সম্পাদকীয়

মোদি-শাহের ‘সিঁদুর’ রাজনীতি একেবারেই পছন্দ নয় দেশবাসীর

The countrymen do not like the 'vermilion' politics of Modi-Shah at all.

Truth Of Bengal: দেশের অখণ্ডতা, ঐক্যের স্বার্থে সমস্ত রাজনৈতিক দল এক হয়েছে। দেশের সমস্ত রাজনৈতিক দলের সাংসদদের এক কথা পহেলগাঁও হত্যার বদলা চাই, পাকিস্তানকে যোগ্য জবাব দিতে হবে। দেশের ১৪০ কোটি মানুষের আজও রক্ত টগবগ করে ফুটছে। একদিকে বদলা নিতে হবে সিদ্ধান্তে অটল বিরোধী সাংসদরাও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রতি আস্থাজ্ঞাপন করেছেন। দেশের সেনারা প্রাণপণ লড়াই করেছেন।

সোফিয়া কুরেশি ও ব্যোমিকা সিং-এর মতো নারীশক্তির নেতৃত্বে ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর ক্ষেত্রে এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। পাকিস্তান যোগ্য জবাব গেয়েছে। পাকিস্তানের একের পর এক জঙ্গি ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দিয়েছে ভারত। আবার এই সফলতা আনতে গিয়ে মৃত্যু হয়েছে অনেক সেনার। তাঁরা রক্ত ঢেলেছেন দেশের অখণ্ডতাকে রক্ষা করার জন্য। আর সেই সেনা, সেই নারীশক্তিকেই যদি দেশের সাংসদ দেশের মন্ত্রী কুরুচিকর মন্তব্য করেন, তা হলে এর থেকে লজ্জাজনক কী হতে পারে? এখন আবার সিঁদুর নিয়ে ব্যবসা।

বিজেপি দলটার তো লজ্জা ঘেন্না বলে কিছু নেই! জাত-পাত-ধর্ম থেকে এরা বেরোতে পারে না। ভোট চাই, সেটা সিঁদুরের বিনিময়ে হোক বা মানুষের মৃত্যু। তাই তো স্বপ্নের ফেরিওয়ালা নরেন্দ্র মোদি ‘সিঁদুরের ফেরিওয়ালা’ হয়ে বাংলায় তড়িঘড়ি পা রাখলেন। ২৬ শে বাংলায় বিধানসভা নির্বাচন। তাই সিঁদুরের কৃতিত্ব তো নিতেই হবে। তাঁর দোসরও শাহ আসলেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ একই ঢঙে বাংলার বিরুদ্ধে নানা কু-মন্তব্য করলেন।

ভোটের জন্য তাঁরা এত নিচে নামতে পারেন? নারীর সিঁথির এক চিলতে সিঁদুরের মূল্য কী, তা বোঝেন তাঁরা? তাই তো তাদের নেতা-মন্ত্রীরা নারীশক্তিকে তুচ্ছ মনে করেন।
বিরোধী দলের সাংসদরাও তো দেশের হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রে প্রচার করছেন। বিশ্বের দরবারে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে জোরালো বক্তব্য রেখেছেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা সংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। কংগ্রেস সাংসদ শশী থারুর থেকে শুরু করে বিভিন্ন বিরোধী রাজনৈতিক দলের সাংসদরা ভারতের ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর সাফল্যের কথা তুলে ধরেছেন বিশ্বের দরবারে। গোটা বিশ্বকে বোঝাতে পেরেছেন কেন এই অপারেশনের প্রয়োজন ছিল। কীভাবে পাক-ভূমিতে জঙ্গিরা বড় হচ্ছিল সেই তথ্য প্রমাণ তুলে ধরেছেন।

জঙ্গি দমনে ভারতের এই ভূমিকার পাশে যে বিশ্বের অন্যান্য দেশেরও থাকার প্রয়োজন তা দেশের সব রাজনৈতিক দল ঐক্যবদ্ধ ভাবে স্পষ্ট করেছে। ফলে ‘অপারেশন সিঁদুর’ এর প্রচার শুধু বিশেষ একটি রাজনৈতিক দলের জন্য হওয়া উচিত নয়। এই প্রত্যাঘাতের সাফল্য কোনও নিজস্ব রাজনৈতিক দলের সম্পত্তি নয়। ভারতীয় সেনাবাহিনীর সাফল্য। যেখানে ভারতের সমস্ত রাজনৈতিক দলের সমর্থন রয়েছে।

