রাজ্যের খবর

অন্যের জীবন মধুময় করতে মধু সংগ্রহে মৌ-পালকরা

Beekeepers collect honey to make others' lives sweeter

Truth Of Bengal: মধু একাধিক রোগ প্রতিরোধ করে। শীতে তাই মধুর চাহিদা বাড়ে। সেই চাহিদার কথা মাথায় রেখেই এবার মধু সংগ্রহে নেমে পড়লেন মধু সংগ্রহকারীরা। বাক্স নিয়ে হাজির হয়ে যাচ্ছেন তাঁরা। রীতিমতো শিবিরও করছেন, মধু নিয়ে আসার জন্য। গৌড়বঙ্গের মধু সংগ্রহকারীরা বলছেন, এবার সরষে ফুল বেশি হওয়ায় মধু বেশি পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। বাজারে অনেক ভেজাল মধু পাওয়া গেলেও এই খাঁটি মধুর কদর এখনও রয়েছে বলে মনে করছেন তাঁরা।

মধুময় জীবন সকলেই চান। জীবন যাতে সুমিষ্ট হয়ে ওঠে সেজন্য শিশুকালেই মুখে মধু দিয়ে দেওয়া হয়। মুখে মধু আসার জন্যই সমাজের এই রীতি বলেও শোনা যায়। একসময় রবীন্দ্রনাথ এই বিষয়ে লেখেন, ‘কাল যে কুসুম পড়বে ঝরে, তাদের কাছে নিস গো ভরে / ওই বছরের শেষের মধু, এই বছরের মৌচাকেতে।’

শীত পড়লেই মধু খাওয়ার রেওয়াজ বাড়ে। সেই সুমধুর সম্পর্কের বাঁধন শক্ত রাখতে এখনও সনাতনী প্রথা মেনে ধর্মীয় অনুষ্ঠান থেকে সমাজের নানা কাজে এই মধুর ব্যবহার করা হয়। একসময় চাণক্যের সংস্কৃত শ্লোকে লেখা হয়,মধু তিষ্টতি জিহ্বাগ্রে হৃদয়ে তু হলাহলম। অর্থাত্ মুখে মধু থাকলেও অন্তরে বিষ। মুখের মিষ্টতা যে কতটা দামী তা একথা থেকে পরিষ্কার হয়ে যায়। প্রাচীনকাল থেকেই মধু সংগ্রহের চল রয়েছে। সেই মধু সংগ্রহের কাজে এবার শীতের মরসুমে নেমে পড়লেন মধু সংগ্রহকারীরা।মালদায় সেই কাজই চলছে জোরকদমে। বাক্স পেতে মধু ভরছেন এইসব মধু সংগ্রহকারীরা। উত্তরবঙ্গের মানুষ এই মধু কেনার জন্য উদগ্রীব। কেমন মধু মিলছে এবার?

এবার মধু চাষের উপযোগী আবহাওয়া। মাঠে সরিষার ফুল ভালো এসেছে। পাশাপাশি সকালের দিকে কুয়াশা থাকছে, বেলা বাড়তেই সূর্যের তাপ, যা মধু উৎপাদনের পক্ষে অনুকূল। এই সময় ভাল মধু উৎপাদন হবে। মধুর উৎপাদনের জন্য মৌমাছির সঠিক পরিচর্যা এখন প্রয়োজন। বিশেষ করে রাণী মৌমাছির স্বাস্থ্যের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। কোন কারণে রাণী মৌমাছি অসুস্থ হয়ে পড়লে বা পর্যাপ্ত পরিমাণে ডিম না দিলে ঘাটতি হবে মাছির বংশবৃদ্ধিতে। মৌমাছির চাকে পর্যাপ্ত ডিম বা লাভা না থাকলে শ্রমিক মৌমাছি ফুলের পরাগ সংগ্রহ করবে না সঠিক পরিমাণে। এতে করে মধু উৎপাদন কম হবে। চাকে মধু উৎপাদন কম হলে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন মধুচাষীরা। তাই এই সময় মধু চাষীদের নিয়মিত নজরদারি রাখতে হবে মৌমাছি বাক্সে। প্রতিটি বাক্সে চাক গুলিতে সঠিক পরিমাণে ডিম রয়েছে কিনা, পর্যাপ্ত পরিমাণে শ্রমিক মৌমাছি রয়েছে কিনা এই সমস্ত বিষয়গুলিতে নজরদারি চালাতে হবে। সঙ্গে অবশ্যই রানী মৌমাছির স্বাস্থ্যের খেয়াল রাখতে হবে।

যে বাক্সে রানী মৌমাছি কম ডিম দিয়েছে সেই সমস্ত চাকগুলি সুস্থ স্বাভাবিক রানী মৌমাছির বাক্সে বদলাতে হবে। এইভাবে অদল- বদল করে সামঞ্জস্য ঠিক রাখতে হবে বাক্সগুলির। এতে  পর্যাপ্ত পরিমাণে মধু উৎপাদন হবে। কারণ বছরের এই শীতের মরশুমে মাঠে সরষে ফুল ফুটলে সবচেয়ে বেশি মধু উৎপাদন হয়। তাই মধুচাষিরা এই একটি সময়ের জন্য অপেক্ষায় থাকেন। এই সময়ই পর্যাপ্ত পরিমাণে মধু উৎপাদন করতে নিয়মিত বাক্সের পরিচর্যা মাছের দেখভাল করাটা গুরুত্বপূর্ণ।

Related Articles