অফবিটদেশ

দ্বাদশ জ্যোতিলির্ঙ্গের ইতিহাস

Dados jyotirlinga

The Truth of Bengal: প্রাচীন কাল থেকে হিন্দু ধর্ম পৃথিবীর অন্যতম প্রাচীন ধর্ম । বহু প্রাচীন যুগ থেকেই হিন্দু ধর্মের দেবদেবীরা পুজিত হয়ে আসছে। পৌরাণিক কোথায় ৩৩ কোটি দেবদেবী হিন্দু ধর্মে বিরাজ করেন। তবে তাদের মধ্যে দেবাদী দেব মহাদেব অন্যতম। মহাদেব হিন্দু ধর্মে দুইরূপে পুজিত হন মূর্তি ও লিঙ্গ রূপে। এই লিঙ্গের মধ্যে জ্যোতির লিঙ্গ ও সাধারণ শিব পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। সারা ভারত বর্ষ জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে শিবের অসংখ্য মন্দির। তবে মহা ভাবে পুজো করা হয় শিবের বারটি জ্যোতির লিঙ্গকেই।

 কি এই জ্যোতির্লিঙ্গ?

জ্যোতির লিঙ্গ হল শিবের জ্যোতি এক কথায় যাকে বলা হয় রশ্নি বা আলো। এই জ্যোতি শির দ্বারা সৃষ্টি হয়েছিল, এটি মানব সৃষ্টি না। তাই গোটা দেশে প্রচুর শিবলিঙ্গের মন্দির থাকলেও বেশি প্রাধান্য দেয়া হয় 12 টি জ্যোতিলিঙ্গ কে।

জ্যোতির্লিঙ্গ সৃষ্টির পৌরাণিক কাহিনী

শিবের দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গ সৃষ্টি সম্পর্কে শিব পুরাণে এর উল্লেখ্ রয়েছে । পুরানের কাহিনী অনুসারে, ভগবান বিষ্ণু এবং ব্রহ্মার মধ্যে কে শ্রেষ্ঠ এই নিয়ে বিবাদ শুরু হয়। এই দুই দেবতাই নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের জন্য সমস্ত পন্থা অবলম্বন করতে থাকে। এই যুদ্ধে ভগবান শিব মধ্যস্থতাকারী বিচারক রুপে আবির্ভূত হোন। তিনি সৃষ্টিকর্তা এবং রক্ষাকর্তার মাঝে আলোক জ্যোতির স্তম্ভ রূপে আবির্ভূত হোন, এই স্তম্ভ রুপী জ্যোতির্লিঙ্গের কোনো আদি ও অন্ত ছিলনা, বলতে গেলে এটি ছিল অনন্ত। তিনি দুজনকেই এই জ্যোতির্লিঙ্গের শুরু এবং শেষ খুঁজে বের করতে বললেন, সেই কথামত দুজনই এই জ্যোতির্লিঙ্গের দুদিক থেকে শুরু এবং শেষ অংশ খোঁজা শুরু করেন কিন্তু ব্যার্থ হোন এবং তাদের ভ্রম দূর হয়।

১২ টি জ্যোতির লিঙ্গের নাম এবং ধাম সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরণ

১.সোমনাথ- গুজরাটে অবস্থিত দুটি জ্যোতির্লিঙ্গের মধ্যে এটি যার অবস্থান গুজরাটের সৌরাষ্টের প্রভাস ক্ষেত্র এলাকায়, একদম আরব সাগরের তীরে। এটি দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গের মধ্যে প্রথম জ্যোতির্লিঙ্গ।

২. মল্লিকা অর্জুন – দক্ষিণ ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্যের কুর্নুল জেলায় শ্রীশৈলম পাহাড়ের কোলে অবস্থিত শ্রী মল্লিকার্জুন জ্যোতির্লিঙ্গ।

৩. মহাকালেশ্বর – মধ্যপ্রদেশে আছে শিবের দুটি জ্যোতির্লিঙ্গ। সেদুটির মধ্যে উজ্জয়িনীতে অবস্থিত। উজ্জয়িনীর শিপ্রা নদীর তীরে অবস্থিত দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গ মধ্যে উল্লেখযোগ্য এই মহাকাল মন্দির, যা জ্যোতির্লিঙ্গ গুলোর মধ্যে একমাত্র দক্ষিণমুখী। পৃথিবীতে একমাত্র এই মন্দিরেই শিবলিঙ্গের ভষ্ম আরতী হয়ে থাকে। প্রচুর মন্দির নিয়ে গড়ে ওঠা প্রাচীন এই শহর উজ্জয়িনী, যেখানে শিপ্রার তীরে কুম্ভ মেলাও অনুষ্ঠিত হয়।

৪. ওমকারেশ্বর –  মধ্যপ্রদেশে অবস্থিত দ্বিতীয় জ্যোতির্লিঙ্গ হলো এই ওঁমকারেশ্বর মন্দির, যা অবস্থিত ইন্দোর থেকে ৮৪ কি.মি দূরে নর্মদা নদীর মধ্যবর্তী ওঁম আকৃতির একটি দ্বীপে যা থেকেই জায়গাটির নাম হয়েছে ওঁমকারেশ্বর ধাম।

