রাজ্যের খবর

অভিনব উদ্যোগ, বিনামূল্যের পাঠশালা খুলে নজির গড়লেন হুগলির পরিযায়ী শ্রমিক

Migrant workers of Hooghly set a precedent by opening a novel initiative, free classrooms

Truth Of  Bengal: কম শিক্ষিত হয়ে ভিন রাজ্যে গিয়ে সোনার কাজ করেও যে সমাজের আর পাঁচটা মানুষের মতো মাথা উঁচু করে দাঁড়ানো যায় তা আরো একবার প্রমান করল হুগলীর গোঘাটের এক সোনার কারিগর বিজয় দে। কিছু মানুষ হেরে গিয়েও যে জিততে শিখিয়ে দেয় তা আরো একবার প্রমান করল সে। দুর্দশা ও কষ্টের কারণে নিজের সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনা যাতে বর্তমানে এলাকার কোনো ছেলে মেয়ের সাথে না ঘটে তার জন্য প্রানপন চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সোনার কাজের কারিগর ওই যুবক। যেখানে ভিন রাজ্যে গিয়ে সোনার কাজ করা যুবকদের দেখলে তার পেছনে বাঁকা চোখে তার সমালোচনা করতে ছাড়েনা অনেকে।

সেখানে হুগলীর গোঘাটের শ্যামবাজার পঞ্চায়েতের বারুইপাড়া এলাকার বাসিন্দা অর্থাৎ সোনার কাজ করা যুবক বিজয় দে কে দেখলে গর্ব করেন এলাকার মানুষ। কারণ সে যে এলাকায় বহু ছেলে মেয়ের পড়াশোনা দায়িত্ব তুলে নিয়েছেন নিজের কাঁধে। জানা যায়,বিজয় দে মাত্র ৫ বছর বয়সে বাবাকে হারায়। পরে মা কে হারিয়ে একপ্রকার অনাথ হয়ে পরে সে ও তাঁর ভাই। পড়াশোনা করার প্রবল ইচ্ছে থাকলেও বাবা মাকে হারিয়ে তা আর সম্ভব হয়নি। তাই দ্বিতীয় শ্রেণীতেই পড়াশুনা ছেড়ে রোজগার করতে নামে বিজয়। প্রথমে দিনমজুর খেটে দুমুঠো অন্ন জোগাড় করলেও পরে প্রতিবেশীদের পরামর্শে মাত্র ১১ বছর বয়সে মুম্বাই পারি দেয় বিজয়।

সেখানে সোনার কাজ শিখে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে,পরে ভাইকেও নিজের কাজে যুক্ত করে। শুরু করে নিজেদের ব্যবসা, এর পর আসে সেই অভিশপ্ত ২০২০ সালের করোনা কাল। মুম্বাই থেকে বাড়ি ফিরে নিজের চোখে দেখে গ্রামের দুর্দশার চিত্র। বন্ধুদের সাথে কথা বলে সে জানতে পারে গ্রামের ছাত্র ছাত্রীদের পড়াশুনার করুন অবস্থার কথা। অধিকাংশ পড়ুয়া টাকার অভাবে স্কুলছুট হচ্ছে। করণাকালে সে পরিস্থিতি আরও প্রবল হয়ে ওঠে। নিজের জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনার কথা ভেবে সে সমস্ত পড়ুয়াদের পড়াশোনা করানোর সিদ্ধান্ত নেই বিজয়। প্রথমে ৩ জন শিক্ষক নিয়োগ করে দুঃস্থ পরিবারের পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেনীর ছাত্র ছাত্রীদের বিনামূল্যে পড়ানোর জন্য একটি কোচিং সেন্টার খোলে সে। ২০২১ সালে ছাত্র ছাত্রী সংখ্যা পৌঁছায় ৮০ জন। তাঁদের নিয়ে শুরু করে স্বামীজি কোচিং সেন্টার। আর সেটাও বিনামূল্যে।

প্রথম দিকে সেভাবে মানুষের সাড়া না পেলেও সেখানে পড়াশোনা করা ছাত্র ছাত্রীদের ক্রমাগত নজরকারা সাফল্য দেখে অভিভাবকরা নিজেরাই সেই কোচিংএ ভর্তির জন্য নিজেদের ছেলে মেয়েদের নিয়ে আসেন। একেবারে প্রথম থেকে পড়ুয়াদের সঠিক পড়াশুনা না করানোর জন্য অনেক সমস্যায় পরতেন সেখানের শিক্ষকরা। তাই সেখানেই প্রথম শ্রেণী থেকে ছাত্র ছাত্রীদের পড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন তারা। এখন সেই কোচিং সেন্টারে প্রথম শ্রেণী থেকে দশম শ্রেনী পর্যন্ত পড়ানো হয়। সপ্তাহে একদিন অঙ্কন ক্লাসও হয়। অঙ্কন সহ মোট ৫ জন শিক্ষক ও ১ জন শিক্ষিকা আছেন সেই কোচিং সেন্টারে।
আর যাবতীয় খরচ বহন করেন সেই সোনার কারিগর বিজয় দে। বর্তমানে প্রায় ২০০ জন ছাত্র ছাত্রী এখানে ফ্রিতে কোচিং নেয় সেখানে। ভবিষ্যতে আরও বড় কিছু পরিকল্পনা আছে বলে জানাই বিজয়। তার এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন গ্রামের মানুষ। শুধু তাই নয় বিজয়ের এই উদ্যোগের কান্ডারী হতে পেরে নিজেদেরকে ধন্য মনে করেন কোচিং সেন্টারের শিক্ষক শিক্ষিকারাও।

Related Articles