Truth Of Bengal: জল্পনা চলছিল বেশ কিছুদিন ধরেই, ১ নভেম্বর থেকে বাংলায় শুরু হতে পারে ভোটার তালিকা সংশোধনের বিশেষ কর্মসূচি ‘স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশন’ (Special Intensive Revision) বা সংক্ষেপে SIR (এসআইআর)। এই প্রক্রিয়া ঘিরে রাজ্যের প্রশাসনিক মহল ও রাজনৈতিক অঙ্গনে ইতিমধ্যেই তৎপরতা শুরু হয়েছে।
এরই মধ্যে সোমবার বিকেল চারটে পনেরো দিল্লির দফতরে সাংবাদিক বৈঠক ডেকেছে জাতীয় নির্বাচন কমিশন (ECI)। কমিশন সূত্রে খবর, ওই বৈঠকেই ‘এসআইআর’-এর দিনক্ষণ ঘোষণা হতে পারে। যদিও সরকারি ভাবে কমিশনের পক্ষ থেকে এখনও কিছু জানানো হয়নি। সোমবারের সাংবাদিক বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমার সহ অন্যান্য শীর্ষ আধিকারিকরা।
আগামী বছর দেশের পাঁচ রাজ্যে — পশ্চিমবঙ্গ, তামিলনাড়ু, কেরালা, অসম ও পুদুচেরিতে বিধানসভা নির্বাচন। তাই এই রাজ্যগুলিতে ভোটার তালিকা হালনাগাদ ও সংশোধন প্রক্রিয়া শুরু করতে চাইছে নির্বাচন কমিশন। ইতিমধ্যেই বাংলায় বুথ লেভেল অফিসার (BLO)–দের প্রশিক্ষণ পর্ব শুরু হয়ে গিয়েছে। প্রাথমিক ভাবে প্রায় ১০–১৫টি রাজ্যে একযোগে এই প্রক্রিয়া চালু করা হবে বলে জানা গিয়েছে।
অন্যদিকে, মহারাষ্ট্র কমিশনের কাছে আবেদন জানিয়েছে যে রাজ্যের নির্ধারিত স্থানীয় ভোটগুলি শেষ হওয়ার পরই এসআইআর প্রক্রিয়া শুরু হোক। কমিশন সেই আর্জিতে সাড়া দেয় কি না, তা নিয়েই এখন নজর সংশ্লিষ্ট মহলের।
বিহার থেকে শিক্ষা নিয়ে এবার বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে ভোটার তালিকার ‘ম্যাপিং’-এ — অর্থাৎ ২০০২ সালের ভোটার তালিকার সঙ্গে বর্তমান তালিকার নাম মেলানো হচ্ছে। বাংলার প্রায় সব জেলায় এই কাজ শেষ হলেও সাম্প্রতিক প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে দার্জিলিং ও জলপাইগুড়িতে কাজ কিছুটা পিছিয়েছে। এই দুই জেলা বাদে রাজ্যে গড়ে প্রায় ৫২ শতাংশ ভোটারের নাম মিলে গিয়েছে বলে কমিশন সূত্রে জানা গেছে।
বিহারে এসআইআর প্রক্রিয়ার সময় নাগরিকত্ব প্রমাণের জন্য ১১টি নথির মধ্যে যেকোনও একটি জমা দিতে বলা হয়েছিল। এবার বাংলা ও অন্যান্য রাজ্যে কোন নথিগুলি গ্রহণযোগ্য হবে, তা নিয়েও কৌতূহল রয়েছে।
কমিশন সূত্রে খবর, সোমবার দিন ঘোষণা হলে মঙ্গলবারই রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক (CEO) সর্বদলীয় বৈঠক ডাকতে পারেন। পাশাপাশি জেলা নির্বাচনী আধিকারিক (DEO) এবং ইলেক্টোরাল রোল অফিসাররা (ERO) স্থানীয় স্তরে বিধানসভা কেন্দ্রভিত্তিক সর্বদলীয় বৈঠক করবেন।
বিরোধীদের অভিযোগ, এই এসআইআর প্রক্রিয়ায় বহু বৈধ ভোটারের নাম বাদ দেওয়া হচ্ছে। কমিশন অবশ্য অভিযোগটি অস্বীকার করেছে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়–সহ জোড়াফুল শিবিরের শীর্ষ নেতৃত্ব এই প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই মামলা গিয়েছে সুপ্রিম কোর্টে, যেখানে বিচারপতি সূর্য কান্ত ও জয়মাল্য বাগচির ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়েছে — অনিয়ম প্রমাণিত হলে পুরো প্রক্রিয়া বাতিল হবে।
অন্যদিকে, নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রত্যেক ভোটারের ছবি–সহ এনুমারেশন ফর্মের সফট কপি দিল্লি থেকে সংশ্লিষ্ট ইলেক্টোরাল রোল অফিসারদের (ERO) পাঠানো হবে। স্থানীয় স্তরে সেই ফর্মের দু’টি করে প্রিন্ট আউট নেবেন জেলা প্রশাসক।
১ বা ২ নভেম্বর থেকেই বুথ লেভেল অফিসাররা (BLO) ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে এই ফর্ম পৌঁছে দেবেন। বর্তমান ভোটার তালিকায় নাম থাকা প্রত্যেকেই এই ফর্ম পাবেন। সেখানে ভোটারের এপিক নম্বর, নাম, ঠিকানা, জন্মতারিখ, ছবি–সহ প্রায় ৯০ শতাংশ তথ্য আগেই ছাপা থাকবে।
ভোটারদের দিতে হবে একটি সাম্প্রতিক পাসপোর্ট সাইজ ছবি এবং নির্দিষ্ট অংশ পূরণ করে প্রয়োজনীয় নথি সহ এক কপি ফর্ম জমা দিতে হবে বিএলও–র হাতে। অন্য কপিটি থাকবে ভোটারের কাছে। প্রয়োজনে ফর্ম পূরণে সাহায্য করবেন স্বেচ্ছাসেবকরা।
এই স্বেচ্ছাসেবকদের মধ্যে থাকবেন স্কুল ও সরকারি দফতরের শিক্ষক-কর্মচারীরা, যাদের নিয়োগ করছে কমিশন নিজেই। সব মিলিয়ে, ভোটার তালিকা সংশোধনের এই ‘এসআইআর’ প্রক্রিয়া রাজ্যে নতুন প্রশাসনিক গতি আনতে চলেছে। তবে রাজনৈতিক মহলে এই প্রক্রিয়া নিয়ে সংশয় ও বিতর্ক এখনও অব্যাহত।






