কলকাতা

২৬কে পাখির চোখ করে শুদ্ধিকরণের রাজনীতির গাইডলাইন ঠিক করে দিলেন মমতা বন্দোপাধ্যায়

Mamata Banerjee fixed the guidelines of the politics of purification from a bird's eye view of 26

The Truth of Bengal: স্বৈরাচারি-সাম্প্রদায়িক শক্তির সঙ্গে লড়তে গেলে দলে শুদ্ধিকরণ দরকার। একথা বুঝেই একুশের মঞ্চ থেকে বিবেকবান হওয়ার শপথ নিতে বলেছেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, ক্ষমতাসীন দল হিসেবে তৃণমূল কংগ্রসকে  প্রতিষ্ঠান বিরোধী হাওয়ার মোকাবিলা করতে হবে ২০২৬এ । তাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তৃণমূল কর্মীদের ঝাঁকুনি দিলেন। কারণ কিছু তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার করার ঝোঁক বাড়ছে বলে অভিযোগ করছে বিরোধীরা। তাই বিরোধীদের অস্ত্র ভোঁতা করে দিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়  তৃণমূলের নেতাও জনপ্রতিনিধিদের  আত্ম সংশোধন করে সমাজসেবার আদর্শ গ্রহণের খোলামেলা ডাক দিয়েছেন বলেও অনেকের অভিমত। একুশের মঞ্চ থেকে প্রতিবারই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আন্দোলনের গতি বাড়ান। শহিদদের ত্যাগ আর সংগ্রামকে পাথেয় করে পথ দেখান। আর চব্বিশের একুশে জুলাইয়ের শহিদ স্মরণ অনুষ্ঠান থেকে  রাজনীতির লক্ষ্য কী তার সহজপাঠ দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যেভাবে তিনি বাংলার ভোট জালিয়াতি রুখতে ১৯৯৩এ তোলপাড় ফেলেছিলেন,আর ১৯৯৮এ কংগ্রেসের বোঝাপড়ার রাজনীতির ঘরানা ছেড়ে আলাদা দল গড়েছিলেন,সেভাবেই এবার শুদ্ধিকরণের রাজনীতির গাইডলাইন ঠিক করে দিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো।

তাঁর মুখে শোনা যায়,বিরোধীরা বিত্ত বা সম্পদের পুজো করলেও তৃণমূল কংগ্রেস আদর্শবান কর্মীদের মর্যাদা দেবে।তাই বিত্তবান হওয়ার বদলে মানবিক হওয়া বা বিবেকবান হওয়ার কথা শোনা যায় মমতার মুখে।দলনেত্রী হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বুঝে গেছেন,বিরোধীদের অপপ্রচার,বাংলা বিরোধী অবস্থান মানুষ যেমন ভালোভাবে নিচ্ছে না,তেমনই আবার ক্ষমতার রাশ হাতে থাকা তৃণমূল জনপ্রতিনিধিরা যদি দরদী ভূমিকা না পালন করেন তাহলে তা সুখকর হতে পারে না। মহাকরণ অভিযান,সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম আন্দোলন সহ হাজারো আন্দোলনের ভূমি  থেকে উঠে আসা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর রাজনৈতিক দর্শন ব্যাখা করেছেন সহজ ভাষায়,অভিভাবকের মতো। টালির ঘর আর হাওয়াই চটি পায়ে দিয়ে রাজনীতি করা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজের জীবনবোধ থেকে তৃণমূল কর্মীদের বার্তা দেন, বিবেকবান কর্মীকেই তিনি সম্পদ মনে করেন। তাঁর পরিষ্কার কথা,পয়সা আসে,চলে যায়,কিন্তু সেবার ধর্ম রয়ে যায়।

সেবার যে কোনও বিকল্প নেই তা মর্মে মর্মে উপলব্ধি করা তৃণমূল সুপ্রিমো সাংসদ,বিধায়ক,কাউন্সিলর থেকে পঞ্চায়েতের প্রধান বা সদস্যদের স্পষ্ট করেন। দাদাগিরি বা ক্ষমতার স্পর্ধা দেখিয়ে যাঁরা ক্ষমতার অপব্যবহার করছেন,তাঁদের সাবধানবাণী শুনিয়েছেন তৃণমূলের সর্বময় নেত্রী বা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। তৃণমূল কংগ্রেস  বিজেপিকে স্বৈরাচারী বা সাম্প্রদায়িক শক্তি  বলে মনে করে। তাই কেন্দ্রের শাসকদের সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য আত্ম সংশোধন করা যে প্রয়োজন তা দীর্ঘ রাজনীতির অভিজ্ঞতা থেকে বুঝতে পেরেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাই তিনি বিজয়ীর দম্ভ নিয়ে যে আর তৃণমূল কর্মীদের থাকলে হবে না,গণদেবতার কাছে নম্র হতে হবে তাও রাজনীতির অনুশীলন থেকে পাঠ দিয়েছেন জাতীয় রাজনীতির অন্যতম জনপ্রিয় ও আলোচিত ব্যক্তিত্ব মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

একদিকে,দিল্লিতে দেশের স্বার্থে লড়াইয়ের পথ ঠিক করা আর অন্যদিকে ছাব্বিশে আরও বেশি করে ক্ষমতায় ফিরে আসার লক্ষ্যপূরণ করা।সেজন্য মাটির মানুষদের কাছে পৌঁছে গিয়ে দলনেত্রী যেমন জনসংযোগ বাড়াতে বলেছেন,তেমনই আবার বিত্ত –বৈভবের বাসনা ছেড়ে পায়ে হেঁটে  মনের মানুষ হওয়ার গাইডলাইনও ঠিক করে দিয়েছেন বাংলার রাজনীতির ভরকেন্দ্রে থাকা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।তিনি বুঝিয়ে দেন,রাজধর্ম রক্ষায় তাঁর কাছে কোনও রং নেই। শাসকদলের জনপ্রতিনিধিরা যদি অন্যায় করেন তাহলে প্রশাসনের প্রধান হিসেবে তিনি তা বরদাস্ত করবেন না। বাংলার পাহারাদার হিসেবে সর্বস্তরের তৃণমূল কর্মীদের যেভাবে তিনি কর্তব্যপরায়ন ও আদর্শবান হওয়ার নীতি নিতে বলেছেন তাতে রাজনীতির বিশুদ্ধকরণ হবে বলে তথ্যভিজ্ঞমহলের বিশ্বাস।

Related Articles