অনৈতিক কার্যকলাপে যোগ, গ্রেফতার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য
Chancellor of private university arrested for involvement in immoral activities

Truth of Bengal: উত্তর-পূর্ব ভারতের মেঘালয় ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির (ইউএসটিএম) আচার্য মাহবুবুল হককে গ্রেফতার করেছে প্রতিবেশী অসম রাজ্যের পুলিশ। দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস সূত্র জানা গিয়েছে, বিজেপি-শাসিত অসম রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মার সাম্প্রতিক আক্রমণের মুখে গ্রেফতার হলেন মাহবুবুল হক। অসমের উচ্চশিক্ষামন্ত্রী রনজ পেগু বলেন, ইউএসটিএমের বিরুদ্ধে অনৈতিক কাজে যুক্ত হওয়ার অভিযোগ আছে। তবে ইউএসটিএমের তরফে এ অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে।
ইউএসটিএম উত্তর-পূর্ব ভারতের একমাত্র বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। মাহবুবুল হক বিশ্ববিদ্যালয়টির মালিকও। ভারতের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের শ্রেষ্ঠ ২০০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় পরপর তিন বছর জায়গা হয় ইউএসটিএমের।
অসমের পাথরকান্দিতে ইউএসটিএম গ্রুপের মালিকানাধীন একটি স্কুল আছে। নাম সেন্ট্রাল পাবলিক স্কুল। মাহবুবুল হককে গ্রেফতারের বিষয়ে আসামের উচ্চশিক্ষামন্ত্রী রনজ পেগু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন, উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় প্রশ্নের উত্তর লেখার ক্ষেত্রে এ স্কুলের ছাত্রদের সহায়তার আশ্বাস দিয়েছিল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ। সে লক্ষ্যে তারা তৎপরতাও চালায়। বহিরাগত পরিদর্শকেরা এর বিরোধিতা করেন। তখন বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। ফলে পুলিশ হস্তক্ষেপ করতে বাধ্য হয়।
পাথরকান্দিতে এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ ডেভেলপমেন্ট নামের একটি সংগঠন চালান মাহবুবুল হক। এটি ইউএসটিএমের অন্তর্গত। পুলিশ সূত্রকে উদ্ধৃত করে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস জানিয়েছে, কেন্দ্রটিতে যে ২৭৪ জন উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছিলেন, তাঁদের মধ্যে ২১৪ জন এখানে বিশেষ কোচিং নিয়েছিলেন। অভিযোগ হল, তাদের পরীক্ষার সময় প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়া হবে বলে ইউএসটিএম কর্তৃপক্ষ আশ্বাস দিয়েছিল। এ অভিযোগের জেরে মাহবুবুল হককে গ্রেফতার করা হয়। মাহবুবুল হক অসমের বরাক উপত্যকার করিমগঞ্জ জেলার বাসিন্দা।
এদিকে, অসম সরকারের অভিযোগকে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন বলে অভিহিত করেছে ইউএসটিএমের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন সূত্র। তারা সংবাদমাধ্যমকে বলেছে, কয়েক বছর ধরে অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা আচার্য মাহবুবুল হককে সরিয়ে দিয়ে তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়টি বন্ধ করে দেওয়ার চেষ্টা করে আসছেন। গত সপ্তাহে বিশ্বশর্মা ইউএসটিএমকে একটি ‘জালিয়াত’ বিশ্ববিদ্যালয় বলে অভিহিত করেছিলেন। তিনি বলেন, ইউএসটিএম যে সনদ ও ডিগ্রি দেয়, তা ভুয়া। অবশ্য এ অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের তরফে মন্তব্য করা হয়।
