বছরে ১.৭কোটি টাকার ম্যাকিনসে কোম্পানির চাকরি কেন ছেড়েছিলেন প্রাক্তন কর্মী : মানসিক স্বাস্থ্য ভেঙে পড়ায় চরম সিদ্ধান্ত
Ex-McKinsey employee shares why he quit the Rs 1.7 crore pa job: 'My mental health was shattered'

The Truth of bengal: চাকরি পাওয়া অনেকের কাছেই বেশ দুষ্কর।কিভাবে প্রতিযোগিতার বাজারে নিজেকে যোগ্য বলে প্রতিষ্ঠিত করা যাবে তার জন্য চলে নানাভাবে চেষ্টা।কিন্তু এমন অনেকে আছেন যাঁরা চাকরি ছেড়ে দিতে বাধ্য হন।সেরকমই এক নজির মিলেছে।যিনি দেড় বছর ধরে ম্যাকিনসে অ্যান্ড কোম্পানির কাজে যুক্ত ছিলেন।তাঁর মাইনেও ছিল যথেষ্ট বেশি।শুনলে হয়তো আপনি অবাক হবেন।বছরে তিনি মাইনে পেতেন ১.৭কোটি। ভেবেছিলেন সেই কোম্পানি থেকে আরও রোজগার করবেন।কিন্তু দেড় বছর পর বিশ্বজোড়া জনপ্রিয় সেই কোম্পানিই তাঁকে ছেড়ে দিতে হয়। কিন্তু কেন এই চরম সিদ্ধান্ত তাঁকে নিতে হয়? চাকরি ছেড়ে দেওয়ার মূল কারণ প্রচণ্ড ওয়ার্কলোড এবং মানসিক যন্ত্রণা। কোম্পানির কাজ করার তাঁকে নানা মানসিক চাপ সহ্য করতে হয়েছে। সেই কারণেই অগত্যা এত বড় চাকরি তিনি ছেড়ে দিয়েছেন। স্মৃতির পাতা উল্টে সেই নামজাদা কোম্পানির শীর্ষ স্তরের কর্মী জানিয়েছেন,এমনও দিন গেছে যেদিন তিনি সকাল সাড়ে ৭টা বা ৮টায় উঠেছেন। আর রাত সাড়ে এগারোটা পর্যন্ত অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। কখনই তিনি ডেস্ক ছেড়ে যেতে পারতেন না। এমনকি খাওয়া পর্যন্ত ভুলে যেতেন। দিনের পর দিন সময়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে না খাওয়ার জন্য ওজনও কমে যায়। তিনি কেবল বাথরুমে যাওয়ার সময়টুকু মনে রাখতে পারতেন।
আর সকালে যখন তিনি বিছানা ছাড়তেন তখন তাঁর পোষ্য কুকুর দুঃখ মুখে তাঁর দিকে চেয়ে থাকতেন।এই কথা বলতে গিয়ে তিনি আরও জানিয়েছেন,২০২১এ তিনি ম্যাকিনসে কোম্পানির সঙ্গে যুক্ত হন।সেইসময় টা তাঁর ক্যারিয়ারে কেবল খারাপ সময় হয়েই থেকে গেছে,কখনই দীর্ঘ সময় হিসেবে নয়। দিনের পর দিন এভাবে চলায় তাঁর কাজটা যে চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠছে তা তিনি বুঝতে পারছিলেন এবং ভেবেছিলেন যদি সেই কাজেই নিজে আটকে থাকতেন তাহলে তা বিতর্ক সৃষ্টি করতো। একটি প্রকাশনা সংস্থাকে তাঁর মতামত ব্যক্ত করতে গিয়ে তিনি আরও জানিয়েছেন ,কিভাবে তিনি ম্যাকিনসেকে এই বিষয়টি তুলে ধরেছিলেন তা নিয়ে দুঃখ হয়। প্রথম থেকেই যে তাঁর জাহির করা দরকার ছিল তাও স্পষ্ট করেছেন দায়িত্ব ছেড়ে আসা এই ব্যক্তিত্ব। কেন এই জীবিকার ডামাডোলের মধ্যে জীবন কাটে তার সঠিক কারণও নিরুপণ করার চেষ্টা করেছেন কর্মত্যাগী মানুষটি।