দানা-হানার মাঝে ওড়িশায় প্রাণ স্পন্দন! ত্রাণ শিবিরে ভূমিষ্ঠ ১৬০০ নবজাতক
Life in Odisha in the middle of the war! 1600 newborns landed in the relief camp

Truth Of Bengal: ডানার ল্যান্ডফল সম্পন্ন হয়েছে বিশেষ ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াই। ভারতের আবহাওয়া বিভাগ (আইএমডি) অনুসারে, বৃহস্পতিবার মধ্যরাতের পরে ঘূর্ণিঝড় ডানা ভিতরকণিকা ন্যাশনাল পার্ক এবং ধামরার মধ্যে স্থলভাগের ফলে উপকূলীয় ওড়িশা প্রবল বাতাস এবং ভারী বৃষ্টিপাতের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিল। ঘূর্ণিঝড় দানা রাত ১২.১০ মিনিট নাগাদ কেন্দ্রপাড়া জেলার ভিতরকণিকা এবং ভদ্রক জেলার ধামরার মধ্যে ল্যান্ডফল করে। আইএমডি ভুবনেশ্বরের আঞ্চলিক পরিচালক মনোরমা মোহান্তি বলেছেন, ল্যান্ডফল প্রক্রিয়া শুক্রবার সকাল পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে, তারপরে ঘূর্ণিঝড়টি দুর্বল হয়ে পড়বে এবং কেওনঝারের পরিবর্তে ধেনকানাল এবং আঙ্গুল জেলার দিকে ফিরে আসবে।
বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ স্থলভাগে ঢুকতে শুরু করেছিল ঘূর্ণিঝড়। সারা রাত ধরে সেই প্রক্রিয়া চলে। শুক্রবার ভোরে স্থলভাগ অতিক্রম করেছে ঘূর্ণিঝড়ের লেজ অর্থাৎ শেষ অংশ। ল্যান্ডফল চলাকালীন ওড়িশা এবং পশ্চিমবঙ্গের উপকূলে ঝড়ের সর্বোচ্চ গতি ছিল ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার। তবে সকালে ল্যান্ডফল শেষ হওয়ার পর কিছুটা হলেও গতি কমেছে। শুক্রবার সকালে উপকূল এলাকায় ঘণ্টায় ৯০ থেকে ১০০ কিলোমিটার বেগে ঝড় বয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া দফতর। শক্তি হারিয়ে শুক্রবার সকালেই সাধারণ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে ডানা। বিকেলের মধ্যে আরও কিছুটা শক্তিক্ষয় করে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে ডেনা।
মধ্যরাতে ওড়িশার ভিতরকণিকা এবং ধামরার মধ্যে আছড়ে পড়ার পরে প্রায় আট ঘণ্টা দাপট চালায় প্রবল ঘূর্ণিঝড় ডানা। তার জেরে ওড়িশার কেন্দ্রপাড়া, ভদ্রক এবং জগৎসিংপুর জেলায় প্রবল বৃষ্টি হয়েছে। উঠেছে ঝোড়ো হাওয়া। পশ্চিমবঙ্গের উপকূলবর্তী দুই জেলায় (পূর্ব মেদিনীপুর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনা) বেশি প্রভাব পড়লেও আপাতত বড় কোনও ক্ষয়ক্ষতির খবর মেলেনি।
ঘূর্ণীঝড়ের ল্যান্ডফলের কারণে প্রায় প্রতিবছরই সতর্ক থাকতে হয় ওড়িশাকে। আয়লা, আমফান, ইয়াসের সময় ওড়িশার গদিতে ছিলেন নবীন পট্টনায়েক। প্রতিটি ক্ষেত্রেই তিনি দক্ষতার সঙ্গে দুর্যোগ সামলে নতুন করে ওড়িশাকে গড়ে তুলেছেন। কিন্তু এবার পালা বদলের পর ওড়িশার মসনদে বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী মোহন মাঝি। তিনি এবার নবীনের ব্যাটন হাতে তুলে নিয়ে দক্ষতার সঙ্গেই সামলে দিয়েছেন প্রাকৃতিক দুর্যোগ। ১৯৯৯ সালে সুপার সাইক্লোনে অসংখ্য প্রাণহানির পরে যেভাবে ঘূর্ণিঝড়ের দাপট কমানোর জন্য কাজ করেছিলেন নবীন, তাঁর উত্তরসূরিও সেই ট্র্যাক রেকর্ড বজায় রাখলেন। ওড়িশা সরকারের তরফে জানানো হয়েছে, ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার বেগে ওড়িশায় ঘূর্ণিঝড় ডানা তাণ্ডব চালালেও কোনও প্রাণহানির খবর মেলেনি। তবে বিভিন্ন জায়গায় গাছপালা ভেঙে পড়ার খবর এসেছে।
ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী মোহন চরণ মাঝি বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ উভয়েই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব মোকাবেলায় রাজ্যের প্রস্তুতি সম্পর্কে অনুসন্ধান করেছেন। মাঝি সেই সঙ্গে বলেন, প্রায় ৫.৮৪ লক্ষ মানুষকে উপকূলীয় অঞ্চলের উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ, নিচু অঞ্চল থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। ওড়িশা সরকার প্রাথমিকভাবে ১০ লক্ষ মানুষকে সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল।
এদিকে ডানার প্রভাবে ওড়িশার জগৎসিংহপুর, কেন্দ্রপাদা, কটক, ভদ্রক, জাজপুর, বালাসোর এবং ময়ুরভঞ্জ জেলাগুলিতে বিক্ষিপ্ত ভারী থেকে খুব ভারী বৃষ্টিপাত (৭ থেকে ২০ সেমি) হয়েছে। বিচ্ছিন্ন কিছু জায়গায় অত্যন্ত ভারী বৃষ্টিপাত (২০ সেন্টিমিটারের বেশি) হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় ডানার কারণে শুক্রবার ঝাড়খণ্ডের কিছু অংশে বৃষ্টিপাত হয়েছে। যার মধ্যে পশ্চিম সিংভূম, সেরাকেলা-খারসোয়ান এবং পূর্ব সিংভূম জেলা রয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত থেকে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত হয়েছে এলাকাগুলিতে৷ রাজ্যের অন্যান্য অঞ্চলে মেঘলা অবস্থার সঙ্গে মাঝে মাঝে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে।
ওড়িশা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে ডানায় কারও প্রাণহানি হয়নি। তবে ক্ষতিগ্রস্ত বহু এলাকা।
এদিকে ওড়িশার ঘূর্ণিঝড়ের জন্য কটকে যে আশ্রয়শিবির খোলা হয়েছিল সেখানে আশ্রিতদের মধ্যে সাই স্বপ্না বেহরা নামে এক প্রসূতিও ছিলেন। বৃহস্পতিবার মাঝরাতে আচমকাই মহিলার প্রসববেদনা শুরু হয়। তখন ডানা সবে ওড়িশার স্থলভাগে আছড়ে পড়েছে। বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী খবর পেয়েই আশ্রয়শিবিরে পৌঁছয়। তৎপরতার সঙ্গে মহিলাকে হাসপাতালে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করে। ডানার তাণ্ডবের মধ্যে সন্তানের জন্ম হওয়ায় স্বপ্না এবং তাঁর স্বামী নবজাতকের নাম রাখেন ডানা।
ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী মোহনচরণ মাঝি জানান, প্রস্তুতির অঙ্গ হিসাবে ওড়িশার উপকূলবর্তী জেলাগুলি থেকে অন্তত ৬ লক্ষ মানুষকে নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। এই ছ’লক্ষ মানুষের মধ্যে ছিলেন ৬০০০ প্রসূতি। তাঁদের তড়িঘড়ি বিভিন্ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পাঠানো হয়। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার মধ্যে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি হওয়া ১৬০০ জন প্রসূতি সন্তানের জন্ম দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী।