রান্নাঘর

কন্টিনেন্টাল ‘কাহানি’র রহস্য উন্মোচন 

Mocambo Restaurant

The Truth of Bengal: বিদ্যার বদ্যার ‘পসন্দ’, আমাদের পছন্দ মোকাম্বোর রমণীয় পরিবেশে কাঁকড়া কিংবা চিংড়ি। বিদ্যা বাগচি কলকাতায় তাঁর হারিয়ে যাওয়া স্বামীকে খুঁজতে এলে এই রেস্তোরাঁয় খেতে আসেন। আবার পার্ক স্ট্রিটের এই রেস্তোরাঁয় কোনও সমাজকর্মী তার ট্যাক্সিচালককে নিয়ে খেতে ঢুকতে চাইলে এবং রেস্তোরাঁর নিরাপত্তারক্ষী তাতে আপত্তি করলে, দেশ জুড়ে তীব্র আলোড়ন তৈরি হয়। মোকাম্বো, সবসময় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা পার্ক স্ট্রিটের এই রেস্তোরাঁ তাই ভোজনরসিকদের কাছে অবশ্য গন্তব্য তো বটেই। মোকাম্বোর খ্যাতি মূলত ‘কন্টিনেন্টাল ডিশ’-এর জন্য। একটু আলো আঁধারি পরিবেশ, মানে যেমন পরিবেশে ‘কাহানি’ সিনেমায় বিদ্যা বালান, থুড়ি বিদ্যা বাগচি একজন অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান মহিলার সঙ্গে খেতে এসেছিলেন বলে আমরা পর্দায় দেখেছিলাম, সেটাই মোকাম্বোর বিশেষত্ব। যেহেতু খাবার এবং পানীয়, দুটোই মোকাম্বোর মেনু তালিকায় রয়েছে, তাই যাঁরা পার্ক স্ট্রিটের এই রেস্তোরাঁকে পছন্দ করেন, তাঁরা আসলে এই ‘অ্যামবিয়েন্স’ বা পরিবেশের গুণগ্রাহী। এই পরিবেশ যদি মোকাম্বোর মুখবন্ধ হয়, তাহলে সূচিপত্র জুড়ে রয়েছে একের পর এক ‘কন্টিনেন্টাল ডিশ’-এর নাম।

চিকেন আলাকিয়েভ। মাংস আর মাখনে মাখামাখি মোকাম্বোর এই পদ যদি ‘আইকনিক’ মর্যাদা পেয়ে থাকে এবং শুধু কলকাতার খাদ্যরসিকরা নন, দেশের অধিকাংশ ‘ফুড ব্লগার’-এর প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে থাকেন, তাহলে তার কারণ অবশ্যই বছরের পর বছর ধরে অবিস্মরণীয় স্বাদ বজায় রেখে যাওয়া। বাইরে একটা মুচমুচে আস্তরণ, ছুরি দিয়ে কাটলেই ঝরে পড়ছে মাখন, চিকেন আলাকিয়েভকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছে। সবার পছন্দ এবং মোকাম্বোতে গেলে খেতে হবেই। কিন্তু তার মানেই আপনি অন্য পদ চাখবেন না, এমনটা হতে পারে না। মোকাম্বোতে কাঁকড়ার চমৎকার সব পদ পাওয়া যায়। সঙ্গে যিনি আছেন, তাঁকে ব্যস্ত রাখতে চাইলে আপনি নিশ্চিন্তে ‘ডেভিলস ক্র্যাম্প’ অর্ডার দিয়ে নিজের টুকিটাকি কাজ সেরে নিতে পারেন। তিনি যতক্ষণে কাঁকড়ার রস আস্বাদন শেষ করবেন, আপনিও ততক্ষণে পরের ‘ডিশ’ বেছে নেবেন। সেটা প্রন ককটেল হতে পারে, ভেটকির যে-কোনও পদ হতে পারে। আমার অবশ্য ব্যক্তিগতভাবে পছন্দ ভেটকি বেলামুনুরি। নরম তুলতুলে ভেটকি মেওনিজ আর সবজিতে মাখামাখি হয়ে যখন আপনার সামনে আসে, তখন তা চেখে না দেখাটাই গর্হিত অপরাধ।

মাছ বলুন কিংবা মাংস, আমিষ প্রিয়দের জন্য মোকাম্বোর কোনও জবাব নেই। কিন্তু তাই বলে এটা ভাবার কোনও কারণ নেই নিরামিষাশীদের পছন্দের তালিকায় পার্ক স্ট্রিটের এই বহু আলোচিত রেস্তোরাঁ নেই। কারণ ঠিক যেভাবে মোকামো চিকেন আলাকিয়েভ পরিবেশন করে, তেমনভাবেই পাতে এনে দেয় ভেজিটেবিল আলাকিয়েভও, যেখানেও মাখনের সঙ্গে হরেকরকম সবজির সমাহার রসনাকে তৃপ্ত করবে। ‘রিসোতো’ বা পাস্তার মতো বিভিন্ন ‘কন্টিনেন্টাল ডিশ’ও পাওয়া যায়। নিরামিষাশীদের উপযোগী করে। আবার যদি ব্যক্তিগত পছন্দের কথা বলি, কলকাতা শহরের অনেক রেস্তোরাঁর মধ্যে মোকাম্বোর ‘রিসোতো’ আমার সবথেকে পছন্দের। আগেই বলেছি মোকাম্বোর খ্যাতি ‘কন্টিনেন্টাল ডিশ’-এর জন্য। যেহেতু আমি নিজে মাছ বেশি পছন্দ করি, তাই মাছের বিভিন্ন পদের জন্য মোকাম্বোতে বারবার ফিরে ফিরে যেতে হয়। ভেটকি, চিংড়ি অথবা অন্য যে-কোনও মাছের ‘কন্টিনেন্টাল ডিশ’-এর জন্য মোকাম্বোর জুড়ি মেলা ভার। কিন্তু একই সঙ্গে এটাও বলতে হবে চিকেন বা মটনের বিভিন্ন পদেও মোকাম্বো অন্যদের ভূমিশয্যা দেওয়াতে পারে। মানে ‘দঙ্গল’ সিনেমায় আমির খান যেভাবে ধরে ধরে আছাড় মারতে শেখাতেন। অন্যদের কিস্তিমাত করতে মোকাম্বোর তূণে সবচেয়ে বড় অস্ত্র দিনের পর দিন একই খাদ্যগুণ বজায় রেখে যাওয়া। এবং সেটাই যাবতীয় বিতর্ক বা বয়কটের পরেও আবার মোকাম্বোকে স্বমহিমায় ফিরিয়ে এনেছে।

Related Articles