বাংলার বুকে এক টুকরো বিলেত ধান্যকুড়িয়া, খ্রিস্টমাস উদযাপনে উৎসবপ্রেমী মানুষ
Dhanyakuria is a piece of Bengal's bosom, people celebrating Christmas

The Truth Of Bengal: বাংলার বুকে থাকা ধান্যকুড়িয়া হয়ে উঠেছে একটুকরো বিলেত। সনাতনী ভিক্টোরিয়ান ধাঁচে গড়ে ওঠা রাজবাড়ি আজও দেশ-বিদেশের পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। যাঁরা এখানে আসছেন তাঁরা যেন স্বপ্নরাজ্যে হারিয়ে যাচ্ছেন।সবুজের সমাহারের মাঝে থাকা এই হেরিটেজ সাইট পর্যটকদের পরমপ্রিয় জায়গা হয়ে উঠছে।
বেশিরভাগ মানুষ যখন বড়দিন উদযাপনের জন্য পার্কস্ট্রিট-বোব্যারাকে যেতে ব্যস্ত,তখন ঐতিহ্যপ্রেমী মানুষ বিকল্প জায়গা খুঁজে নিচ্ছেন।যার অন্যতম হল ধান্যকুড়িয়া রাজপ্রাঙ্গন।এই বৃহত্তর ধান্যকুড়িয়া অঞ্চলই হয়ে উঠেছে একটুকরো বিলেত।এখন সেই মিনি বিলেতেই খ্রিস্টমাস উদযাপন করছেন অসংখ্য উত্সবপ্রেমী মানুষ। ৩০ একর জায়গায় জুড়ে দাঁড়িয়ে থাকা এই রাজবাড়ির মধ্যেই রয়েছে আস্ত এক পুষ্করিণী, যাতে রাজবাড়ির প্রতিচ্ছবি ঝলমল করে সারাদিন। গোটা দুর্গটিকে কেন্দ্র করে রয়েছে বিশাল এক বাগানও। দুর্গের ভেতরে ঢুকলেও রীতিমতো চমকে যেতে হবে। নানা ধরনের ভিক্টোরিয়ান কারুকাজ থেকে শুরু করে রয়েছে ইতালিয় কাচের তৈরি আসবাব, যা এক কথায় মন্ত্রমুগ্ধকর। গ্রীষ্মকালে এই রাজবাড়িতে ব্রিটিশরা আসতেন বলে এই এলাকা হয়ে ওঠে সাহেবী কালচারে অভ্যস্ত একটুকরো বিলেত।বাংলার সরকার এই গায়েনদের ঐতিহ্যশালী রূপ মাধুর্যকে হেরিটেজের মর্যাদা দিয়েছে।তাই স্বপ্নরাজ্যে এসে জেনজেড থেকে প্রবীণ মানুষ উত্সবের আনন্দ ভাগ করে নিচ্ছেন।কার্যতঃ বসিরহাটের এই বর্ধিষ্ণু অঞ্চল পর্যটন মানচিত্রে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।বড়দিন উপলক্ষে আয়োজন করা হয়েছে ধান্যকুড়িয়া উত্সব।এই উত্সব পর্যটক থেকে হেরিটেজপ্রিয় মানুষ সবার কাছে আলাদা বিনোদনের বলিষ্ঠ সুযোগ করে দিয়েছে।
গ্রীষ্মকালে এই রাজবাড়িতে এসে অনেক সময়ই ছুটি কাটাতেন ব্রিটিশ সাহেবরা। তাঁদের জন্য ছিল পৃথক নহবতখানা, অতিথিশালা। এমনকি সেসময় এই রাজবাড়ির জন্য পৃথক রেল স্টেশনও তৈরি করেছিল মার্টিন কোম্পানি। গায়েন গার্ডেন নামের সেই স্টেশনে এসে থামত ন্যারো গেজের ছোট্ট বাষ্পচালিত ট্রেন। বসিরহাটের নিকটবর্তী ছোট্ট জনপদ ধান্যকুড়িয়া। সেখানে গেলেই দেখা মিলবে এই আশ্চর্য স্থাপত্যের। কথিত আছে, সুবিশাল এই রাজবাড়ি বানিয়েছিলেন ধান্যকুড়িয়ার জমিদার মহেন্দ্রনাথ গায়েন। সেসময় ফুলেফেঁপে উঠেছিল তাঁর পাটের ব্যবসা। মূলত ইংরেজদের সঙ্গেই চলত তাঁর লেনদেন। আর সেই সুবাদেই উত্তর ২৪ পরগণার এই প্রান্তিক অঞ্চলেও নিত্যদিন লেগে থাকত ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সাহেবদের আনাগোনা। তাঁদের বিলিতি সংস্কৃতি, ঐতিহ্যকে উস্কে দিতেই ইউরোপীয় দুর্গের আদলে এই রাজবাড়ি নির্মাণ করেন মহেন্দ্রনাথ। ১৯৬০ সালে গুরু দত্ত, ওয়াহিদা রহমান এবং মীনা কুমারী অভিনীত ‘সাহেব বিবি গোলাম’ ছবির শুটিং হয় এখানে। এছাড়াও মহানায়ক উত্তমকুমার অভিনীত ‘সূর্যতপা’-সহ একাধিক সিনেমার শুটিং হয়। পরিচালক ঋতুপর্ণ ঘোষের শেষ ছবি ‘সত্যান্বেষী’র শুটিংও ধান্যকুড়িয়াতে হয়েছিল।রূপোলী পর্দায় উঠে আসা এই রূপকথার রাজ্যের ঠিকানায় পৌঁছতে অনেকেই এই ডিসেম্বরের খ্রিস্টমাসকে বেছে নিচ্ছে।
Free Access