
The Truth of Bengal, Mou Basu: দেবীপক্ষ শুরু হয়ে গেছে। মণ্ডপে মণ্ডপে এরমধ্যে ঠাকুর নিয়ে যাওয়া শুরু হয়ে গেছে। হিড়িক পড়ে গেছে পুজোর উদ্বোধনের। মহালয়া পেরিয়ে যেতেই সবারই পুজোর প্ল্যানিং শুরু হয়ে যায়। পুজোর ক’টা দিন কী পরবে, কী খাবে, কোথায় কোথায় ঠাকুর দেখতে যাবে তা নিয়ে প্ল্যানিং অনেক আগে থেকেই করতে শুরু করে দেয় উৎসবপ্রিয় বাঙালি। ভোজন রসিক বাঙালির খাওয়াদাওয়া ছাড়া যে কোনো উৎসবই অসম্পূর্ণ। পুজোয় প্রায় সকলেই কিছু না কিছু বাইরের খাবার খান। বাইরের হাবিজাবি ভাজাভুজি খাবার খেলেই পেটের দফারফা অবস্থা। হজমের গোলমাল হবেই হবে। পুজোর আগেই তাই হজমশক্তি বাড়িয়ে তুলতে নিয়মিত খান দই। তবে দই খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কখন দই খাবেন সেটাও কিন্তু সমান গুরুত্বপূর্ণ। সকালে দই খেলে মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়িয়ে তোলে। তেমনই দুপুরে বা বিকেলে দই খেলে পেট ফাঁপা কমে। রাতে দই খাওয়া যায় না বলে অনেকেরই ভুল ধারণা রয়েছে। কিন্তু ডাক্তার ও পুষ্টিবিদদের মতে, রাতে দই খেলে সেরোটোনিন হরমোনের নিঃসারণ বাড়িয়ে তোলে। ঘুম ভালো হয়।
১০০ গ্রাম দইতে ৮১% জল আর ৬১ কিলো ক্যালরি মেলে। কার্বোহাইড্রেট থাকে ৪.৭ গ্রাম আর ফ্যাটের পরিমাণ ৩.৩ গ্রাম। কোনো ফাইবার নেই। প্রোটিন থাকে ৩.৫ গ্রাম। পটাসিয়াম ১০৪ মিলিগ্রাম আর সোডিয়াম থাকে ৩৬৪ মিলিগ্রাম। পুষ্টিকর দুগ্ধজাত খাবার দই শরীর ঠান্ডা করে বলে প্রায় সবারই প্রিয়। মিষ্টি দইয়ের ভক্ত বাঙালি অবাঙালি নির্বিশেষে এমনকি বিদেশিরাও। আবার স্যালাড, স্মুদি, শরবতে টক দই ব্যবহার করা হয়। মাংস ম্যারিনেট করা হয় টক দই দিয়ে। দইকে বলা হয় দরকারি ভিটামিন আর খনিজ পদার্থের পাওয়ার হাউজ। ভিটামিন বি১২, ভিটামিন বি২, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম আর পটাশিয়াম প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায় দইতে।
কতটা উপকারী দই?
১) গরমে এক বাটি দই বিশেষ করে টক দই খেলে শরীর ঠান্ডা হয়। পেটের মধ্যে গ্যাস তৈরি হলে যে গরম হয় তা ঠান্ডা করে দই। শরীরের অভ্যন্তরীন তাপমাত্রা ঠান্ডা করে দই।
২) গরমে তাপপ্রবাহ ও সানস্ট্রোক হওয়ার থেকে শরীরকে রক্ষা করে দই। নিয়মিত গরমে দই খেলে ডিহাইড্রেশন বা জল শূন্যতার সমস্যা হয় না। শরীর আর্দ্র রাখে দই।
৩) দইতে শরীরের জন্য উপকারী ব্যাক্টেরিয়া পাওয়া যায় কারণ ফারমেন্টেশন প্রক্রিয়ায় তৈরি হয় দই। দইতে থাকা উপকারী ব্যাক্টেরিয়া পাকস্থলীর সংক্রমণ আটকায়। শরীরের মেটাবলিজম বা বিপাকক্রিয়া বাড়িয়ে তোলে দই।
৪) দইতে মেলে প্রচুর পরিমাণে উপকারী ব্যাক্টেরিয়া যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে। প্রোটিন, ভিটামিনের পাশাপাশি ল্যাক্টোব্যাসিলাসের মতো উপকারী ব্যাক্টেরিয়া থাকে বলে দই খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। দইতে প্রোবায়োটিক থাকে বলে তা অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।
৫) দই সহজপাচ্য খাবার। দই খুব সহজে হজম হয়। এমনকি ল্যাক্টোজ ইনটলের্যান্টের সমস্যা আছে অর্থাৎ যাদের দুধ সহ্য হয় না তারাও খুব সহজে দই হজম করতে পারেন।
৬) দই ত্বকের স্বাস্থ্যও ভালো রাখে। ল্যাক্টিক অ্যাসিড আছে বলে দই ত্বকের মরা কোষ দূর করে এক্সফলিয়েটরের কাজ করে। ত্বককে আর্দ্র রাখে। নিয়মিত দই খেলে ত্বক আর চুল স্বাস্থ্যোজ্জ্বল হয়।
৭) দই হার্টের বন্ধু। তাই নিয়মিত দই খেলে রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে। উচ্চ রক্তচাপ ও হাইপার টেনশনের সমস্যা দূর হয়।
৮) দইতে মেলে প্রচুর পরিমাণে উপকারী ব্যাক্টেরিয়া যা সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করে ভ্যাজাইনাকে। ভ্যাজাইনার পিএইচের ভারসাম্য ঠিক রাখে।
৯) নিয়মিত দই খেলে শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়াম ঢোকে যা দাঁত ও হাড় মজবুত করে।
১০) শরীরে কর্টিসল হরমোনের নিঃসারণ বেশি হলে চর্বি জমতে শুরু করে। ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ দই কর্টিসল হরমোনের নিঃসারণ কমিয়ে চর্বি গলায়। ওজন ঝরাতে সাহায্য করে। দই খেলে হাবিজাবি খেয়ে পেট ভরানোর প্রবণতা কমে। বাড়তি ক্যালরি ঢোকে না বলে মেদ জমে না।
১১) ভিটামিন আর খনিজ পদার্থে ভরপুর দইকে বলা হয় এনার্জি বুস্টার। রক্তের শর্করার মাত্রা কমায় টক দই।
তবে দইয়ের কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও রয়েছে। দইতে মেলে না ফাইবার তাই বেশি পরিমাণে দই খেলে কোষ্ঠকাঠিন্যর সমস্যা হয়। ওজন বেড়ে যায়। জয়েন্ট পেনের ব্যথা বাড়ে। টক দই আর্থরাইট্রিস ও জয়েন্ট পেনের সমস্যা বাড়িয়ে তোলে।
Free Access