প্রকৃতিকে সন্তুষ্ট রাখতে পাহাড় পুজোর আয়োজন জঙ্গলমহলের অধিবাসীদের
Pahar Puja is organized by the residents of Jangalmahal to keep nature satisfied

The truth of Bengal: জঙ্গলমহলের মানুষের জীবনে শান্তি কামনা করে পাহাড়ের পুজো করছেন প্রকৃতিপ্রেমীরা। মূলতঃ প্রকৃতিকে সন্তুষ্ট করতেই এই পুজোপাঠ করা হয়। আষাঢ় মাসের এই পুজো করা হয়।বাংলা তো বটেই ঝাড়খণ্ডের মানুষও এই অরণ্যের মাঝে মাথা তুলে থাকা পাহাড়ের পুজোয় মেতেছেন। সবুজ অরণ্যের মাঝে রয়েছে পাহাড়।সেই পাহাড়ের পুজোয় মেতেছেন জঙ্গলমহলের মানুষ। ভরা বর্ষায় এই পাহাড় পুজো ঘিরে বেলপাহাড়ির কানাইসোর এলাকায় উত্সবের আবহ তৈরি হয়। অনেক প্রাচীন এই পাহাড়কে বছরের পর বছর ধরে পুজোপাঠ করে আসছেন ঝাড়খণ্ড সীমানার মানুষ।লোকজীবনে বিশ্বাস রয়েছে,প্রকৃতিকে সন্তুষ্ট করতে পারলে চাষবাস ভালো হবে,অতিবৃষ্টিতেও কেউ বানভাসি হবে না।যার ফলে জঙ্গলমহলে শান্তিও সমৃদ্ধি হবে।জনজাতি মানুষদের প্রকৃতি প্রতি এই অগাধ বিশ্বাস আসলে বন্য সভ্যতার এক অন্যরকম আরাধনার ছবি তুলে ধরে।প্রতীকি পুজোর মাধ্যমে আসলে সবাই যাতে পরিবেশ রক্ষার প্রতি যত্নবান হয়,সেই কথাই যেন ছড়িয়ে দেওয়া হয় এই বিরল অনু্ষ্ঠান থেকে।
প্রতি বছর আষাঢ়র তৃতীয় শনিবার থেকে তিন ধরে হয় মেলা। মেতে ওঠেন বাংলা, ঝাড়খণ্ড, বিহার, ওড়িশা রাজ্যের হাজার হাজার মানুষ। ঝাড়গ্রামের বেলপাহাড়ি সীমান্তবর্তী এলাকায় গাড়রাসিনি, খড়িডুংরি সহ যে সমস্ত পাহাড় পুজো হয় তাদের মধ্যে সবচেয়ে বড় পাহাড় পুজো হল এই কানাইসোর পাহাড় পুজো। মূলত এখানকার আদি জনজাতি বাসিন্দারা চাষবাসের আগে প্রকৃতিকে সন্তুষ্ট করতে এই পাহাড়ের পুজো করে থাকেন। লোকবিশ্বাস মতে বহু বছর আগে এলাকায় প্রবল বন্যায় ঘরবাড়ি ,গরামথান বা গ্রাম রক্ষার দেবতা সমস্ত কিছু ভেসে গিয়েছিল। পাহাড়ের পার্শ্ববর্তী ঢেঙাম গ্রামের বাসিন্দারা সেই সময় পাশাপাশি অন্যান্য গ্রামবাসীদের সাথে সভা করে তবে গ্রাম রক্ষার দেবতাকে এই পাহাড়ে প্রতিষ্ঠিত করেন। সেই সময় থেকেই এই পাহাড়ে ঢেঙাম গ্রামের মাহালি সম্প্রদায় পুজারী হিসেবে রয়েছেন।
অন্যান্য গরামথানের মত পোড়া মাটির হাতি ঘোড়ার মূর্তি বসিয়ে পুজো করা হয়। পুজোয় মুরগি বা ছাগ বলি প্রথা প্রচলিত রয়েছে। পাহাড় পুজো ঘিরে এখানে বড় আকারের মেলা বসেছে। এই মেলাতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের সমস্ত রকমের বাদ্যযন্ত্র ও কৃষি কাজের নানান সামগ্রী পাওয়া যায়। পাহাড় পুজোর পরের দিন রবিবার পাশেই কেবলমাত্র আদিবাসীদের বারাঘাটে পৃথক পাহাড় পুজো ও আচার পালন করা হয়।জঙ্গলমহলের সহজ-সরল মানুষগুলো প্রকৃতির প্রতি অগাধ ভক্তি থেকে যে পুজো করেন,তা যদি সবাই মেনে চলেন তাহলে পরিবেশের ভারসাম্যহীনতা বা দূষণের দাপট অনেকটাই কমবে বলে আশা প্রকৃতিপ্রেমীদের।