
The Truth of Bengal: জি-২০ সম্মেলনের রেশ এখনও কাটেনি, তার মধ্যেই দুঃসংবাদ ঘোষণা করে দিল কানা। কানাডার বিদেশমন্ত্রী মেরি এনজি জানিয়েছেন, জি-২০ সম্মেলনে আলোচনার পরেও, ভারত-কানাডা ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট বা মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি আপাতত তারা স্থগিত রাখছে। যদিও বিবৃতির মাধ্যমে চুক্তি বিলম্ব হওয়া ও স্থগিতের কোনও কারণ দর্শানো হয়নি।
শুক্রবার কানাডার বাণিজ্য মন্ত্রী মেরি এনজির মুখপাত্র শান্তি কসেন্টিনো বলেছেন, “বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে আমরা ভারতে আসন্ন বাণিজ্য চুক্তি স্থগিত করছি। যদিও গত মে মাসে কানাডার বাণিজ্যমন্ত্রী মেরি এনজি এবং কেন্দ্রীয়মন্ত্রী পীযুষ গোয়েল যৌথ বিবৃতিতে জানিয়েছিলেন, যে তারা চলতি বছরের শেষে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য এবং বিনিয়োগ বাড়ানোর ক্ষেত্রে আশাবাদী।
অতি সম্প্রতি, নয়াদিল্লিতে শেষ হয়েছে জি-২০ সম্মেলন। সেখানেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি খালিস্তান ইস্যুতে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোকে কড়া বার্তা দেন। তারপরেই এমন একটি বিবৃতি এলো কানার তরফে যা বেশ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
প্রশাসনিক কর্তাদের মত, জি ২০ সম্মেলনের সময়ই যথেষ্ট সুযোগ ছিল নরেন্দ্র মোদি এবং জাস্টিন ট্রুডোর মধ্যে একান্তে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হওয়ার। কিন্তু তা হয়নি, বরং খালিস্তান ইস্যুতে সরাসরি তোপ দাগা হয়েছে কানাডাকে। কানাডার মাটিতে খালিস্তানিরা যেভাবে ভারত বিরোধী আন্দোলন চালাচ্ছে, সেই বিষয়ে তীব্র সমালোচনা করা হয়।
আর এই বিষয়টি ভালো ভাবে নেনটি ট্রুডো। প্রসঙ্গত দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিধি বাড়ানো বাড়ানো এবং বাণিজ্যিক সম্পর্ককে আরও সুদৃঢ় করতে একটি পদক্ষেপ করা হয়। সেটি ২০১০ সালে। তারপর সেই প্রক্রিয়ায় বেশ কিছুটা গতি কমে যায়। তারপর গত দু তিন বছর ধরে, সেই চুক্তি নিয়ে ফের জোরদার আলোচনা চলতে থাকে। কিন্তু জি-২০ সামিটে সেই প্রক্রিয়া যেখানে আরও জোরালো হওয়ার সম্ভাবনা ছিল, তা ফের একবার ধাক্কা খেল।
শাঁখের করাতে ট্রুডো
এখানেই উঠে আসে প্রশ্ন, খালিস্তানি ইস্যুতে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো এতোটা শাঁখের করাতে কেন? বিদেশমন্ত্রক সূত্রের খবর, কানাডায় একটা বড় প্রভাব রয়েছে পাঞ্জাবিদের। বলা ভালো খালিস্তানপন্থিদের। হিসেব কষলে দেখা যাবে, কানাডায় সংসদে জাস্টিন ট্রুডোর লিবারেল পার্টির সংখ্যা গরিষ্ঠতা নেই। এবং তাঁরা টিকে রয়েছে নিউ ডেমক্রোটিক পার্টির দৌতলে।
এই নিউ ডেমক্রোটিক পার্টির ২৪জন সাংসদ রয়েছে। এই দলের প্রধান হলেন জগমিত সিং। তিনি একজন খালিস্তানপন্থী নেতা হিসেবে পরিচিত। ফলত, কানাডায় খালিস্তানিরা ভারত বিরোধী কোনওরকম কর্মকাণ্ড করলে, তা মত প্রকাশের স্বাধীনতা বলে এড়িয়ে যেতে বাধ্য হন সংখ্যালঘু সরকারের প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো।
ভুল নাকি অহঙ্কারের সিদ্ধান্ত!
প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভুল নাকি একরোখা মনোভাবের জেরেই, কানাডার সঙ্গে মুক্তি বাণিজ্যের তরী তীরে এসে ডুবে গেল? বিশেষজ্ঞমহলের মত, খালিস্তানি বিষয়টি নিয়ে একান্তে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে আলোচনা করতেই পারতেন প্রধানমন্ত্রী। দেশের উন্নয়নে তিনি যে স্বপ্ন দেখছেন, তাতে আরও এক কদম এগনো যেত। পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৯ সালে হাজার কোটি মার্কিন ডলারের বাণিজ্য হয়েছে।
কোভিড পর্বে ৮৭০ কোটি ডলারে নেমে আসে। তবে এই জি ২০ সম্মেলনের মঞ্চ থেকে সেই মাত্রা আরও বাড়ানো যেত বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ পরিবহণ পরিকাঠামো, ক্লিন এনার্জি প্রযুক্তি, অপ্রচলিত শক্তি, শিক্ষা, মানব সম্পদ সম্পর্কিত একাধিক ক্ষেত্রে বাড়তি সুবিধা পেত ভারত। কিন্তু খালিস্তানি ইস্যুই মূল অন্তরায় হয়ে উঠল স্বপ্নের বিকাশে