
Truth Of Bengal: ২৫ বছর ধরে পায়ে শিকল ! বারান্দায় বাঁশের খুঁটিতে দড়ি দিয়ে বাঁধা থাকায় তার জগত। মানসিক ভারসাম্যহীন মেয়েকে বেঁধে রেখেছেন বাবা-মা। আরও দুই বোন কোথায় হারিয়ে গিয়েছে। মালদার ইংরেজবাজার থেকে বাংলা জাগো’র বিশেষ প্রতিবেদন।
রাস্তার ধারে খাস সরকারি জমিতে এক ভাঙ্গাচোরা বাড়ি। বাড়ির ইটের দেওয়াল ফাটলে পরিপূর্ণ। টালির চালের ছাউনি। বারান্দায় বাঁশের খুঁটিতে দড়ি দিয়ে বাঁধা এক যুবতী। তার বয়স বোঝার উপায় নেই। অবশ্য আধার কার্ডের তথ্য বলছে বয়স এখন ৩৭ বছর। আড়াই দশকের বেশি সময় ধরে তাকে এভাবেই বেঁধে রাখা অবস্থায় দেখে আসছেন গ্রামবাসীরা। মানসিক ভারসাম্যহীন হাওয়ার কারণে এই ভাবে দিনযাপন করতে হয় তাকে। ঘটনাটি ইংরেজবাজার ব্লকের নরহাট্টা গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত শৈলপুর গ্রামের।
এই গ্রামের বাসিন্দা শেখ জাক্কার, বয়স তার ৭৫। দিনমজুরি করে সংসার চালানোর পথও বন্ধ হয়ে গিয়েছে শারীরিক অসুস্থতার কারণে। চার মেয়ে ও স্ত্রী নিয়ে তার সংসার। তার স্ত্রী মালেকা বিবি ছাগল প্রতিপালন করেন। বয়স তার ৬০ বছর। বৃদ্ধ এই দম্পতির চার মেয়ের মধ্যে তিনজনই বিশেষভাবে সক্ষম। শুধুমাত্র বড় মেয়েই খানিকটা সুস্থ। অনেক ধার-দেনা করে মেয়ের বিয়ে দিতে পেরেছেন বৃদ্ধ দম্পতি। মানসিক ভারসাম্যহীন তিন মেয়ের চিকিৎসা চালাতে হিমশিম খেয়েছে তারা। একসময় তিন মেয়ের চিকিৎসা করেছেন তারা।
কিন্তু খরচের ধাক্কায় বেশিদিন টানতে পারেননি। বছর পনেরো আগে প্রশাসন তিন মেয়ের বহরমপুর মানসিক হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যাবস্থা করায়। তখন চিকিৎসার জন্য কোন খরচ লাগেনি বটে তবে সেখানে যাতায়াত ও খওয়ার খরচের বহর বাড়ছিল। তাই দিন দশেক পরেই মেয়েদের ফিরিয়ে নিয়ে আসেন বাবা। এখন চিকিৎসার প্রশ্নই নেই । এইদিকে বাড়ির তিন ভারসাম্যহীন মেয়ের মধ্যে দুইজন বাড়ি থেকে উধাও। নেই তাদের কোন খোঁজ। বাকি একজনকে বাড়ির উঠোনে বেঁধে রেখেছেন মা বাবা।
দুই বেলা পরিবারের পেট ভরাতে পারেন না জাক্কার। মেয়েদের চিকিৎসা করানো তার কাছে দিবাস্বপ্ন । গ্রামে গিয়ে দেখা যায় মেয়ে গোলবানু বাড়ির বারান্দায় দড়ি দিয়ে বাঁধা। বাড়িতে রয়েছেন জাক্কারও। কিন্তু স্ত্রী কিংবা বাকি দুই মেয়ের দেখা নেই। প্রতিবেশীরা জানালেন জাক্কারের স্ত্রী মালেকা বিবি ছাগল চরাতে গিয়েছেন। মেজো মেয়ে জুলি আর ছোট মেয়ে টুম্পা কোথায় গিয়েছেন কেউ জানে না। দুদিন ধরে তারা বাড়ি ফেরেনি। এই অবস্থায় কার্যত দিশেহারা পরিবার।