এক সময় লালবাজারে হাজিরার জন্য রবীন্দ্রনাথকে সমন পাঠিয়েছিল ব্রিটিশ পুলিশ,কেন পাঠিয়ে ছিল? জানুন সেই অজানা কথা
Rabindranath was summoned by the British police to appear in Lalbazar

The Truth of Bengal: এখন প্রায়সই বিরোধীরা কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় এজেন্সি দিয়ে রাজনৈতিক নেতা ও সমর্থক, পরিচিত ব্যক্তিদের হেনস্তা করার অভিযোগ করে। জানেন কি, এমন ঘটনা ঘটেছিল সেই ব্রিটিশ আমলেও। লালবাজারে হাজিরা দেওয়ার জন্য রীতিমতো রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে সমন পাঠিয়েছিল ব্রিটিশ পুলিশ। তাও আবার নিজেরই হারানো পেন শনাক্ত করতে। হারানো পেনের মূল্য যাই হোক না কেন সেই ফাউন্টেন পেন ছিল কবিগুরুর কাছে অমূল্য। কারণ এই সেই বিশেষ পেন যা দিয়েই গীতাঞ্জলি-সহ বিভিন্ন অসাধারণ লেখা লিখেছেন তিনি। এক সময় বাড়ি থেকেই পেনটি হাপিশ হয়ে যায়। প্রাণাধিক প্রিয় পেন না পেয়ে পুলিশের দ্বারস্থ হন রবীন্দ্রনাথ। কবির হারানো ধন পেনটি খুঁজে পায় ব্রিটিশ পুলিশ। কিন্তু তারা জানায় আদালতের নির্দেশ ছাড়া পেনটি তারা রবীন্দ্রনাথের হাতে তুলে দিতে পারবে না। এক্ষেত্রে অভিযোগকারী রবীন্দ্রনাথকেই লালবাজারে এসে পেনটি নিজের বলে দাবি করতে হবে।
১৯১৮ সালে এই মর্মে এমন অদ্ভুত সমন পাঠানো হয় রবীন্দ্রনাথকে। কবিগুরুকে এমন অদ্ভুত সমন পাঠানোর কথা কানে যায় ব্রিটিশ পুলিশের আইনজীবী তথা কবির অনুরাগী সৌরিন্দ্রমোহন মুখোপাধ্যায়ের কানে। সৌরিন্দ্রমোহনের আরেক পরিচয়, তাঁর কন্যা সুচিত্রা মিত্র। কবিকে বিড়ম্বনার হাত থেকে রক্ষা করতে সৌরিন্দ্রমোহন নিজেই হস্তক্ষেপ করেন। কবিকে যাতে লালবাজারে যেতে না হয় তার জন্য তিনি নিজেই যান থার্ড প্রেসিডেন্সি ম্যাজিসট্রেট আনিসুজ্জামান খানের চেম্বারে। কবিকে পাঠানো পুলিশের সমনে সই ছিল ম্যাজিসট্রেট আনিসুজ্জামানেরই। গোটা ঘটনাটি কলকাতা পুলিশের ফেসবুক পোস্টে একসময় খুব সুন্দর করে বর্ণনা করা হয়েছিল। কবির পেন হারানোর ঘটনা জেনে একদিন তাঁর কাছে জোড়াসাঁকো থানার আধিকারিক হাজির হন। তিনি জানান চোরের গোপন ডেরা থেকে পেনটি উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। পেনটি রবীন্দ্রনাথকে দেখানও পুলিশ আধিকারিক। তিনি পেন সম্বন্ধে কবির বলা সব কথা নিজের নোটবুকে লিখেও নেন।
কবি তাঁকে জিজ্ঞেস করেন কীভাবে তিনি নিজের পেন ফেরত পাবেন? জবাবে ওই পুলিশ আধিকারিক জানান, আইন অনুযায়ী বিচারক বা ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশ অনুসারে পেনটি পেনের মালিক কবির হাতে তুলে দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে তাঁর হাত পা বাঁধা। এর কয়েক দিন পর জোড়াসাঁকো থানার এক কর্মী এসে কবির হাতে পুলিশের সমন ধরিয়ে দিয়ে যান। সমনে নির্দিষ্ট দিনে সাক্ষী হিসাবে লালবাজারের আদালতে হাজির থাকতে বলা হয়। সমনে থার্ড প্রেসিডেন্সি ম্যাজিসট্রেট আনিসুজ্জামান খানের সই ও আদালতের স্ট্যাম্প ছিল। এরপরই সৌরিন্দ্রমোহন মুখোপাধ্যায় নিজে আনিসুজ্জামানের চেম্বারে গিয়ে গোটা ঘটনাটি খুলে বলেন। থার্ড প্রেসিডেন্সি ম্যাজিসট্রেট আনিসুজ্জামান খান সঙ্গে সঙ্গে কোর্ট ইনস্পেক্টর শরৎকুমার ঘোষকে নিজের চেম্বারে তলব করেন। কোর্ট ইনস্পেক্টরকে থার্ড প্রেসিডেন্সি ম্যাজিসট্রেট আনিসুজ্জামান খান বলেন, ‘আইন মানুষের জন্য হয়েছে কিন্তু রবীন্দ্রনাথ লাখের মধ্যে একজন। তাঁর জন্য আইন একটু বাঁকালে এমন কিছু মহাভারত অশুদ্ধ হবে না।’ এরপর স্বাভাবিক ভাবেই কবিকে আর লালবাজারে হাজির হতে হয়নি।





