু জানাননি, শুধু ওষুধ বন্ধ না করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। চলতি মাসের মাঝামাঝি ঝাড়খণ্ডের পশ্চিম সিংভূম জেলার চাইবাসায় প্রথম এক শিশুর এইচআইভি সংক্রমণের অভিযোগ প্রকাশ্যে আসে। পরে জানা যায়, কেবল একজন নয়, থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত পাঁচ শিশুর দেহে এইচআইভি সংক্রমণ ছড়িয়েছে। অভিযোগ, ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকে দূষিত রক্ত দেওয়ার কারণেই এমনটা ঘটেছে।

জাতীয় এডস নিয়ন্ত্রণ সংস্থা (NACO)-র নির্দেশিকা অনুযায়ী, রক্তদানের আগে দাতার বিস্তারিত ব্যক্তিগত এবং মেডিক্যাল স্ক্রিনিং রেকর্ড নথিভুক্তকরণের পাশাপাশি এইচআইভি সহ অন্যান্য ভাইরাস পরীক্ষা করা বাধ্যতামূলক। যদিও আক্রান্ত শিশুদের অভিভাবকদের দাবি, রক্ত নেওয়ার সময় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কোনো নথিপত্র যাচাই করেননি। তবে চাইবাসার ডেপুটি কমিশনার চন্দন কুমার এই দাবি উড়িয়ে দিয়ে বলেছেন, রেজিস্ট্রেশন বা ডাক্তারি পরীক্ষা ছাড়া রক্তদান অসম্ভব। যেহেতু আক্রান্ত শিশুদের পরিজনেরা বেশিরভাগই গ্রামীণ এলাকার এবং নিরক্ষর, তাই হয়তো হাসপাতালের কর্মীরা তাঁদের হয়ে ফর্ম পূরণ করে দিয়েছিলেন। এই অভিযোগ প্রকাশ্যে আসার পর প্রশাসন নড়েচড়ে বসেছে এবং বিস্তারিত তদন্তের জন্য পাঁচ সদস্যের একটি তদন্তকারী দলও গঠন করা হয়েছে। এই ঘটনায় সদ্য বরখাস্ত হওয়া সিভিল সার্জন সুশান্ত মাঝি জানিয়েছেন, তিনি পরিস্থিতি সম্পর্কে কিছুই জানতেন না, বরং সংক্রমণের বিষয়টি নজরে আসার সঙ্গে সঙ্গেই উপযুক্ত পদক্ষেপ করেছিলেন। তবে হাসপাতালের বর্তমান ইনচার্জ সিভিল সার্জন ভারতী মিঞ্জে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাননি।

Related Articles