রাজ্যের খবর

নেই দামি গাড়-স্মার্ট ফোন, চাষের কাজ সামলে সাইকেল চালিয়ে পঞ্চায়েতে আসেন তৃণমূলের প্রধান দীনবন্ধু

No expensive car-smart phone, Trinamool chief Dinbandhu came to panchayat by bicycle after handling farming work.

Truth Of Bengal:  প্রতিদিন সকাল হলেই কোদাল হাতে নেমে পড়েন চাষের জমিতে। বেলা দশটা বাজলেই সাইকেল হাতে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েন তিনি। প্রায় আড়াই কিলোমিটার পথ সাইকেলে প্যাটেল করে পৌঁছান পঞ্চায়েতে। এলাকায় মাটির মানুষ হিসাবেই পরিচিত তিনি। তারকেশ্বরের জয়পুর গ্রামের বাসিন্দা দীনবন্ধু মাটি। যদিও এলাকায় মাস্টার মশাই নামেই সবাই চেনেন তাকে।

রাজনীতিতে প্রবেশ করে শিক্ষকতা ত্যাগ করতে হয়েছে তাকে। তাই বলে মানুষের সেবায় তার কোন বিচ্যুতি ঘটেনি। পঞ্চায়েতের প্রধান হয়েও সাধারণ মানুষের মতনই জীবন যাপন করেন তিনি। পঞ্চায়েতের কাজ সামলে বাড়ি ফেরার পথে মানুষের সঙ্গে জনসম্পর্ক করা যেন তার প্রত্যহ রুটিন। দীনবন্ধু বাবুর বাবা মধুসূদন বাবু ছিলেন প্রান্তিক চাষি। চাষের জমি থেকে যা উপার্জন হতো তাই দিয়ে সন্তানদের পড়াশোনা শিখিয়েছেন। অভাবের সংসারে বড় হয়ে উঠতে থাকেন দীনবন্ধু। মাধ্যমিক পাশ করার পর নিজের পড়াশোনা চালাতে শুরু করেন ছাত্র পড়ানো।

তৎকালীন সময়ে অনেক বেতন দিতেন না, তবে তাতে কিছু মনে করতেন না তিনি। চাইতেন ছাত্ররা আগামী দিনের ভবিষ্যৎ তারা যেন সমাজের মুখ উজ্জ্বল করে। উচ্চমাধ্যমিক পাশ করার পর কলেজে পড়ার সময় ধীরে ধীরে পা বাড়াতে থাকেন ছাত্র রাজনীতিতে। বি কম পাসের পর অ্যাকাউন্টেন্সে অনার্স করে পড়াশোনায় ইতি টানতে হয় তাকে। প্রথমে কংগ্রেস ও পরে তৃণমূল কংগ্রেসের যোগ দেন তিনি। প্রয়াত কংগ্রেসের প্রাক্তন এম এল এ বলাইলাল শেঠের হাত ধরেই তার রাজনীতিতে আসা। পরবর্তীতে কংগ্রেসের সেবা দলের তারকেশ্বর ব্লক সদস্য হন।

রাজীব গান্ধীর মৃত্যুর পর আন্দোলন করতে গিয়ে দশ দিন জেল খাটতে হয়েছিল তাকে। পুলিশের খাতায় তার নামের পাশে লাল কালির দাগ পড়ায় আর চাকরির কোন সুযোগ হয়নি। ১৯৯৮ সালে রাইটার্স বিল্ডিং অভিযানে তৎকালীন কংগ্রেসের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপর লাঠিচার্জ করে পুলিশ। পরবর্তীতে জাতীয় কংগ্রেস ভেঙে নতুন দল গঠন করেন মমতা। তখন থেকেই তিনি হয়ে ওঠেন তৃণমূল কংগ্রেসের একনিষ্ঠ কর্মী।

এরপর তৃণমূল জয়পুরের বুথ সভাপতি দায়িত্ব সামলানোর পর অঞ্চল কমিটির দায়িত্ব দেওয়া হয় তাকে। কৃষাণ ক্ষেতমজুরের ব্লক কমিটির সদস্য হন তিনি। ২০২৩ এর পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের টিকিটে জয়লাভ করার পর বর্তমানে বালিগড়ি ১ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধানের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। বাড়িতে রয়েছে তার দুই মেয়ে ও স্ত্রী।

প্রধান বলেন, আমাদের পরিবারের আর্থিক অবস্থা খুব একটা ভালো ছিল না। বাবা চাষবাস করতে, বর্তমানে আমি নিজেও চাষ করি। অনেক গরিব মানুষ আছে তারা অনেক সমস্যার মধ্যে পড়েন আমার দেখে তাদেরকে কষ্ট হয়। সেজন্যই আমি যতটা পারি মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করি। কিভাবে মানুষের পাশে থাকতে হয় তা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কে দেখেই শিখেছি। যখন তার মাথায় ফেটে গিয়েছিল তখন ফুল নিয়ে তাকে দেখতে গিয়েছিলাম তার বাড়িতে। দিদি জিজ্ঞেস করেছিলেন ট্রেনের টিকিট কেটে এসেছিস ? বলেছিলাম না! সেই কথা শুনে ১৭০ টাকা আমাদের হাতে তুলে দিয়েছিলেন। তখনই মনে মনে ঠিক করেছিলাম তিনি যদি মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারেন আমি কেন পারব না। তাকে দেখেই মানুষের পাশে দাঁড়ানোর ইচ্ছা জাগে আমার তাই যতটুকু পারি মানুষের সেবা করি।

পঞ্চায়েতের দায়িত্ব সামলে বাড়ি ফেরার পথে মুখ্যমন্ত্রীর দেওয়া দায়িত্বও পালন করেন তিনি। সাইকেলে চড়ে জনসংযোগ করেন এলাকার মানুষের সাথে। কারোর পড়াশোনার বই না থাকলে বা বিয়ে না হলে আর্থিক দিক দিয়েও সাহায্য করেন তাদের ।এভাবেই গ্রামের মানুষের কাছে দীনবন্ধু বাবু মাস্টার মশাই থেকে হয়ে উঠেছেন মাটির মানুষ।

Related Articles