কলকাতা

নট সম্রাট গিরিশ ঘোষের কথায় ইনি হলেন উত্তর কলকাতার গিন্নিমা

In the words of Nat Samrat Girish Ghosh, this is the Ginnima of North Kolkata

Truth Of Bengal: জয় চক্রবর্তী: দক্ষিণেশ্বরে সন্ধ্যে নেমেছে। প্রতিদিনকার মতো সেদিনও ঠাকুর শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ ভক্তদের সঙ্গে ভক্তি বিষয়ক আলোচনায় মত্ত ছিলেন। এই সময় খবর এলো ঠাকুরের বড় ভক্ত ব্রহ্মানন্দ কেশব চন্দ্র সেন অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। ঠাকুরের মন বিচলিত হয়ে ওঠে। স্থির করলেন, উত্তর কলকাতার এক মায়ের মন্দিরে তিনি যাবেন। কেমন কথা তেমনি কাজ। পরদিন সকালে গঙ্গা দিয়ে রওনা হলেন। ‌কেশব চন্দ্র সেনের জন্ম কলুটোলায় হয়েছিল।

উনবিংশ শতাব্দীর একজন বাঙালি একজন ধর্ম সংস্কারক। ‘ইন্ডিয়ান মিরর’ পত্রিকায় রামকৃষ্ণকে নিয়ে এক অসাধারণ আর্টিকেল লিখেছিলেন কেশব চন্দ্র সেন। সেই পরম ভক্তের মঙ্গল কামনায় ঠাকুর রামকৃষ্ণ উত্তর কলকাতায় সেই মায়ের মন্দিরে এলেন। যা এখনো রয়েছে। কুমারটুলি থেকে সামান্য এগিয়ে এই মা সিদ্ধেশ্বরীর মন্দির। ভক্তের মঙ্গল কামনায় মায়ের কাছে ডাব এবং চিনি দিয়ে মানত করলেন ঠাকুর রামকৃষ্ণ। আপনাদের এখানে বলে রাখি, এখনো এই প্রথা উত্তর কলকাতার মা সিদ্ধেশ্বরী মন্দিরের রয়েছে। বহু মানুষ তার নিজের অথবা পরিবারের অন্য কারোর মঙ্গল কামনার জন্য মায়ের কাছে ডাব এবং চিনি দিয়ে প্রার্থনা করেন।

কিন্তু মা এখানে প্রতিষ্ঠিত হলো কি করে? সে এক রহস্য। এই ইতিহাস বেশ খানিকটা পুরনো। হিমালয়ে সাধনা করছেন সাধক কালিবর। সাধনরত অবস্থায় তার ইষ্ট দেবীর নির্দেশে দক্ষিণ অভিমুখে রওনা হলেন সাধক। পৌছলেন বর্তমান কুমারটুলি অঞ্চলে। এখানে তখন বর্তমান কলকাতার মতো রাস্তাঘাট ছিল না। ছিল ঘন জঙ্গল। ঘন জঙ্গলের মধ্যেই গঙ্গার গা ঘেঁষে বসবাস শুরু করলেন সাধক কালিবর। সঠিক সাল পাওয়া বড়ই কঠিন। তবে আনুমানিকভাবে ১৫২২।

দৈব নির্দেশে দুই শিষ্যকে নিয়ে মায়ের মূর্তি তৈরি করলেন সাধক। কিন্তু সাধক দেবস্থান নির্ণয় করলেন কিভাবে? তথ্য পাওয়া যাচ্ছে, সাধক দেখলেন একটি গাভী নির্দিষ্ট জায়গায় গিয়ে দুগ্ধ প্রদান করছে। এরপর স্বপ্ন আদেশ পেলেন যেখানে দুগ্ধ প্রদান করছে সেটাই দেবস্থান। বর্তমান মা সিদ্ধেশ্বরী মন্দির যেখানে অবস্থিত সেটাই তৎকালীন দেবস্থান হিসাবে স্বপ্নাদেশ পেয়েছিলেন সাধক কালিবর। শোনা যায় মাকে কোন এক সময় ডাকাতেরাও পুজো করেছে। সাধক কালিবরের মন অবশ্য বেশিদিন টেকেন। নির্দিষ্ট শিশ্যকে দায়িত্ব দিয়ে তিনি আবার সাধনার জন্য রওনা হলেন।

একটা দারুন তথ্য উঠে এসেছে। বর্তমানে মা সিদ্ধেশ্বরী পশ্চিমমুখী। কিন্তু মা পশ্চিমমুখী ছিলেন না। তাহলে দিক পরিবর্তন হলো কি করে? একদিন গঙ্গা দিয়ে রামপ্রসাদ সেন চলেছেন গান করতে করতে। মার খুব ইচ্ছা হল রামপ্রসাদের গান শুনবেন। তিনি রামপ্রসাদকে বললেন গান শোনাতে। রামপ্রসাদ বেঁকে বসলেন। মা’কে তিনি বললেন, আমি তোমার কাছে গিয়ে গান শোনাতে পারবো না। তোমার যদি গান শুনতে ইচ্ছা করে তাহলে তুমি আমার দিকে ঘুরে গান শোন। ছেলে বলেছে। মা শুনেছেন। সেদিন থেকেই মা সিদ্ধেশ্বরী উত্তর মুখে থেকে পশ্চিমমুখী হয়ে গেলেন।

মায়ের বড় অদ্ভুত রূপ। পট্ট বস্ত্র পরিহিতা। আয়তলোচনা। এবং মা যার উপরে দাঁড়িয়ে রয়েছেন তিনি হলেন শ্বেত মহাকাল। মানে সাদা শিব। এবং শিব এখানে দিগম্বর। ‌ মায়ের বাঁ পা শিবের বুকে রয়েছে। এই মন্দির যখন প্রতিষ্ঠা হয় তখন সামান্য হোগলা পাতার ছাউনি ছিল। পরবর্তী সময়ে মন্দির কংক্রিট হয়।

মায়ের মন্দির থেকে সামান্য দূরেই রয়েছে নট সম্রাট গিরিশ ঘোষের বাড়ি। নতুন নাটক তিনি রচনা করে প্রথম মায়ের পায়ে নিবেদন করতেন গিরিশ ঘোষ। ঠাকুর শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণের নির্দেশেই নট সম্রাট নতুন রচনা মায়ের পায়ে সমর্পিত করতেন। সিদ্ধেশ্বরী মাকে তিনি বলতেন উত্তর কলকাতার গিন্নিমা। মা এখানে সদা জাগ্রত। মনের মনষ্কামনা পূরণের জন্য শুধু কলকাতা নয়, ভিন রাজ্য থেকেও ভক্তরা আসেন উত্তর কলকাতার গিন্নি মাকে দর্শন করতে।

Related Articles