
The Truth of Bengal: প্রবাদ হয়ে আছে, সব তীর্থ বার বার, গঙ্গাসাগর একবার। এটা নিছকই কথার কথা নয়। এটা সত্যিই মন থেকে বিশ্বাস করেন ভক্তরা। একটা মেলাকে কেন্দ্র করে কেন লক্ষ লক্ষ মানুষের ভিড় হয়? অনেকের মনে এই প্রশ্ন থাকতে পারে। আসলে মেলা বিষয়টি এখানে গৌণ। সাগরস্থানকে কেন্দ্র করে মেলা বসে। আর সেই মেলার বাহুল্য প্রচার হয়। কী আছে এই পুণ্যভূমিতে। কেন এই জায়গা পুণ্যভূমি? হিন্দুরা বিশ্বাস করেন, একবার রাজা সাগর অশ্বমেধ যজ্ঞের আয়োজন করেছিলেন। সাগর রাজার অশ্বমেধ যজ্ঞের ঘোড়া চুরি করেন দেবরাজ ইন্দ্র এবং সেই ঘোড়া বেঁধে রাখেন পাতাললোকে। সাগর রাজ ঘোড়া খুঁজতে পাতাললোকে এসে দেখতে পান সেই ঘোড়া বেঁধে রাখা আছে কপিল মুনির আশ্রমের পাশে। রাজা মনে করেন, কপিল মুনিই তাঁর ঘোড়া চুরি করেছেন। রাজার মনের কথা জানতে পেরে কপিল মুনি রেগে গিয়ে তাঁকে সহ তাঁর পরিবারকে ভষ্মীভূত করে দেন।
এরপর রাজা সাগর বংশের পরবর্তী প্রজন্ম ভগীরথ দেবাদিদেবের প্রার্থনা করেন এবং তাঁকে সন্তুষ্ট করতে গঙ্গাকে স্বর্গ থেকে মর্ত্যে নিয়ে আসেন। গঙ্গার সেই পবিত্র জলস্পর্শে সাগর বংশের ভষ্মীভূত সন্তানরা নিজেদের জীবন ফিরে পান। তাঁরা ফিরে যান স্বর্গে। সাগরের সেই জলে একবার ডুব দিতে পারলে সমস্ত পাপ ধুয়ে যাবে। সহজেই যাওয়া যা স্বর্গে। এই বিশ্বাস থেকে হাজার কষ্ট সহ্য করে দূর দূর থেকে মানুষ আসে গঙ্গাসাগর। তাই সব তীর্থ বার বার হলেও জীবনে গঙ্গাসাগর অন্তত একবার আসতেই হবে। এই মাহাত্ম্য থেকে প্রতিবছর লক্ষ লক্ষ মানুষ আসে কপিল মুনির পুণ্যভূমিতে। কুম্ভমেলা হল হিন্দুদের সবথেকে বড় উৎসব বা মেলা। আর তারপরেই স্থান রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের গঙ্গাসাগর মেলার।
গঙ্গাসাগর এবং বঙ্গোপসাগরের মিলন স্থলে এই মেলা হয় প্রতিবছর। সাগরদ্বীপের দক্ষিণ প্রান্তে অবস্থিত কপিল মুনির আশ্রম। আর মকর সংক্রান্তিতে সেই আশ্রম সংলগ্ন এলাকাতেই গঙ্গাসাগরের বসে মেলা। কপিলমুনির ধাম সাগরদ্বীপ মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন। সুন্দরবনের শেষ প্রান্তের এই দ্বীপটিকে মূল ভূখণ্ড থেকে আলাদা করেছে মুড়িগঙ্গা নদী। কাকদ্বীপের আট লট নম্বর থেকে ভেসেলে মুড়িগঙ্গা নদী পেরিয়ে তারপরে সাগর দ্বীপে পৌঁছতে হয়। সাগর দ্বীপে এই তীর্থে যাওয়া খুব একটা সহজ নয়। সাগর জলে পাপ ধুয়ে ফেরার জন্য দুর্গম জলপথ পেরিয়ে লক্ষ লক্ষ মানুষ আসেন এই দ্বীপে। সব রাজ্যে মানুষের সমাগমে মেলার কয়েকটি দিন গঙ্গাসাগর হয়ে ওঠে মিনি ভারতবর্ষ। সাগরদ্বীপের সেই পুণ্যভূমি এখন গমগম করছে।