বিজেপির অভ্যন্তরীণ রিপোর্টে কপালে ভাঁজ, একাধিক আসন হাতছাড়া হওয়ার ইঙ্গিত
BJP's internal report

The Truth of Bengal,Bikas Ghose: ২০১৯ এর লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গ থেকে ১৮ টি আসনে নির্বাচিত হয়েছিল বিজেপির প্রার্থীরা। পশ্চিমবঙ্গে লোকসভার মোট আসন ৪২। প্রায় অর্ধেকের কাছাকাছি আসনে জয়ী হয়েছিল পদ্ম-প্রার্থীরা। ভারতের রাজনীতিতে বিজেপির পশ্চিমবঙ্গের এই ফলাফল ছিল সর্বকালীন রেকর্ড। ২০১৯ এর লোকসভা নির্বাচনের এই ফলাফলের পর গোটা রাজ্যে বিজেপির নতুন উন্মাদনা তৈরি হয়েছিল। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে বিজেপিতে যোগদানের সিরিক পড়েছিল। তৃণমূল কংগ্রেসসহ একাধিক রাজনৈতিক দল থেকে বহু নেতা যোগ দিয়েছিলেন বিজেপিতে।২০২১ এর বিধানসভা নির্বাচনে ২০০-র বেশি আসন টার্গেট করেছিলেন অমিত শাহরা। বিজেপির গোটা ভারত প্রায় পশ্চিমবঙ্গের মাটিতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে সব শক্তি প্রয়োগ করেছিল। বাংলার বিজেপি নেতা কর্মীরা এক প্রকার ধরে নিয়েছিল বঙ্গে পরিবর্তন আসছে। না, বিজেপির স্বপ্ন সফল হয়নি। বিজেপির বিধায়ক সংখ্যা তিন অঙ্কে পৌঁছায়নি। তবে বিরোধী দলের স্বীকৃতি পেয়েছে।সামনে লোকসভা নির্বাচন। ২০২৪ সালের প্রথম দিকেই এই নির্বাচন হওয়ার কথা। মার্চ কিংবা এপ্রিল মাসে দেশ জুড়ে লোকসভা নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা। নির্বাচন যাতে এগিয়ে আসছে বাংলায় রাজনৈতিক তৎপরতা বাড়ছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের।
তবে যে উন্মাদনা একসময় বিজেপির মধ্যে দেখা যেত তার অনেকটাই ভাঁটা পড়েছে। গত লোকসভা নির্বাচনে বিরাট সাফল্যের পর দলের বিভিন্ন স্তরে ছিল খুশির মেজাজ। দলীয় দপ্তর গমগম করত কর্মী সমর্থকদের ভিড়ে। সেই ছবিটা আর দেখা যায় না। তার মধ্যে দলীয় কোন্দল মাথা চাড়া দিয়েছে। কলকাতা থেকে শুরু করে বিভিন্ন জেলায় গোষ্ঠীদ্বন্দ প্রকাশ্যে আসছে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে পর্যন্ত ঘরে তালা বন্দী করে রাখছেন দলেরই একাংশ। এক সময় কেন্দ্রীয় শীর্ষ নেতারা যেভাবে বাংলার মাটিতে দাপিয়ে বেড়াতেন তাদেরও আর তেমন দেখা মেলে না। বিধানসভা ভোটে ভরাডুবির পর কৈলাস বিজয় বর্গীয়রা একপ্রকার পালিয়ে গিয়েছেন।রাজ্যের শীর্ষ নেতারা একাধিক শিবিরে বিভক্ত। কেউ বিরোধী দলনেতার শুভেন্দু অধিকারীর অনুগামী কেউবা রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের অনুগামী। আবার কেউ প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি তথা সাংসদ দিলীপ ঘোষের অনুগামী। স্থানীয় স্তরেও এরকম বিভাজন প্রকাশ্যে। বাংলার এই দৈন্যদশা দেখে ক্ষুব্ধ দলের কেন্দ্রীয় নেতারা। বহুবার বাংলার নেতাদের একসাথে লড়াইয়ের বার্তা দিয়েছেন তাঁরা। কিন্তু যে কী সেই। ছবিটা তেমন বদলাইনি।দলের এই ছন্নছাড়া পরিস্থিতির মাঝে সামনে দরজায় কড়া নাড়ছে লোকসভা নির্বাচন। এর রাজ্য থেকে কটা আসন পেতে পারে বিজেপি? এই নিয়ে জোর চর্চা চলছে। বিজেপি অভ্যন্তরীণ জনমত সমীক্ষা করেছে বলে সূত্রের খবর। সেই সমীক্ষায় যে রিপোর্ট এসেছে তা যথেষ্টই কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলার মত। সূত্রের খবর, ওই সমীক্ষার রিপোর্টে উঠে এসেছে গত লোকসভা নির্বাচনে যে কয়টি আসন এরাজ্য থেকে বিজেপি পেয়েছিল তার অর্ধেকও এবার নাও মিলতে পারে। গত লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির আসন সংখ্যা ছিল ১৮।
অর্থাৎ বিজেপির অভ্যন্তরীণ সমীক্ষা বলছে এবার পশ্চিমবঙ্গ থেকে দুই অঙ্কের আসন জিততে পারবে না বিজেপি। দশের নিচেই থমকে যেতে পারে তারা। এরা জিত বিজেপির একাংশের নেতার ধারণা সংখ্যাটা ৩-৪ হলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকে যেভাবে সংগঠনে ভাঙ্গন ধরতে শুরু করেছে তাতে খুব বেশি আশা করা যাচ্ছে না। গত বিধানসভা নির্বাচনের পর এ রাজ্যে যতগুলি উপনির্বাচন হয়েছে সবকটিতেই বিজেপি হেরেছে। বিজেপি তাদের জেতা আসন হাতছাড়া করেছে। শান্তিপুর থেকে শুরু করে দিনহাটা বা ধূপগুড়ি – পরপর বিপর্যয় ঘটেছে। আসানসোল লোকসভা কেন্দ্রেও হয়েছে বিজেপির হার। যেখানে দিল্লির নেতারা গতবারের থেকেও বেশি আসনের যে তার টার্গেট বেঁধে দিয়েছে সেখানে সমীক্ষার রিপোর্ট রিপোর্টে যে ছবিটা উঠে এসেছে তা ভয়ংকর। এমন কোন লোকসভা কেন্দ্র নেই যেখানে নিশ্চিত জিতবে এমন বলার মত। নদিয়ার রানাঘাট, উত্তর চব্বিশ পরগনার বনগাঁ বা উত্তরবঙ্গের বালুরঘাট, রায়গঞ্জ – এক সময় বিজেপি দুর্গ হয়ে ওঠা এই কেন্দ্রগুলিতেও নিশ্চিত জয়ের আশা নেই বলেই রিপোর্টে উঠে এসেছে। পরিস্থিতি কোন দিকে গড়ায় সেদিকে নজর রাখছে সব মহল।