অনলাইন প্রতারণা ফাঁদ ক্রমেই বাড়ছে, পাল্লা দিয়ে সক্রিয় হচ্ছে $extortion এর চক্র
সামান্যতম অসাবধান হলেই গলার ফাঁস হয়ে বসছে আধুনিক প্রযুক্তি

The Truth of Bengal: অরুণ মিশ্র, বয়স ৫০। উত্তরপ্রদেশের লখনউয়ের বাসিন্দা। সপ্তাহ খানেক আগে, গোমতী নদীর ইন্দিরা জলাধার থেকে ঝাঁপ মারেন। জলাধারের কাছেই তাঁর স্কুটারটি পড়েছিল। পুলিশ তাঁর দেহ তন্ন তন্ন করে খোঁজার চেষ্টা চালায় এখনও তা মেলেনি।
অবিনাশ সিং, বয়স ২৫। মধ্যপ্রদেশে ইন্দোরের বাসিন্দা। পিএসসি পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। কিন্তু আচমকাই তিনি আত্মহত্যা করেন। এই দুটি মৃত্যুর সঙ্গে একটি কমন কারণ রয়েছে, সেটি হল সেক্সটরশন।
গোটা বিশ্ব যত আধুনিক হচ্ছে, ততই বদলে যাচ্ছে অপরাধের ধরণ। আধুনিক প্রযুক্তি যতই সাধারণ মানুষের কাজকে সহজ সরল করে দিচ্ছে, ঠিক ততটাই নরকে পরিণত করছে। সামান্যতম অসাবধান হলেই গলার ফাঁস হয়ে বসছে আধুনিক প্রযুক্তি।
গত দু বছরে একটি নতুন ধরণের অপরাধ ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে জাঁকিয়ে বসেছে। সেটি হল সেক্সটরশন। অর্থাৎ মান সম্মান ক্ষতি করার ভয় দেখিয়ে টাকা আদায়। আর এই অপরাধের ক্ষেত্রে অপরাধীদের পাকড়াও করতে পুলিশকে কম নাজেহাল হতে হয় না। কারণ, অপরাধীদের নাগাল পেতে যত কসরত করতে হয়, সেই সময়ে অপরাধীরা নিজেদের সবকিছু বদলে ফেলে।
আসলে এই অপরাধের শিকড় রয়েছে সৌশ্যাল মিডিয়াতে। আজ বহু মানুষ, স্রেফ নেশার বশে, ভালো ভাবে সচেতন না হলেই সোশাল মিডিয়াতে ঝাঁপিয়ে পড়ছেন। আর নিজের অজান্তে পা দিচ্ছেন ফাঁদে।
কীভাবে হয় এই ফাঁদ?
ফেসবুকে অনেকেই অপরিচিতদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করেন। রোজ নিত্যনতুন বন্ধু। তাঁদের সঙ্গে মেসেঞ্জারে ব্যক্তিগত আলাপচারিতাও সারেন অনেকে। অপরাধের সূচনা হয় এখান থেকেই। অনেকেই মেসেঞ্জারে সামান্য কথাবার্তার পরেই, নিজের হোয়াটস অ্যাপ নম্বর দিয়ে দেন। বা হয়তো অপরাধীরা কখনও কখনও কোনও জায়গা থেকে ডেটাবেস চুরি করেও হোয়াটস অ্যাপে ভিডিও কল করে থাকে। আর এই কল রিসিভ করলেই, দেখা যায়, অন্য পারে কোনও নগ্ন মহিলা দাঁড়িয়ে রয়েছেন, বা কথা বলার চেষ্টা চালাচ্ছেন। এবার সেই ভিডিও কল রেকর্ড করে ব্ল্যাকমেল করতে থাকে অপরাধীরা। ভয় দেখানো হয়, টাকা না পাঠালে, এই ভিডিও ফাঁস করে দেওয়া হবে সোশ্যাল মিডিয়াতে। ছড়িয়ে দেওয়া হবে আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধবদের মধ্যে।
অনেকেই ভাবেন, একবার হয়তো টাকা দিলেই বিষয়টির সেখানেই শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু না, এটি ধারাবাহিক ভাবে চলতেই থাকে। আর এই পরিস্থিতিতে থেকে বাঁচার দুটি পথ থাকে একটি পুলিশের কাছে অভিযোগ জানানো, অন্যটি আত্মহত্যার পথ বেছে নেওয়া। অনেকেই লোকলজ্জার ভয়কে টপকে পুলিশের কাছে অভিযোগ জানান, আবার অনেকে তা পারেন না বলে, আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। অরুণ মিশ্র বা অবিনাশ সিংয়ের মতো অনেকেই চরম পথ বেছে নিয়েছে। আবার কিছু মানুষ আছেন, যাঁরা এমন পরিস্থিতির শিকার হলে, ভয় না পেয়ে সোজা থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। ফলে একটু সময় লাগলেও, ধরা পড়ে অপরাধীরা, যেমন চলতি সপ্তাহেই রাজস্থানে পাকড়াও করা হয় এক মাস্টারমাইন্ডকে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুরো দলকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এছাড়াও, মুম্বই থেকে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে একই ধরণের অপরাধের জন্য।
১। সোশ্যাল মিডিয়ায় বন্ধুত্ব গ্রহণের জন্য ভালো করে আগে যাচাই করুন। মেসেঞ্জারে পরিচিত বন্ধুবান্ধব ছাড়া কথপোকথন এড়িয়ে চলুন। আগাম কোনও অনুমতি ছাড়া ভিডিও কল করলে, সরাসরি ব্লক করুন।
২। হোয়াটস অ্যাপে অপরিচিত নম্বর থেকে কল বা ভিডিও কল এলে, রিসিভ না করাই উচিত। আর রিসিভ করলেও, সবার আগে, নিজের ফ্রন্ট ক্যামেরা আঙুল দিয়ে চেপে রাখুন। যাতে আপনার ছবি তার কাছে না যায়।
৩। এরপরেও কোনও কারণে এমন ধরণের ঘটনা ঘটলে ভয় না পেয়ে আপনার নিকটস্থ থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করুন।
বিপদ যেখানে লুকিয়ে
সেক্সটরশনের ফাঁদে শুধুমাত্র বয়স্ক, মধ্যবয়স্ক বা যুবকরাই পড়ছেন এমনটা নয়। নাবালকরাও পড়ছে। কারণ, করোনা মহামারির পর থেকে মোবাইলে অনলাইনে পড়াশুনার প্রবণা অনেকটাই বেড়েছে। ফলে, নাবালক, নাবালিকাদের হাতেও পৌঁছে গিয়েছে মোবাইল। তাদের সচেতনাবার্তা দেওয়াও কঠিন। অনেক সময় দেখা যায়, যেটা বারণ করা হচ্ছে, তারা কৌতুহলবশত সেটাই করে। অর্থাৎ ফাঁদের পড়ার সম্ভাবনা ছাত্রছাত্রীরাও পড়তে পারে। তাই, নাবালক নাবালিকার হাতে মোবাইল দেওয়ার সময় অভিভাবকদের অত্যন্ত সতর্ক থাকতে হবে, নইলে যে কোনও মুহূর্তে বিপদ ঘনিয়ে আসতে পারে।