
The Truth of Bengal: চিরকাল মানুষকে আনন্দ দিয়ে গিয়েছেন। কিন্তু, মানুষকে আনন্দ দিতে নিজের দুঃখ লুকিয়ে রাখতেন। বুঝতে দিতেন না তাঁরও চোখে জল আসে। বৃষ্টিতে হাঁটতে পছন্দ করেন। কারণ তাতে তাঁর চোখের জল দেখা যায় না। চিরকাল মানুষকে আনন্দ দিয়ে যাওয়া কিংবদন্তি অভিনেতা চার্লি চ্যাপলিন আত্মজীবনীতে লিখেছিলেন এই কথা। তাঁর সঙ্গে অনেকটাই মেলে ভারতীয় ভারতীয় সিনেমার উজ্বলতম নক্ষত্র কিশোর কুমারের জীবন। নাচ,গান, অভিনয় সব দিকেই সমান পারদর্শী ছিলেন তিনি। তাঁর মতো বহুমুখী প্রতিভাধর শিল্পী ভারতীয় সিনেমায় বিরল। কিশোর কুমার এমন একজন শিল্পী, যিনি পর পর আটবার ফিল্মফেয়ার অ্যাওর্য়াড পান। যা এখনও পর্যন্ত কেউ ভাঙতে পারেননি। সেই মানুষটির জীবনেও কম ঝড়-ঝঞ্ঝা আসেনি। ব্যক্তি জীবনের সমস্যা দূরে সরিয়ে রেখে তিনি আজীবন সমৃদ্ধ করে গিয়েছেন বিনোদন জগতকে। শুক্রবার সেই মানুষটির জন্মদিন। তাই এত বছর পরও সঙ্গীতপ্রেমীদের কাছে একই রকম আছে তাঁর আবেদন। আজও মানুষ মগ্ধ হন কিশোরের গান শুনে। আজও চিরসবুজ হয়ে আছে তাঁর গান।
মধ্যপ্রদেশের খান্ডোয়ায় কিশোর কুমারের জন্ম ১৯২৯ সালে। বাবা কুঞ্জলাল গঙ্গোপাধ্যায় পেশায় ছিলেন আইনজীবী। চার ভাই বোনের মধ্যে সবচেয়ে ছোট ছিলেন কিশোর কুমার। অশোক কুমার সবার বড়। তারপর দিদি সতী দেবী, তারপর অনুপ কুমার ও কনিষ্ঠ কিশোর কুমার। তাঁর আসল নাম ছিল আভাস কুমার গঙ্গোপাধ্যায়। দাদা অশোক কুমার চেয়েছিলেন ভাই কিশোর তাঁর মতো অভিনেতাই হন। কিন্তু কিশোরের মন ছিল গানের দিকেই। শুরুর দিকে সাফল্য আসেনি। তবে কিছুদিন পর তিনি সঙ্গীত জগতকে বুঁদ করে দেন তাঁর গান দিয়ে। ভারতীয় সিনেমায় শুরু হয় কিশোর-যুগ। যা অব্যাহত ছিল ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত। যার গানে মানুষ হাসে অন্তর খুলে, যার গানে মানুষ অন্তর খুলে কাঁদে! সেই কিশোর কুমারের জন্মদিন পালন হল সাড়ম্বরে। নবান্নে তাঁর প্রতিকৃতিতে মাল্যদান করে শ্রদ্ধা জানানো হয়। টালিগঞ্জে তাঁর মূর্তির পাদদেশেও বড় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। গানের মাধ্যমে স্মরণ করা হয় ভারতীয় সঙ্গীতের কিংবদন্তি শিল্পীকে। সেখানে ছিলেন রাজ্যের ক্রীড়া ও যুবকল্যাণ মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। ছিলেন আরও বিশিষ্ট জনেরা।
ভারতের প্রায় সব ভাষায় গান গাওয়ার কৃতিত্ব রয়েছে কিশোর কুমারের। হিন্দি ও বাংলা ভাষার বেশকিছু ছবিতেও অভিনয় করেছেন। দীর্ঘ সঙ্গীত জীবনে তিনি ৮ বার ফিল্মফেয়ার পুরস্কার জিতেছেন। অথচ এই মানুষটি শেষ জীবনে একেবারে একাকিত্বে দিন কাটিয়েছেন। দিনটা ছিল ১৯৮৭ সালের ১৩ অক্টোবর। সকাল থেকেই কিশোর কুমার বলছিলেন, তাঁর দুর্বল লাগছে। উদ্বিগ্ন স্ত্রী লীনা চন্দ্রভারকর চিকিৎসককে খবর দিতে চাইলে কিশোর মজা করে বলেছিলেন, ‘তুমি যদি ডাক্তারকে খবর দাও, আমার কিন্তু হার্ট অ্যাটাক হবে’। এটাই ছিল তাঁর শেষ কথা। আমুদে প্রকৃতির কিশোর জীবনের অন্তিম সময়েও একই রকম ছিলেন। সেই মানুষটির জীবনের কথা, তাঁর সৃষ্টি বারের বারে ফিরে আসে জন্ম ও মৃত্যুদিনে। এই ভাবে আজও চিরসবুজ আছেন কিশোর।