 ৫. কেদারনাথ – এবার চলে আসি উত্তর ভারতের আরো একটি জ্যোতির্লিঙ্গ শ্রী কেদারনাথ ধাম নিয়ে, দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং শিব ভক্তদের কাছে সবচেয়ে আস্থা ও বিশ্বাসের জায়গা হলো এই কেদারনাথ ধাম। যার অবস্থান উত্তরাখন্ডের গাড়োয়াল রিজিয়নের রুদ্রপ্রয়াগ জেলায় প্রায় ১২০০০ ফিট উচ্চতায়।

৬. ভীমাশংকর – এই ভীমাশঙ্কর জ্যোতির্লিঙ্গটি পুণে শহরের কাছেই অবস্থিত। একদম পশ্চিমঘাট পর্বতের কোলে কৃষ্ণা নদীর উপনদী ভীমা নদীর পারে এই জ্যোতির্লিঙ্গটি অবস্থিত। এই ভীমাশঙ্কর এলাকাটি যেহেতু পশ্চিমঘাটের ওপরে অবস্থিত।

৭. বিশ্বনাথ – শিব নগরী বারানসীতে অবস্থিত বাবা বিশ্বনাথের মন্দির। বারানসী কিন্তু পৃথিবীর প্রাচীনতম নগর গুলোর মধ্যে একটি। প্রাচীন মন্দিরটি ইন্দোরের মহারানী অহল্যাবাঈ হোলকার তৈরী করান ।মোঘল সম্রাট ঔরঙ্গজেবের আমলে এই মন্দিরের ধ্বংসসাধন করা হয়েছিলো যার পাশেই গড়ে তোলা হয় জ্ঞানবাপী মসজিদ। বর্তমানে এখানে বাবা বিশ্বনাথ করিডর নির্মাণ করা হয়েছে যাতে, খুব সহজে গঙ্গার ঘাট থেকে মন্দিরের ভেতরে প্রবেশ করা যাচ্ছে।

৮. বৈদ্যনাথ- পশ্চিমবঙ্গের  থেকে সবচেয়ে কাছের জ্যোতির্লিঙ্গ হল এই বৈদ্যনাথ ধাম যা বর্তমানে ঝাড়খণ্ডের দেওঘর জেলায় অবস্থিত। সারা বছরই এখানে ভক্তদের ঢল থাকে কিন্তু শ্রাবণ মাসে এখানে পা ফেলার জায়গা একদমই থাকে না।

৯. নাগেশ্বর –  গুজরাটের সৌরাষ্ট এলাকায় অবস্থিত এই নাগেশ্বর জ্যোতির্লিঙ্গ মন্দিরটি। সৌরাষ্টের দ্বারকা নগরীর খুব কাছেই এই নাগেশ্বর ধাম অবস্থিত, দ্বারকা থেকে যার দূরত্ব ২২-২৩ কি.মি । দ্বারকা থেকে বেট দ্বারকা বা ওখা যাওয়ার পথে আপনি এই মন্দিরটি পেয়ে যাবেন।

১০. রামেশ্বরম-  দক্ষিণ ভারতের একদম শেষ প্রান্তে এখানেই অবস্থিত রামেশ্বরম্ মন্দির। রামেশ্বরম্ একদিকে শিবের জ্যোতির্লিঙ্গ এবং তার সাথে সাথে ভারতের চার প্রান্তের চার ধামের মধ্যে একটি। এখানে বিষ্ণু এবং শিব দুজনই পূজিত হোন। মনে করা হয় শ্রীরাম এই মন্দিরের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এই এলাকার সাথে শ্রীলঙ্কার উত্তর ভূখন্ডের এলাকা গুলি খুব একটা দূরে না।

১১. ত্র্যম্বকেশ্বর – মধ্যপ্রদেশের পাশের রাজ্য মহারাষ্ট্র যেই রাজ্যে বিদ্যমান মহাদেবের তিনটি জ্যোতির্লিঙ্গ। তার মধ্যে মহারাষ্ট্রের নাসিকে অবস্থিত ত্র্যম্বকেশ্বর জ্যোতির্লিঙ্গ। নাসিকে গোদাবরী নদীর উৎপত্তিস্থল ব্রহ্মগিরির খুব কাছেই এই মন্দিরটি অবস্থিত। মারাঠা বংশীয় পেশোয়া নানাসাহেব এই মন্দিরটির পূননির্মাণ করেন। ভারতের চার জায়গায় যে কুম্ভ মেলা অনুষ্ঠিত হয় নাসিক তার মধ্যে একটি।

১২.ঘৃষনেশ্বর – মহারাষ্ট্রের ঔরঙ্গাবাদের কাছে অবস্থিত রাজ্যের তৃতীয় জ্যোতির্লিঙ্গ শ্রী ঘৃষনেশ্বর মন্দির। ঔরঙ্গাবাদ শহর থেকে মাত্র ৩০ কি.মি দূরে ইলোরা গুহার খুব কাছেই অবস্থিত এই প্রাচীন মন্দির। মন্দির টি দেখেই মনে হবে খুব প্রাচীন মন্দিরের ওপরে পাঁচটি চূড়া আছে।

Related Articles