কিন্তু যতই বলুক, যতই করুক, সাফল্যের স্বাদের ভাগ না নিয়ে বসে থাকা যে তাদের রাজনৈতিক চরিত্র নয়। তাই দেশের সেনাবাহিনীর এই সাফল্যকে নিজেদের সাফল্য বলে জাহির করতে উঠে পড়ে লেগেছেন বিজেপির নেতারা। নিজেদের রাজনৈতিক সাফল্য বলে কার্যত প্রচারে নেমে পড়েছেন নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহ অ্যান্ড কোম্পানি। সুকান্ত মজুমদার, শুভেন্দু অধিকারীরা তো আরও কয়েক কদম এগিয়ে বাংলায় অপারেশন সিঁদুরের হুঙ্কার দিয়েছেন!
কৃতিত্ব আপনারা নেবেন এটা আপনাদের স্বভাবসিদ্ধ ব্যাপার।

কৃতিত্ব নিন, খারাপের দায়ভার নেবেন না? সীমান্তগুলো দিয়ে অনুপ্রবেশ ঘটছে। সেটা পাকিস্তান হোক বা বাংলাদেশ। বর্ডার তো আপনাদের অধীনে, যেটা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের দায়িত্বে। যার পূর্ণাঙ্গ দায়িত্ব অমিত শাহের। সেখান দিয়ে অনুপ্রবেশ ঘটলে, তার ব্যর্থতা কার? ভোটের জন্য নোংরা রাজনীতি করতে গিয়ে উদোর পিন্ডি বুদোর ঘাড়ে চাপালে তো হবে না। নির্বাচন কমিশন কার্যত আপনাদের হাতে। এর ভাল-মন্দ দায়ভার, কৃতিত্ব আপনাদেরই। বাংলায় এসে ‘গপ্পো’ বানিয়ে মানুষকে বোকা বানানোর চেষ্টা করবেন, আর মানুষ আপনাদের নাচতে নাচতে গিয়ে ভোট দিয়ে দেবেন! ভাবলেন কী করে? টের তো পেয়েছেন ২০২১-এর বিধানসভা ও ২০২৪-এ লোকসভা নির্বাচনে, ডেইলি প্যাসেঞ্জারি করেও সফলতা মেলেনি। এ থেকে কি কোনও শিক্ষাই গ্রহণ করতে পারেননি আপনারা? কই মনিপুরে দু’বছর ধরে জাতিদাঙ্গা চলছে, বহু মানুষের মৃত্যু হয়েছে, আদিবাসী সম্প্রদায়ের বহু মহিলা ধর্ষিতা হয়েছেন।

একটিবারও তো প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সেখানে গেলেন না? আজকে সিঁদুর নিয়ে কৃতিত্ব নিতে চাইছেন। পহেলগাঁওতে নিরীহ পর্যটকদের হত্যা হল, নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে কোনও বিবৃতি দিলেন না তো আপনারা? দেশের মানুষ তো জানতে চায়। পুলওয়ামার ঘটনা থেকেও কি শিক্ষা নেয়নি সরকার? আজকে দেশজুড়ে একমাসে ১৫ জন পাকগুপ্তচর গ্রেফতারর হয়েছে। যার সবটাই প্রায় বিজেপি শাসিত রাজ্য। যার মধ্যে খোদ প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর রাজ্যও রয়েছে। শাক দিয়ে তো মাছ ঢাকা যাবে না। অপরের খুঁত ধরে ধরে বেড়াচ্ছেন অথচ আপনাদের শাসনে লালিত-পালিত রাজ্যগুলো সমাজ বিরোধীদের স্বর্গরাজ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। ধরা পড়ছে একের পর এক পাক গুপ্তচর।

সর্ষের মধ্যেই ভূত! খোদ রাজধানী দিল্লিতেই বাসা বেঁধেছে পাক-গুপ্তচররা। উত্তরপ্রদেশ, বিহার, গুজরাট, হরিয়ানা, পঞ্জাব, রাজস্থান বাকি কোথায়? টাকার লোভে এইসব পাক-গুপ্তচররা দেশকে বিক্রি করে দিতে চাইছে। হরিয়ানার জ্যোতি মালহোত্রা, মহারাষ্ট্রের রবীন্দ্র বর্মা, দিল্লির মোতিরাম জাঠ, গুজরাটের সহদেব সিং গোহলি, হরিয়ানার দেবেন্দ্র সিং বিলো, পানিপথের মৌমান ইলাহি, রাজস্থানের শকুর খান-এর মধ্যে আধাসামরিক বাহিনীর কর্মীও রয়েছে। এখন কথা হচ্ছে, দেশের এহেন অবস্থায় কি এমন রাজনীতি করা উচিত? দেশের অভ্যন্তরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল থাকবে, শাসক দল থাকবে, সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তার আগে দেশ, দেশের অখণ্ডতা, দেশের নিরাপত্তা। দেশের থেকেও কি বড় তাদের দল? একথা কি বোঝেন না মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্টমন্ত্রী?

Related Articles