
The Truth of Bengal: অনেক তো গেলেন সমুদ্র পাহাড়, এবার নয় চলুন একটু ধর্মের স্থান থেকে ঘুরে মন শান্তি করে আসি। ধর্মের প্রতি অনুরাগ অধিকাংশরই আছে আর পর্যটনে আকর্ষণ নেই এমন মানুষ মেলা ভার। আর এই দুইয়ের সংমিশ্রন হলে কেমনটা হয়? বীরভূমের ময়ূরেশ্বর থানার সেই বীরচন্দ্রপুর গ্রামের কথা সকলেরই আশা করি চেনা। এই গ্রাম একদা রাজনৈতিক হানাহানিতে তেতে ছিল। যা এখন উঠে আসছে জেলা পর্যটনের মানচিত্রে। রামপুরহাট সাঁইথিয়া সড়কের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত এই গ্রামটি বছর কুড়ি আগে পর্যন্ত তপ্ত থাকত রাজনৈতিক কোন্দলে। এই গ্রামেই জন্মেছিলেন চৈতন্যদেবের সঙ্গী নিত্যানন্দ মহাপ্রভু।
১৩৯৫ সালে মাঘ মাসের শুক্লা ত্রয়োদশীতে মুকুন্দ বন্দ্যোপাধ্যায় ও পদ্মাবতীর পুত্র নিত্যানন্দের শুভ আবির্ভাব ঘটে। সেই কারণে এই জায়গার নাম গর্ভাবাস। নিত্যানন্দের বসতবাড়ি ‘নিতাই বাড়ি’ নামে ভক্তজনের কাছে বেশি পরিচিতি। নিত্যানন্দের জন্ম হয়েছিল যে ঘরে, সেটি ‘সুতিকা গৃহ’ নামে বৈষ্ণব সমাজে সমাদৃত। পাশে তাঁর বসত ভিটের সংরক্ষণ করে বৈষ্ণব সমাজ। যেখানে নিত্যানন্দের উত্তরাধিকারীরা থেকেছেন বংশপরম্পরায়। নিত্যানন্দের বসতে বৈষ্ণব সমাজ একটি নয়নাভিরাম মন্দির তৈরি করার পর ধর্মপ্রাণ তো বটেই, ভ্রমণপ্রিয় বাঙালির নজর পড়েছে এখানে। যা এতদিন অখ্যাতই ছিল। নিত্যানন্দের বসত ভিটের মাঝে রয়েছে ছোট পুকুর , যা ‘নিতাই কুণ্ড’ নামে পরিচিত। স্থানটিকে সারা পৃথিবীর বৈষ্ণবরা একচক্রা ধাম বলে স্বীকৃতি দেন। সেই স্থানে ন’টি চূড়া বিশিষ্ট মন্দিরটির উচ্চতা প্রায় ১৬০ ফুট । কর্ণাটক ও ওড়িশার স্থাপত্য শিল্পের আদলে মন্দিরের সংস্কার করা হয়েছে ।
মন্দিরের শীর্ষে বিশাল সুদর্শন চক্র। ওড়িশার ৪১ জন পাথর খোদাই শিল্পী বীরচন্দ্রপুরে এই মন্দিরের ভাস্কর্য তৈরির কাজ করেছেন। পাশাপাশি ওই মন্দিরের গর্ভ গৃহে রাজস্থানের মার্বেল শিল্পীরা শ্বেত পাথরের নানা ভাস্কর্য নির্মাণ করেছেন। মন্দির প্রাঙ্গণে আছে সংগ্রহশালা। যেখানে চৈতন্যদেবের হস্তাক্ষর দেখা যায়। চৈতন্যদেব ও নিত্যানন্দই গৌর-নিতাই নামে বৈষ্ণবদের আরাধ্য।পাণ্ডুলিপি, পুঁথি সহ বৈষ্ণব সাহিত্যের যাবতীয় উপকরণ সংগৃহীত আছে এই সংগ্রহশালায়। হরেক রকম ফুলের শোভা, গোশালা, সংস্কৃতি অঙ্গন ইত্যাদিও রয়েছে এখানে । এখন এই তীর্থে পর্যটন নিয়ে প্রশাসনিক স্তরেও ভাবনা শুরু হয়েছে। ভাবছেন কি ভাবে যাবেন ? যাতায়াতের জন্য আপনি সিউড়ি, বোলপুর অথবা সাঁইথিয়া যেকোনো পথই বেছে নিতে পারেন। তারাপীঠ থেকে এই গ্রাম মাত্র ৯ কিমি দূরে । পর্যটকদের থাকার জন্য এখানে রয়েছে অতিথিগৃহ তাই যদি রাত্রি নিবাস করতে চান তবে সেই ক্ষত্রেও পর্যটকদের সমস্যায় পড়তে হবে না । তাই কেদারনাথ, অমরনাথ যেতে এই মুহূর্তে না পারলে ১ দিনের জন্য বেড়িয়ে পড়ুন বিরচন্দ্রপুর ভ্রমণের উদ্দেশ্যে। চাইলে একদিনে গিয়ে একদিনেই এই তীর্থ ক্ষেত্র দর্শন করে ফিরতে পারবেন।