
Truth of Bengal,বিপ্লব চৌধুরীঃ শচীন দেব বর্মনের কণ্ঠে গাওয়া গান ‘তুমি যে গিয়াছ বকুল বিছানো পথে’– আমাদের সবার খুবই প্রিয় গান। এই গানের কলিতে উল্লেখ আছে বকুল ফুলের। আসুন জানি এই বকুল ফুলের জানা-অজানা কথা। বকুল (বৈজ্ঞানিক নাম: মিনাসপ্স এলেঙ্গি) হচ্ছে মিনাসপ্স প্রজাতির একটি ফুল। এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরের তীরবর্তী এলাকার ভারত, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, মায়ানমার, ইন্দো-চিন, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ডে এই ফুল জন্মায়।
এছাড়া নিউ ক্যালিডোনিয়া (ফ্রান্স), ভানুয়াতু এবং উত্তর অস্ট্রেলিয়াতে এই ফুলের চাষ করা হয়। ফুলের রাজ্যে বকুল ফুল তার মিষ্টি ঘ্রাণের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। আকারে মাত্র ১ সেমি হলেও এর ঘ্রাণ থাকে দীর্ঘ সময় পর্যন্ত। প্রেয়সীর চুলের খোঁপা সাজিয়ে তুলতে কিংবা মিষ্টি সুবাসে চারিদিক মাতিয়ে রাখতে বকুল ফুলের জুড়ি মেলা ভার। শুকনো বকুল ফুলের ঘ্রাণ থাকে দীর্ঘক্ষণ।
তাই কৈশোরের ভালবাসার পৃষ্ঠায় কিংবা হলদে হয়ে যাওয়া পুরনো প্রেমপত্রের ভাঁজে খুঁজলে শুকনো বকুলকে পাওয়া যাবে আজও। বর্ষা ঋতুর এই ফুলের ঘ্রাণ বৃষ্টিস্নাত সকালকে করে তোলে মধুময়। আবার রাতের বেলায় চাঁদের আলোয় বকুলতলা সাদা বকুল ফুলে আলোকিত এবং ফুলের মিষ্টি সুবাসে আচ্ছন্ন হয়ে থাকে। মূলত ছায়ার জন্য বাড়ির উঠোনে কিংবা বাগানের কোণায় রোপণ করা হয় বকুল গাছকে।
এর পাতা ঢেউ খেলানো সবুজের সমারোহে সারা গাছ ভরিয়ে রাখে স্নিগ্ধতায়। বকুল ফুলের নিজস্ব এই সৌন্দর্য ছাড়াও আছে ঔষধি নানা গুণাবলি। যাদের প্রচণ্ড মাথাব্যথার সমস্যা আছে তারা যদি বকুল ফুল শুকিয়ে তার গুঁড়ো নাকে নিঃশ্বাসেসঙ্গে টেনে নেয় তাহলে তাদের মাথাব্যথা থেকে আরাম মেলে। কোথাও কেটে গেলে বকুলের ছাল দিয়ে সেখানে পরিষ্কার করে নিলে ক্ষতস্থান খুব তাড়াতাড়ি ভাল হয়ে ওঠে। বকুল ফুলের রস হৃদযন্ত্রের অসুখ ও লিকোরিয়া নিরাময়ে ব্যবহার করা হয়।
শুকনো বকুল ফুলের গুঁড়ো মাথা ঠাণ্ডা রাখে ও মেধা বাড়াতে সাহায্য করে। এছাড়াও বকুল ফুল ও এই গাছের ছাল কিংবা ফল কঠিন জ্বর, সর্দি-কাশি, আমাশয়, কোষ্ঠকাঠিন্য, দাঁতের গোড়া শক্ত করতে ও দাঁতের মাড়ি থেকে রক্ত পড়া রোধ করা সহ নানাবিধ শারীরিক সমস্যার নিরাময়ে বেশ উপকারী। বকুল ফুলের অদ্ভুত পাগল করা সৌরভ মনকে নাড়া দিয়ে যায়।
আর এর সুবাস শুধু নয়, বকুল ফুলকে নিয়ে গান ও কবিতার শেষ নেই। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখায় ‘ঝরকে ঝরকে ঝরিছে বকুল আঁচল আকাশে হতেছে আকুল’- সেখানেও বকুল ফুলেরই উল্লেখ পাই। আর শান্তিনিকেতনের বকুলবীথির কথা কে না জানে? আম্রকুঞ্জ-সহ বকুলবীথির নীচে শিক্ষার্থীদের পাঠদানের ছবিরসঙ্গে আমরা সবাই পরিচিত।