
The Truth of Bengal: দুই পায়ে লোহার শক্ত শিকল দিয়ে বাঁধা, জরাজীর্ণ মাটির বাড়ি। চারিদিক খোলা এক চালায় এবড়ো খেবড়ো মাটির মেঝেতে এই ভাবে কাটছে জীবন। গত ২২ বছর ধরে এমনই দুর্বিষহ জীবন কাটছে পশ্চিম মেদিনীপুরের দাসপুর থানার সুরতপুরের মুরারী মোহন সাউয়ের। ছেড়ে গিয়েছেন স্ত্রী, মারা গিয়েছে একমাত্র সন্তান। নিজেই অ্যাসিড ঢেলে মুখ ও দেহ বিকৃত করেছেন। এই শীতের রাতে ছেঁড়া এক পাটের থলেতে নিজেকে ঢেকে রেখেছেন। পরনে আর কিছুই নেই। খাবার বলতে দূর থেকে পলিথিনে মুড়ে দু-বেলা দুমুঠো ভাত বা মুড়ি লাঠির সাহায্যে তাঁর কাছে পৌঁছে দেওয়া। সেই টুকু মাটিতে রেখে থলের মধ্যে নিজেকে লুকিয়ে তা খেয়ে ফেলা।
বুকে পাথর চাপা দিয়ে চোখের কোনে জল লুকিয়ে বারো বছর ধরে ছেলেকে এই ভাবে শিকল বন্দি করে রেখেছেন মা-বাবা। এদিকে মা বাবার ও বয়স সত্তরের কোটায়। নিজেদের কখন কী হয়, তাই এমন ছেলের জন্য চিন্তায় কূল পাচ্ছেন না তাঁরা। একটা সময় সব ঠিকঠাক ছিল। ১৭ বছর বয়সে মুরারি বিড়বিড় বকা শুরু করে। তারপর তা বাড়তে থাকে। ডাক্তার দেখালে কিছুদিন ভাল থেকে আবার আগের অবস্থা। মাঝে বিবাহিত জীবন বছর খানেকের। তারপর তাঁকে ছেড়ে বাপের বাড়ি চলে যান স্ত্রী। এরপর মানসিক বিকার আরও বেড়ে যায়।
একদিন ঘরে থাকা অ্যাসিড ঢেলে দেন নিজের শরীরে। মুখ বিকৃত হয়ে যায়। চিকিৎসায় সেই ক্ষত সেরে গেলে তারপর থেকে শিকলে বাঁধা জীবন। কনকনে এই শীতেও শরীরে কোনও পোশাক থাকে না। কম্বল দিলেও গায়ে রাখে না। তবে চটের থলিটি তাঁর বড় প্রিয়। সত্তোরোর্ধ বাবা চাষবাস করে কোনওরকমে সংসার চালান। ছেলে মুরারির জন্য কোথা থেকে কোনো সরকারি সাহায্য পাননি। এখনও পর্যন্ত মুরারির নামে রেশনটুকুও মেলেনি। তাই অসহায় ছেলের জন্য সরকারি সাহায্যের প্রত্যাশায় দিন কাটছে। স্থানীয় পঞ্চায়েত বিষয়টি খতিয়ে দেখে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে।