গিগকর্মীদের জন্য শ্রম আইনের বিশেষ পরিবর্তন দরকার
Special changes to labor laws are needed for gig workers

Truth of Bengal, অর্ক গোস্বামী: বিশ্বায়নের যুগে ডিজিটাল প্রযুক্তিতে ভর করে বহু মানুষ গিগ অর্থনীতির পরিসরে প্রবেশ করছেন। বিভিন্ন সমীক্ষা অনুযায়ী, আগামী এক দশকে কেবলমাত্র ভারতে গিগকর্মীদের সংখ্যা অকৃষি ক্ষেত্রে ৯ কোটি হতে চলেছে। অনলাইন প্লাটফর্ম নির্ভর এই আর্থিক কর্মকাণ্ডের মূল বৈশিষ্ট্য হল কাজের সময় ‘ফ্লেক্সিবল’ অর্থাৎ কমবেশি নিজের সুযোগ সুবিধা মতো করা যায়। স্বল্পমেয়াদি এবং অস্থায়ী প্রকৃতির।
সমীক্ষা অনুযায়ী, বর্তমানে ভারতের মোট গিগ কর্মীর প্রায় ২০ শতাংশ মহিলাকর্মী। যদিও এই সংখ্যা আমেরিকার তুলনায় (৪১ শতাংশ, আইএলও সমীক্ষা ২০২১) বেশ কম, তবুও ক্রমশ ঊর্ধ্বমুখী। টিমলিজ সংস্থার করা সার্ভে অনুযায়ী ভারতের মহিলারা ক্রমশ তাদের চিরায়ত এবং সীমিত কর্মক্ষেত্রের বাইরে পদার্পণ করছেন এই গিগ অর্থনীতির হাত ধরে। তবে এই রক্ষণশীলতার সীমা না মানার আর্থিক পরিসরে মহিলা শ্রমিকদের বেশ কিছু সমস্যাও বিগত দিনে লক্ষ্য করা গিয়েছে।
প্রথমত, সুরক্ষা। আ্যপ নির্ভর সার্ভিসগুলির ডেলিভারি, পিক আপ ড্রপ সার্ভিস, গ্রোসারি ইত্যাদি। ২৪ ঘণ্টা ব্যাপী হওয়ায় অনেক সময় মহিলা গিগকর্মীদের পক্ষে সমস্যাজনক। ফলে সংসারের তাগিদে মন চাইলেও রাত বিরেতে তাদের কাজ করার সুযোগ সীমিত। দ্বিতীয়ত, মহিলা গিগকর্মীদের সংখ্যা এবং ঘনত্ব উল্লেখযোগ্য ভাবে কম হওয়ায় বহু সময় তারা তাদের নিজস্ব সংগঠন, নিদেনপক্ষে বন্ধুচক্র তৈরি করতেও অপারগ হন।
তৃতীয়ত একজন পুরুষ কর্মী অপেক্ষা মহিলা কর্মীর আয় প্রায় ৮ থেকে ১০ শতাংশ কম হয় যার অন্যতম কারণ স্থায়ী অফিস বা বিশ্রামস্থল না থাকা এবং প্রতি মাসের শারীরবৃত্তীয় মেনস্ট্রুয়াল চক্রের কারণে বহু সময় নারীদের বাধ্য হয়ে কাজের সময়ের সঙ্গে আপস করতে হয়। এমতাবস্থায় সরকারের উচিত পরিস্থিতির সঠিক সুরতহাল করে গিগ অর্থনীতির শ্রমিক বান্ধব কিছু সংস্কার সাধন করা।
প্রথমত, গিগ কর্মীদের জন্য শ্রম আইনের বিশেষ পরিবর্তন করে তা আরও বেশি মানবিক করে তোলা।
দ্বিতীয়ত, নারী শ্রমিকদের কর্মস্থলে যাতে যৌন হেনস্থার শিকার না হতে হয় তার ব্যবস্থা করা।
তৃতীয়ত, নিয়মিত নারী গিগ কর্মীদের জন্য নয়া প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণ দেওয়া দরকার, যাতে তারা নিজের আর্থিক ভাবে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারে।
সবশেষে মহিলাদের গিগ কর্মী হিসেবে কাজ করাকে আমাদের সবাইকে মনে এবং মেনে দুটোই নিতে হবে। ওয়ার্ল্ড ভ্যালুস সার্ভে ওয়েভের করা সমীক্ষার ষষ্ঠ সংস্করণে ভারতের প্রায় এক তৃতীয়াংশ মহিলা জানিয়েছেন যে, পরিবারে মহিলারা যদি পুরুষদের থেকে বেশি উপার্জন করেন তবে সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। পরিবারের তথা আগামী প্রজন্মের উন্নতির স্বার্থে যে মহিলারা রক্ষণশীলতার আগল ভেঙে গিগ অর্থনীতিতে নামছেন। তাদের প্রতি তাই আমাদের আরও বেশি সংবেদনশীল হতে হবে।