দেশ

সাপের বিষ ধ্বংসকারী সিনথেটিক অ্যান্টিবডি তৈরি করলেন ভারতীয় বিজ্ঞানীরা

Indian scientists have developed a synthetic antibody that destroys snake venom

The Truth of Bengal,Mou Basu: আাশার আলো জাগল। প্রতি বছর বাংলা-সহ গোটা দেশে প্রচুর মানুষের মৃত্যু হয় বিষধর সাপের কামড়ে। সময়মতো চিকিৎসা না পাওয়ার পাশাপাশি অন্ধবিশ্বাসের শিকার হয়ে ওঝা, গুনতুকের মতো বুজরুকির কারণে অনেক সময়ই বেঘোরে প্রাণ যায় সাপে কাটা রোগীর। এই পরিস্থিতিতে আশার আলো দেখাচ্ছেন বেঙ্গালুরুর ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স (আইআইএসসি)-র একদল বিজ্ঞানী। কেউটে, গোখরো, শঙ্খচূড়, ব্ল্যাক মাম্বার মতো ভয়ঙ্কর বিষধর সাপের বিষে যে নিউরো টক্সিন থাকে তা নিউট্রালাইজ বা ধ্বংস করতে পারে এমন সিনথেটিক হিউম্যান অ্যান্টিবডি তৈরি করেছেন বিজ্ঞানীরা। এইচআইভি ও কোভিডের অ্যান্টিবডি পরীক্ষার জন্য বিজ্ঞানীরা যে পন্থা নিতেন সেই একই পন্থা অবলম্বন করেন আইআইএসসির সেন্টার ফর ইকোলজিক্যাল সায়েন্সের স্ক্রিপস রিসার্চ ইনস্টিটিউট অ্যান্ড দ্য ইভোলুশনারি ভেনোমিক্স ল্যাবের বিজ্ঞানীরা। সাপের কামড়ের চিকিৎসা করতে অ্যান্টিবডি তৈরি করতে এই প্রথম বার এমন পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন গবেষক সেনজি লক্ষ্মণ আরআর।

গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে ‘Science Translation Medicine’ মেডিক্যাল জার্নালে। সাধারণত, ঘোড়া বা খচ্চরের শরীরে সাপের বিষ ঢুকিয়ে তাদের রক্তের অ্যান্টিবডি সংগ্রহ করে তা দিয়ে সাপের কামড়ের ওষুধ তৈরি হয়। কিন্তু এই পদ্ধতিতে অনেক সমস্যা হয়। কারণ, ঘোড়া, খচ্চরের মতো প্রাণী ব্যাক্টেরিয়া, ভাইরাস আক্রান্ত হয়। এরফলে সাপের বিষ ধ্বংসকারী অ্যান্টিভেনমে অন্য মাইক্রোঅর্গানিজমের অ্যান্টিবডিও তৈরি হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, অ্যান্টিভেনমের ভায়ালের মাত্র ১০%-এ সাপের বিষ ধ্বংসকারী অ্যান্টিবডি থাকে। আইআইএসসির বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন প্রজাতির বিষধর সাপের বিষ থেকে ”three finger toxin (3FTx)” টক্সিন পদার্থ সংগ্রহ করেন। প্রথমে ইস্ট সেল সারফেসের ওপর সাপের বিষের টক্সিনের ওপর মানুষের শরীর থেকে সংগৃহীত কৃত্রিম সিনথেটিক অ্যান্টিবডি প্রয়োগ করা হয়। এই পদ্ধতি আশানুরূপ ভাবে সফল হওয়ায় ইঁদুরের শরীরে প্রয়োগ করা হয়।

প্রথমে ইঁদুরের শরীরে সরাসরি সাপের বিষ প্রয়োগ করা হয়। তাতে ৪ ঘণ্টার মধ্যে মৃত্যু হয় ইঁদুরের। এরপর অন্য ইঁদুরের শরীরে সরাসরি সাপের বিষ প্রয়োগের পরপরই টক্সিন-অ্যান্টিবডির মিশ্রণ দেওয়া হয়। ২৪ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণে রাখা হয় ইঁদুরগুলিকে। তারা একেবারে সুস্থ থাকে। আইআইএসসির বিজ্ঞানীদের দাবি, হিউম্যান অ্যান্টিবডি একেবারে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন। প্রাণরক্ষাকারী সাপের বিষ ধ্বংসকারী অ্যান্টিডোট তৈরি করতে কোনো প্রাণীর ওপর ক্ষতিকর পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়নি। এমনিতেই বাংলায় সাপের কামড় থেকে মানুষকে সচেতন করতে রাজ্য সরকার বিশেষ মোবাইল অ্যাপ “Snakebite Prevention and Rescue” চালু করেছে। গুগল প্লে স্টোর থেকে এই অ্যাপ ডাউনলোড করা যায়। সাপের কামড় খেলে কী করা যায় আর কী করা যায় না সে সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় বিশদ তথ্য মোবাইল অ্যাপে আছে। বাংলা আর ইংরেজি ভাষায় এই অ্যাপ ব্যবহার করা যায়। নিকটবর্তী হাসপাতালে কোথায় অ্যান্টিভেনম পাওয়া যায় সে তথ্যও মিলবে।

Related Articles