সম্পাদকীয়

ভিমরুলের চাকে খোঁচা দিয়েছেন সন্দীপ নন্দী, পাল্টা কামড় সহ্য করতে পারবেন তো!

টাইব্রেকারে দেবজিৎকে নামানোর সিদ্ধান্তটি নেওয়া তার ঠিক হয়নি।

জয়ন্ত চক্রবর্তী: ভিমরুলের চাকে খোঁচা দিয়েছেন ইস্টবেঙ্গলের গোলকিপার কোচ সন্দীপ নন্দী। ভিমরুলের পাল্টা কামড় তিনি সহ্য করতে পারবেন তো? নাকি শেষ পর্যন্ত আপস করে নেবেন? সিস্টেমে ঘা দিয়েছেন সন্দীপ। এই সিস্টেম তাঁকে ছেড়ে কথা বলবে না। সুপার কাপের ডার্বি পর্যন্ত অপেক্ষা। তারপরই খেল বোঝা যাবে। পিকচার অভি বাকি হ্যায়… সন্দীপ কি পারবেন ভারতীয় ফুটবলের আচলায়তন ভাঙতে? নাকি তিনি সিস্টেমের কাছে অসহায় আত্মসমর্পণ করবেন? এর উত্তর পাওয়ার জন্যে আমাদের অপেক্ষা করতে হবে গোয়ায় সুপার কাপ শেষ হওয়া পর্যন্ত।

কী হয়েছিল ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের কোচ এবং গোলকিপার কোচের সংঘাতে? বহু চর্চিত সেই বিষয়টির একবার অবতারণা হয়তো অপ্রাসঙ্গিক হবে না। কলকাতা ডার্বির দিনে ম্যাচের আগাগোড়াই চমৎকার কিপিং করার পরও ইস্টবেঙ্গল টাইব্রেকারে দেবজিৎ মজুমদারকে নামায় এবং দেবজিৎ পাঁচটি পেনাল্টি শ্যুটআউটের একটিও বাঁচাতে না পারায় ইস্টবেঙ্গল যথেষ্ট ভাল খেলেও ডার্বি হারতে বাধ্য হয়। সেদিন সাংবাদিক সম্মেলনেই ইস্টবেঙ্গলের হেড কোচ অস্কার ব্রুজো স্বীকার করেন যে দেবজিৎকে নামানোটা একটা ভুল স্ট্রাটেজি ছিল। সেদিনই তিনি ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে গোলকিপার কোচ সন্দীপ নন্দীর কথাতেই তিনি দেনজিৎকে নামিয়েছিলেন। এই কথাটায় কোনও ভুল নেই। সন্দীপই সেদিন দেবজিৎকে নামানোর জন্যে পীড়াপীড়ি করেছিলেন। দেবজিতের টাইব্রেকারের ইতিহাস মাথায় রেখেই তিনি তাঁকে মাঠে নামানোর সিদ্ধান্ত নেন।

টিম যখন সুপার কাপ খেলতে গোয়ায় যায় সন্দীপও দলের সঙ্গে ছিলেন। গোয়া বিমানবন্দরে অস্কার ব্রুজো সন্দীপকে জিজ্ঞাসা করেন, তিনি কেমন আছেন। সন্দীপ জানান যে তিনি ভাল নেই। টাইব্রেকারে দেবজিৎকে নামানোর সিদ্ধান্তটি নেওয়া তার ঠিক হয়নি। এই পর্যন্ত সব ঠিক ছিল। কিন্তু  হঠাৎই অস্কার ব্রুজো খেলোয়াড়দের সামনেই এবং সর্বসমক্ষে সন্দীপকে অপমান করে বলা শুরু করেন যে, সন্দীপ একেবারে অপদার্থ। খেলার কিছু বোঝেন না ইত্যাদি ইত্যাদি। ক্ষুব্ধ, অপমানিত, ব্যাথিত সন্দীপ বিমানবন্দর থেকেই ফিরতি বিমান ধরে কলকাতায় ফিরে আসেন ও নিয়োগকর্তা ইমামির কাছে তার ইস্তফাপত্র পৌঁছে দেন। সন্দীপের ন্যায্য বক্তব্য, কোচের যে কথাটা বলা উচিত ছিল নিভৃতে ঘরের মধ্যে, তা তিনি পাবলিক করলেন কেন? কেন খেলোয়াড়দের সামনে তাঁকে অপমান করা হল? এই লেখাটি প্রেসে পাঠানোর আগে আমি সন্দীপের সঙ্গে বুধবার দুপুরে কথা বলেছি। সন্দীপ বলছেন যে, তাঁর সিদ্ধান্ত ভুল ছিল। কিন্তু, সেই কথা কোচ প্রকাশ্যে না বললেই পারতেন। সেদিন কোচ স্যর অ্যালেক্স ফার্গুসন কিংবা জোস মরিনহয় থাকলেও তিনি এই সিদ্ধান্ত নিতেন বলে সন্দীপ জানান। তিনি দেখতে চান যে অ্যালেক্স ফার্গুসন কিংবা মরিনহয় তাঁদের গোলকিপার কোচকে আড়াল করতেন নাকি সর্বসমক্ষে অপমান করতেন! ইস্টবেঙ্গলের সুপার কাপ খেলা পর্যন্ত সন্দীপ অপেক্ষা করতে চান। তারপর সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে সব কথা বলবেন। কিন্তু সন্দীপ কী বলতে পারবেন ইনভেস্টরদের সঙ্গে ক্লাব কর্তাদের দূরত্বের কথা? বলতে পারবেন কি যে এই দূরত্বের সুযোগ নিচ্ছেন অস্কার ব্রুজোর মতো আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে নির্বাসিত কিছু কোচ! ইউরোপ এবং লাতিন আমেরিকার কিছু বাতিল এবং ব্রাত্য কোচ টার্গেট করেছে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলিকে। গত পনেরো বছর ধরে দেশের ঠাকুর ফেলে বিদেশি কুকুর গ্রহণের এই নীতি চলছে ভারতীয় ফুটবলে! সন্দীপ এই কথাগুলো কী বলতে পারবেন যে তাঁকে ক্লাবের এজেন্ট ভাবতেন ইনভেস্টর দ্বারা নিযুক্ত কোচ এবং তাঁর সঙ্গীরা? ক্লাব এবং ইনভেস্টর ইমামির মধ্যে যে একটা ফাঁক আছে তা বোঝা যায় বুধবার বিকেলে ডাকা ইস্টবেঙ্গলের একটি সাংবাদিক বৈঠকে। ওই বৈঠকেই প্রথম যাঁর মস্তিস্ক সঞ্চালনায় ইস্টবেঙ্গল ক্লাব চলে সেই নীতু সরকার এক সাংবাদিক মারফত জানতে পারেন যে ইমামি ইস্টবেঙ্গল সন্দীপ নন্দীর ইস্তফা গ্রহণ করে নিয়েছে। যেদিন থেকে ফিফা ফুটবল কোচদের লাইসেন্স থাকা বাধ্যতামূলক করে দিল, সেদিন থেকে মরসুমি ফুলের মত বিদেশি কোচেদের আনাগোনা। সঙ্গে কোচের পছন্দসই সাপোর্ট স্টাফ। কে জানতো অস্কারের সহকারী অদ্রিযান একজন গোলকিপার এবং সন্দীপ নন্দীর জায়গায় সুপার কাপে এই অদ্রিযানই গোলকিপারদের ট্রেনিং দেবেন! সন্দীপ নন্দী কী সাংবাদিক বৈঠকে বলতে পারবেন যে দেশের বহু প্রাক্তন ফুটবলার এখন লাইসেন্সধারী কোচ। কিন্তু এঁদের আসতে দেওয়া হয় না। কারণ কাটমানি। সোনার ডিম পাড়া রাজহাঁসটিকে কে আর মারতে চায়! সন্দীপ নন্দী কি বলতে পারবেন যে, ফুটবল না বোঝা ইনভেস্টরদের টাকার চাঁটি খাচ্ছেন ফুটবল বোঝা কর্তারা? সব বিদেশি কোচই এই গড্ডলিকা প্রবাহে গা ভাসিয়েছেন তা কখনই বলব না। হংস মধ্যে বক যথা-র মতো দুই-একজন ভাল কোচও এসেছেন। কিন্তু তা মুষ্টিমেয়। বেশির ভাগই বিগত যৌবন বিদেশি। যাঁরা তাদের প্রাইম টাইমটা পেরিয়ে গেছেন। সন্দীপ নন্দীতে নয়, অস্কারেই তাঁদের আস্থা বলে যতই সাংবাদিক বৈঠক ডাকা হোক না কেন, সুপার কাপের ডার্বিতে সাফল্য না পেলে অস্কারের কুল মান দুই যাবে। ইনভেস্টরদের আস্থাও হারাবেন তিনি। আবার নতুন কোচের সন্ধান। আবার দেশের ঠাকুর ফেলে বিদেশি…! সন্দীপ নন্দী কি একবার মনে করিয়ে দিতে পারবেন যে, তেরো বছর পরে একজন ভারতীয় কোচের হাতেই ভারতীয় ফুটবল এর শাপমোচন হচ্ছে!