৪৪০৫৯৫ কোটি বিনিয়োগ প্রস্তাব, দিশা খুলবে কর্মসংস্থানের
Investment proposal of Rs 440595 crores, Disha will open avenues for employment

Truth Of Bengal: রাহুল চট্টোপাধ্যায় ও জয় চক্রবর্তী: অষ্টম বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনে ৪ লক্ষ ৪০ হাজার ৫৯৫ কোটি টাকার বিনিয়োগের প্রস্তাব এসেছে। বাণিজ্য সম্মেলনের শেষ দিনে জানিয়ে দিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আগের সাতটি বাণিজ্য সম্মেলনে ১৯.৫১ লক্ষ কোটি টাকার প্রস্তাব এসেছিল। যার মধ্যে প্রায় ১৩ লক্ষ কোটি টাকা এই রাজ্যে বিনিয়োগ হয়েছে।’
এই মুহূর্তে গোটা দেশে বিনিয়োগের শ্রেষ্ঠ স্থান হিসেবে বাংলাকে চিহ্নিত করেছেন স্বয়ং মুকেশ আম্বানি। এমনকী বাণিজ্য সম্মেলনে আসা বিভিন্ন প্রতিনিধিদের উদ্দেশে বাংলাতে বিনিয়োগ করার আবেদন জানিয়েছেন আম্বানি। পরিকাঠামো থেকে ম্যানুফ্যাকচারিং সব ক্ষেত্রেই পশ্চিমবঙ্গ দেশের অন্যান্য রাজ্য থেকে বেশ খানিকটা এগিয়ে। এগিয়ে পর্যটনের ক্ষেত্রেও। রাজ্যের দুর্গাপুজো ইতিমধ্যেই আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ করেছে। দুর্গাপুজোকে কেন্দ্র করে প্রচুর বিদেশি পর্যটক কলকাতায় আসেন। অন্যদিকে উত্তরবঙ্গের টি ট্যুরিজম-কে আরও বেশি মানুষের কাছে তুলে ধরার জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উদ্যোগ নিয়েছেন। এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘বিনিয়োগের জন্য পশ্চিমবঙ্গ সেফেস্ট ও স্মার্টেস্ট অফ দা ওয়ার্ল্ড।’ বাণিজ্য সম্মেলনের শেষ দিনে মঞ্চ থেকে এমনই গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
২০১১ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে এই রাজ্যে ক্ষমতা বদল হয়। তারপর থেকে এখনও পর্যন্ত স্থায়ী সরকার উপহার দিচ্ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলার ব্যাপারেও এই রাজ্য যথেষ্ট এগিয়ে। বিনিয়োগকারীরা সবথেকে বেশি পছন্দ করেন এই বিষয়টি। সেই কারণেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাণিজ্য সম্মেলনের মঞ্চ থেকে বাংলাতে বিনিয়োগের আহ্বান করেছেন। এক বাক্যে সমস্ত বিনিয়োগকারী বাংলাতে বিনিয়োগ করার জন্য উৎসাহ প্রকাশ করেছেন। তার ফল স্বরূপ চলতি বছরের বেঙ্গল গ্লোবাল বিজনেস সামিট বা বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনে ৪ লক্ষ ৪০ হাজার ৫৯৫ কোটি টাকা বিনিয়োগের প্রস্তাব এসেছে। দেশ-বিদেশের প্রায় পাঁচ হাজার প্রতিনিধি এই সম্মেলনে উপস্থিত হয়েছিলেন। বিভিন্ন ক্ষেত্রে ২১২ টি মউ বা মেমোরেন্ডাম অফ আন্ডারস্ট্যান্ডিং স্বাক্ষর হয়েছে বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বিভেদ করি না। এক সঙ্গে থাকতে ভালবাসি। বাংলা হবে দেশের সাংস্কৃতিক রাজধানী। এটা ভুলে গেলে চলবে না।’ বুধবার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, শিল্প সম্মেলন যুবক-যুবতীদের কাছে নতুন চাকরির দরজা খুলে যাবে। মুখ্যমন্ত্রীর কথায় সায় দিয়ে শিল্পপতি সত্যম রায় চৌধুরি বলেন, ‘এ বছরে যতগুলি চুক্তি হল সেগুলি কতটা বাস্তবায়িত হল সেটা দেখার জন্যই বাণিজ্য সম্মেলন প্রতিবছর হওয়া প্রয়োজন। যার ফলে কর্মসংস্থানের নতুন দরজা খুলে যায়।’
সেই কারণেই মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন গত সাতটি বাণিজ্য সম্মেলন থেকে ১৩ লক্ষ কোটি টাকা এই রাজ্যে ইতিমধ্যে বিনিয়োগ হয়েছে। চলতি বছরের বাণিজ্য সম্মেলনে ১০০টির বেশি সংস্থা যোগদান করেছে। ‘বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলন এক অভূতপূর্ব সাফল্য পেয়েছে’– এই কথা বলার পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন বেশ কয়েকজন শিল্পপতির সঙ্গে তাঁর আলাদা করে কথা হয়েছে। এই প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘মুকেশ আম্বানি, সজ্জন জিন্দালের সঙ্গে আলাদা করে কথা হয়েছে। তাঁরা আমাকে জানিয়েছেন যে বিনিয়োগের কথা তাঁরা যে বলেছেন তা বাস্তবায়ন হবে।’
একদিকে বিনিয়োগ অন্যদিকে কর্মসংস্থান। রাজ্য সরকারের মূল লক্ষ্য যত বেশি কর্মসংস্থান করা যায়। তার জন্যেই বিনিয়োগের প্রস্তাবগুলি যাতে বাস্তবে পরিণত হয় তার জন্য সংস্থাগুলির সঙ্গে সারা বছর যাতে যোগাযোগ রাখা যায় তার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশাপাশি বিনিয়োগকারীদের জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত ধরনের ব্যবস্থা সহজলভ্য যাতে হয় তার জন্যেও নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। সব মিলিয়ে অষ্টম বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলন যথেষ্ট সফল। আর এই সফলতার জন্যেই মুখ্যমন্ত্রী বাণিজ্য সম্মেলনের শেষ দিনে মঞ্চ থেকে মুখ্য সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব সহ রাজ্য সরকারের সমস্ত দফতরকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেছেন। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেছেন সমস্ত বিনিয়োগকারী যারা বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেছেন।