পার্বণের মোড়কে ১৪ প্রদীপ, ১৪ শাকে লুকিয়ে বাঙালির স্বাস্থ্যসুরক্ষা
Choddoshak and choddoprodeep for health

The Truth Of Bengal, Mou Basu : ভূতচতুর্দশীর দিন চোদ্দ শাক খেয়ে সন্ধ্যায় চোদ্দ প্রদীপ জ্বালানোর রীতি।কার্তিক মাসে যে সময় কালীপুজো, দীপাবলি হয় সেটি হেমন্তকাল। এসময় ঋতু পরিবর্তনের হাত ধরে বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় পরিবর্তনও হয়। তাই ধর্মীয় বিশ্বাস, অনুশাসনের হাত ধরেই ঋতুজ রোগভোগ ঠেকানোর উপায় সেই কোন প্রাচীনকাল থেকে হয়ে আসছে। কালীপুজোর আগে আলোর পোকার উপদ্রব বাড়ে, তাই ভূতচতুর্দশীর দিন সন্ধ্যায় বাড়ির চারিদিকে চোদ্দ প্রদীপ জ্বালানোর রীতি আছে। যাতে আলোর দিকে উড়ে যায় পোকারা। ঘরদোর বাঁচে। এমনি বললে তো কাজ হবে না তাই ধর্মীয় নিয়মের মোড়কে বর্ষার শেষে কার্তিক মাসে কালীপুজোর সময় নানান রকম শাক খাওয়ার প্রচলন হয় বাংলায়। দীপান্বিতা কালীপুজোর আগেরদিন অর্থাৎ কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দশীর দিন পালন করা হয় এই ভূত চতুর্দশী (Bhoot Chaturdashi)। এই ভূত কথার হল অতীত। এই দিন পরিবারের চোদ্দ পুরুষের উদ্দেশ্যে প্রদীপ জ্বালানো হয়। ভূত চতুর্দশী কিন্তু বাঙালিদের কাছে বিশেষ ভাবে এক পার্বণ। মহালয়ায় যেমন পিতৃপুরুষদের উদ্দেশ্যে জল দান করা হয়, এইদিন চোদ্দ পুরুষের উদ্দেশ্যে প্রদীপ জ্বালানো হয়।ঘর বাড়ি উঠোন, সর্বত্রই প্রদীপ বা মোমবাতি দেওয়া হয়।
‘চরক সংহিতা’য় বলা হয়েছে চোদ্দ শাক খেলে নাকি কার্তিকের টান বা শীতের শুরুতে হওয়া ঋতু পরিবর্তনের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। কারণ এই মাসে যমের বাড়ির ৮ দরজা খোলা থাকে। কার্তিক মাসে দ্বীপান্বিতা অমবস্যার আগের দিন ভূতচতুর্দশীর দিন কেউ যদি এই ১৪টি শাক খায় তাহলে সে যমের হাত থেকে রক্ষা পায়। ১৪টি ওষুধিগুণসম্পন্ন শাক হল-ওল, কেঁউ, বেতো, কালকাসুন্দে, সর্ষে, নিম, জয়ন্তী, শালিঞ্চ বা শাঞ্চে, গুলঞ্চ পাতা, পলতা পাতা, শেলূকা বা শালুকা, হিঞ্চে, ঘেঁটু বা ভাঁট পাতা, আর সুষনি শাক। আবার চোদ্দ শাক খাওয়ার রীতি থেকে বোঝা যায় বাংলায় ১৪ রকম বা তার বেশি শাক পাওয়া যায়।
চোদ্দ শাকের অন্যতম ওল অর্শ রোগের বড়ো ওষুধ। কৃমির হাত থেকে বাঁচায় কেঁউ। সংস্কৃত ভাষায় কেঁউয়ের নাম কেঁমুক। শাকের মধ্যে বেতোকে বলা হয় শাকের রাজা। এই শাক জ্বর প্রতিরোধ করে, লিভারকে ভালো রাখে। কাশি সারায় বলে কালকাসুন্দের আরেক নাম কাশমর্দ। পিত্ত সারায়, যাবতীয় রোগভোগ থেকে দূরে রাখে নিম। পেটের রোগ থেকে হওয়া চর্মরোগও সারায় নিম। পিত্তদোষ সারায় পলতা পাতা। বায়ুবিকার সারায় গুলঞ্চ পাতা। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে সর্ষে। ঋতু পরিবর্তনজনিত সর্দিকাশি সারায় জয়ন্তী। স্নায়ুতন্ত্রকে স্নিগ্ধ করে ঘুমোতে সাহায্য করে সুষনি শাক। বর্ষাকালে শাক খাওয়া হয় না। শরৎকালকে শাক খাওয়ার শুরুর সময় বলে ধরা হয়। এই সময় পিত্তদোষ হয় বলে শাক খেতে বলা হয়। ভূতচতুর্দশীর দিনটা সূচনামাত্র। এই একটা দিন নয় এবছর শরৎকাল থেকে পরের বছর বর্ষার আগে পর্যন্ত প্রতিদিনই শাক খাওয়ার সূচনা হয় এদিন।
FREE ACCESS