মূলতঃ অ্যাপেনটিসশিপ না থাকায় যে তাঁর কাজের দক্ষতা বাড়ানোর প্রাথমিক সুযোগ মেলেনি সেবিষয়ে আক্ষেপ ঝরে পড়ে তাঁর গলায়। তিনি মনে করেন যদি প্রশিক্ষণ নিয়ে এতবড় কোম্পানির পদে আসতেন তাহলে বোধহয় এতটা সমস্যা হত না। সাধারণতঃ কাজের প্রথম দিনে সবাই শিখে আসেন।কিন্তু তিনি শেখার জন্য কাজ করেছিলেন।যারজন্য হতাশায় ভরা অভিজ্ঞতা তাঁকে বয়ে বেড়াতে হয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ তিনি জানিয়েছেন,তিনি যখন দ্বীপে একাকী কাটাতেন তখন তাঁর ম্যানেজার অন্য কাজে ডুবে থাকতেন। তাঁর মনে হয়েছিল তিনি কিছুই শিখতে পারছেন না। যার ফল স্বরূপ তাঁকে সিনিয়র লেভেলের কর্মীদের কাছ থেকে নানা মন্তব্য শুনতে হয়েছিল। কিভাবে অফিসের নতুন অ্যানালিস্ট বা অ্যাসোসিয়েটসরা সমস্যার মুখোমুখি হন তা এই অভিজ্ঞতা থেকেই স্পষ্ট বলে মনে করেন তিনি।
অ্যাসোসিয়েট পার্টনার্স বা পার্টনার্স মানে কী ?
ম্যাকিনসের কর্মীদের মধ্যে সর্বোত্তম এবং সব থেকে জঘন্য দুধরণের ভাগ ছিল।যাঁরা অ্যানালিস্ট বা অ্যাসোসিয়েটস হিসেবে কাজ করতেন তাঁরা ঠাণ্ডা মাথার ছিলেন।কিন্ত কিছু অ্যাসোসিয়েটস পার্টনার্স এবং পার্টনার্স নিম্নমাণের ছিলেন বলে মন্তব্য করেছেন ম্যাকিনসের এই প্রাক্তন কর্মী। সেইসব উদ্ধত কর্মীরা তাঁর কাছে কোনও ভুল হলেই হেয় করতো বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তিনি।পুরনো দিনের কথা বলতে গিয়ে নামজাদা কোম্পানির ওই প্রাক্তন কর্মী জানিয়েছেন, একদিন তিনি ডেডলাইন না মানতে পারায় অফিসে সবার সামনে তাঁকে বসেরা তিরস্কার করেন।
মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রবল প্রভাব পড়ে
দিনের পর দিন মানসিক চাপ ম্যাকিনসের এই কর্মীর কাছে অসহনীয় হয়ে ওঠে।যার জন্য তাঁকে প্রায়শই কাঁদতে হতো,এমনকি হাই ডোজের উদ্বেগ কমাতে ওষুধও খেতে হয়েছে। যার জন্য কাজ থেকে তাঁকে ব্রেক নিতে হতো। একবছর টানা কাজ করার পর ৩মাসের জন্য ছুটি নিতে তিনি বাধ্য হন।যারজন্য তাঁর মনের অবস্থা খুব খারাপ হয়,খাদের কিনারায় গিয়ে দাঁড়াতে হয় তাঁকে। এমনকি ৩মাসের ছুটি শেষ হওয়ার মাথায় বেশি বেশি তিনি কাঁদতেন এবং উদ্বেগ কমানোর ওষুধ খেতেন। পুণরায় কাজে যোগ দেওয়ার সময় এলে মানসিক টেনশন আর উদ্বেগ চরমে পৌঁছায়।তিনি চাননি আবার পাহাড় প্রমাণ চাপ নিয়ে ম্যাকিনসের কাজে যুক্ত হতে। মানসিক যন্ত্রণা এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে ছুটির সময়েও তাঁর উদ্বেগ পিছু ছাড়েনি। কখনও কখনও তিনি বাড়ির বাইরে চলে যেতেন স্বস্তি পাওয়ার জন্য কিন্তু কাজে এতটাই ডুবে থাকার কথা ভাবতে হত,যারজন্য স্বস্তি মিলত না। সেই কারণে আবার ডগ ওয়াকার ভাড়াও করতেন,তিনি যখন বাড়িতে থাকতেন তখন। কারণ তিনি ভাবতেন তিনি পোষ্যকে পর্যন্ত সামাল দিতে পারবেন না,অফিসের মানসিক চাপের জন্য।