এর আগে গত বছরের আগস্টে অসমের গুয়াহাটিতে ‘হড়পা বান’ হয়েছিল। সে সময় বিশ্বশর্মা বলেছিলেন, ইউএসটিএমের কারণেই গুয়াহাটিতে হঠাৎ করে বন্যা হচ্ছে। কারণ, বনাঞ্চল ও পাহাড় কেটে বিশ্ববিদ্যালয়টি বানানো হয়েছে। অসম রাজ্যের বিরুদ্ধে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কথিত এই চক্রান্তের নাম দেওয়া হয়েছিল ‘ফ্লাড জিহাদ’ বা ‘বন্যা জিহাদ’। অসমের মুখ্যমন্ত্রী অভিযোগ করেছিলেন, ইউএসটিএমের কারণে মেঘালয়ের রি-ভই জেলা থেকে জল নেমে গুয়াহাটিকে ভাসিয়ে দিচ্ছে। অবশ্য বিশেষজ্ঞরা পরে এ অভিযোগকে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন বলে অভিহিত করেন।
আচার্য মাহবুবুল হক বিশ্ববিদ্যালয়টি স্থাপন করার পর এটি উত্তর-পূর্ব ভারতে সর্ববৃহৎ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হয়। মূলত বাঙালি মুসলমানরাই এ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে শুরু করেন। তবে অনেক হিন্দু ছাত্র-ছাত্রীও আছেন। বিশ্ববিদ্যালয়টি ২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি মেঘালয় রাজ্য সরকার ও কেন্দ্রের বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) কাছ থেকে শিক্ষাক্ষেত্রে ভাল কাজের জন্য ইতিমধ্যে সংশাপত্র পেয়েছে। পাশাপাশি অসম সরকারের লাগাতার অভিযোগের মুখে মেঘালয় সরকার ও ইউএসটিএম কর্তৃপক্ষ স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, কোনও অন্যায় কাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে কখনও করা হয়নি। মেঘালয়ের মুখ্য সচিব ডোনাল্ড পি ওয়াহলাং নিশ্চিত করেছেন, ইউএসটিএম কেন্দ্রীয় সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন ইউজিসি দ্বারা স্বীকৃত। মেঘালয় প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি রেগুলেটরি বোর্ডের নির্দেশিকার অনুসারী এ বিশ্ববিদ্যালয়। মুখ্য সচিব একসময় বলেছিলেন, ইউএসটিএমের দেওয়া সব ডিগ্রি ইউজিসির স্বীকৃত। তাই জাল ডিগ্রি দেওয়ার অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। বিশ্ববিদ্যালয়টি ২০২১ সালে ইউজিসির ন্যাশনাল অ্যাসেসমেন্ট অ্যান্ড অ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিল (ন্যাক) থেকে সর্বোচ্চ ‘এ গ্রেড’ পায়।
বিশ্ববিদ্যালয়টি এখন আসামের মুখ্যমন্ত্রীর প্রবল রোষের শিকার হয়ে প্রায় বন্ধের মুখে। আর সবশেষে গ্রেফতার হলেন আচার্য মাহবুবুল হক। এর কারণ ব্যাখ্যা করে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস লিখেছে, গত আগস্টে ‘বন্যা জিহাদের’ অভিযোগ সামনে আনার এক সপ্তাহ পর বিশ্বশর্মা আবার বিশ্ববিদ্যালয়টিকে আক্রমণ করেন। বিশ্ববিদ্যালয়টির ওপরে তিনটি গম্বুজ আছে। এ কারণে বিশ্বশর্মা ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে নানা মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়া অত্যন্ত অস্বস্তিকর। বিশ্বশর্মাকে ‘জিহাদ’ শব্দটির ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল। তখন তিনি বলেছিলেন, ইউএসটিএম যা করছে, তা হলো বড় রকমের জিহাদ। তিনি খুব নরম ভাষায় এটিকে জিহাদ বলছেন। এটি শিক্ষাব্যবস্থাকে ধ্বংস করছে। যার দ্বারা সভ্যতা ও সংস্কৃতিকে আক্রান্ত হয়, তা হলো জিহাদ।
‘মুসলিম মিরর’ নামে একটি পত্রিকার খবরে বলা হয়েছে, অসমের মুখ্যমন্ত্রীর স্ত্রী ভবিষ্যতে একটি বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলার পরিকল্পনা করছেন। তিনি বর্তমানে বেসরকারি স্কুল চালাচ্ছেন। এ প্রেক্ষাপটে বিশ্বশর্মার কোনও একটি স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্যকে আক্রমণের বিষয়টিকে দেখতে হবে।