
The Truth of Bengal: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের (Rabindranath Tagore) মনে ভারতের বুকে সর্ব মানবের মিলনক্ষেত্র রচনার এক কল্পনা ছিল। তিনি শান্তিনিকেতনকে (Shantiniketan) বিশ্বের সঙ্গে ভারতের যোগসুত্র করে তুলতে চেয়েছিলেন। স্বদেশী সংকীর্ণতা থেকে বেরিয়ে এসে যেখানে শিক্ষার চর্চা মানসিক বোধের চর্চা এক দীর্ঘস্থায়ী কেন্দ্র স্থাপিত হবে। এই কল্পনার বাস্তবায়ন ঘটিয়েছিলেন। তিনি একটি চিঠিতে লিখেছেন “ভবিষ্যতের জন্য যে বিশ্বজাতিক মহামিলন ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন যজ্ঞের প্রতিষ্ঠা হচ্ছে। তার প্রথম আয়োজন ওই বোলপুরের (Bolpur) প্রান্তরেই হবে। ওই জায়গাটিকে সমস্ত জাতিগত ভূগোল বৃত্তান্তের অতীত করে তুলবে। এই আমার মনে আছে। সর্ব মানবের প্রথম জয়দ্ধজা ওইখানে রোপন হবে”…আনন্দই ছিল শান্তিনিকেতনের শিক্ষার মাধ্যম রবীন্দ্রনাথ আনন্দে স্পর্শে সৃজনধর্মী শিক্ষা প্রচলন এর চেষ্টা করেছিলেন শান্তিনিকেতনে। আর তার চিন্তাভাবনার মূলে ছিল কবির বাল্যকালের বিদ্যালয়ের অভিজ্ঞতা।
কবিগুরুর কাব্যে সাহিত্যের সংগীতে বারবার যে সত্য সুন্দরের আরাধনা দেখা গেছে, সেই সত্য সুন্দর কে প্রতিষ্ঠিত করার বাস্তব প্রয়াসই হল শান্তিনিকেতন। যা এক অবিচ্ছেদ্য সূত্রে গথিত। বীরভূমের শান্তিনিকেতন তাই আজ আন্তর্জাতিক দর্শনীয় স্থান যেখানে শুধু বাংলার মানুষ নয়, ভিড় জমান দেশ-বিদেশের পর্যটকরা। শান্তিনিকেতন দেখতে আসলে শান্তিনিকেতন মেলাতে আপনাকে দেখতেই হবে। শান্তিনিকেতনের পৌষ মেলা এক ঐতিহ্যপূর্ণ উৎসব এই বীরভূম জেলায় প্রতিবছর ৭ পৌষ এই মেলা শুরু হয় তিন দিন ধরে চলে এই উৎসব অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হল বাংলা লোকসংগীত এর অনুষ্ঠান বিশেষত বাউল গানকে কেন্দ্র করে যে অনুষ্ঠান হয় তা মন কারা ১৮৪৩ সালের একুশে ডিসেম্বর দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর কুড়িজনকে নিয়ে গ্রহণ করেছিলেন।
এটি শান্তিনিকেতনের পৌষ উৎসবের মূল ভিত্তি ১৮৯৪ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে আয়োজিত হয়ে আসছে এই পৌষ মেলা ১২৬ বছরের ইতিহাস জুড়ে রয়েছে এই মেলার সঙ্গে মোট দুবার বন্ধ হয়েছিল এই পৌষ মেলা ১৯৪৩ এ দেবেন্দ্রনাথের দীক্ষা গ্রহণের শতবর্ষের মন্বন্তরের কারণে এবং ১৯৪৬ এ সাম্প্রদায়িক অশান্তির কারণে বেলা আয়োজন সম্ভব হয়নি। পৌষমেলা হৃদয়ের মেলা অন্তরে উৎসব। নাড়িরটান এই লালমাটির সঙ্গে। কবির গানের কথায় বলতে পারি “পৌষ তোদের ডাক দিয়েছে, আয় রে ছুটে আয় আয়”…পৌষ নিজেই ডাক দেয় এই উৎসব আনন্দে মেতে ওঠার জন্য।
শান্তিনিকেতনে আগত বাঙালির আরেকটি ডেস্টিনেশন হচ্ছে “সোনাঝুরি হাট”… নতুনত্বের নিরিখে এক বিশেষ আকর্ষণ। বিনোদনের সাথে নতুনত্ব যেন সম্ভারের ডালে সাজিয়ে বসে আছে এই সোনাঝুড়ির হাটে। শুধু দেখার জন্যই নয় কেনা বেচার এক অসাধারণ জায়গা। স্থানীয় গ্রামবাসীদের আয়ের নতুন পথ খুলে দিয়েছে। হাতে তৈরি বিভিন্ন অলংকার সহ একতারা বাঁশি, নানান হস্তশিল্প, পিঠেপুলির মতন বাঙ্গালীর ঐতিহ্যপূর্ণ মিষ্টান্ন কি নেই সেখানে। সেইসঙ্গে আদিবাসী নৃত্য ধামসা মাদলের সাথে সবমিলিয়ে এক আনন্দ উৎসব।
শান্তিনিকেতনের আশ্রমিক পরিবেশ ছাড়িয়ে খোয়াইয়ে প্রবেশ করতেই, চোখে পড়বে একটা লেখা ” খোয়াই বনের অন্য হাট”….খোয়াই নদীর ধারে এই সোনাঝুরি হাটের অবস্থান। প্রখ্যাত কথা সাহিত্যিক তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছোট উপন্যাস হাঁসুলি বাঁকের উপকথায় খোয়াই নদীর ধারা অনুপ্রাণিত। শান্তিনিকেতনের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে অবশ্যই বাউল গান। নাগরিক সভ্যতার নাগপাশ থেকে মুক্ত হয়ে একেবারে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ডুব দিতে শান্তিনিকেতন আপনার সপ্তাহান্তে হতে পরে দারুন ডেস্টিনেশন।