মানসিক চাপের এই যন্ত্রণার দিনগুলোর কথা বলতে গিয়ে তিনি মনের কথা খুলে বলেছেন।বাড়ির ঝক্কি সামলাতে তাঁকে তাঁর মাকেও বাড়িতে আনতে হয়েছিল।এমনকি কুকুরটিকে দেখভালও তিনি করতে পারতেন না।কারণ সেসময় তিনি নিজেকে সামলানোর জন্য নানা কাঁটাছেঁড়া করতেন। এভাবে দিনের পর দিন মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়েই তাঁকে চাকরি ছেড়ে দিতে হয়। কেন এই চরম সিদ্ধান্ত তিনি নেন,তার খুঁটিনাটি বিশ্লেষণও করেছেন,বেনজরির চাপে থাকা এই ম্যাকিনসের কর্মী।তাঁর মতে,আসলে আরও কিছুদিন কাজ করলে তাঁর মানসিক স্বাস্থ্য একেবারে ভেঙে পড়তো।সেই কারণেই তিনি ভাবেন সেখানে কেন জীবনকে আটকে রাখবেন ? কেন অন্ধকার জায়গায় পড়ে থেকে জীবনটাকে নষ্ট করবেন ? সেইসব দিক ভেবেই ম্যাকিনসের সঙ্গে পথ চলায় দাঁড়ি টেনে দিতে বাধ্য হন।পদত্যাগ করে স্বস্তির উপায় খোঁজেন এই পদত্যাগী অ্যাসোসিয়েটস।
প্রাক্তন কর্মী বিজনেস ইনসাইডারকে আরও জানিয়েছেন,তিনি বিভিন্ন জটিল বিষয়ের সমাধান করেছেন।সেসময় তিনি সমস্যার সমাধানের জন্য উপায়ও বের করার চেষ্টা করেন।চাকরি ছেড়ে আসা কর্মী আরও জানিয়েছেন,ম্যাকিনসের আগে তিনি আরও একটি কনসালটিং ফার্মের মতো কোম্পানিতে কাজ করেছেন।যে কোম্পানির অভিজ্ঞতা ম্যাকিনসের তুলনায় ভালো ছিল।দুই কোম্পানির তুলনা করতে গিয়ে তাঁর ব্যাখা-দুটো যেন রাত এবং দিনের মতো। ম্যাকিনসের কাজটি অবশ্যই কঠিনতর ছিল।এই প্রসঙ্গে সংক্ষিপ্ত অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে পদত্যাগী কর্মী জানিয়েছেন,এটি স্বনির্বাচিত কাজের থেকেও আরও বেশি কিছু।
বন্ধুত্বের সম্পর্ক ছিল কোম্পানিতে
তবে কোম্পানিতে কিছু সহকর্মী তাঁর পাশে ছিলেন।যখন তাঁর বস অমানুষিক অত্যাচার করতেন তখন সহকর্মীরা তাঁর পাশে থাকতেন। বিশেষ করে যখন ডেডলাইন বেঁধে দেওয়া হয় তখন সহকর্মীরা সর্বোতভাবে পাশে ছিলেন বলে স্মৃতির পাতা থেকে সেকথা তুলে ধরেন চাকরি জীবনের তিক্ত অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হওয়া এই অ্যাসোসিয়েটস।সেদিন সহকর্মীরা চিয়ার আপ করার জন্য তাঁর সঙ্গে নৈশ পানের আসরে সামিল হন।সবাই মিলে মদ্যপান করে হাল্কা হওয়ার চেষ্টা করেন বলেও জানিয়েছেন প্রাক্তন এই ম্যাকিনসের অ্যাসোসিয়েটস।এখন তিনি অনেক ভালো অবস্থায় রয়েছেন। যে কোম্পানি তাঁর মূল্যবোধ,মর্যাদা রক্ষা করে কাজ দেবে সেই কোম্পানিতে কাজ করতে ইচ্ছুক বলেও জানিয়েছেন ম্যাকিনসের প্রাক্তন কর্মী।