দিনভর নেতিবাচক খবর দেখছেন সোশ্যাল মিডিয়ায়?, জানেন শরীরের ওপর কী প্রভাব পড়ছে?
Seeing negative news on social media all day

The Truth of bengal,Mou Basu: টেকস্যাভি আধুনিক কেতাদুরস্ত স্মার্ট হতে গেলে আপডেটেড থাকা জরুরি। চারিপাশে কী হচ্ছে? দেশবিদেশের টুকিটাকি খবর নখদর্পনে রাখতে ভালোবাসেন অনেকেই। সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘুরে ফিরে খবর দেখতে আপডেটেড থাকতে ভালোবাসেন অনেকেই। আপডেটেড থাকা, খবরের মধ্যে থাকা জরুরি নিশ্চয়ই। কিন্তু ভালো খবরের ভিড়ে অনেক খারাপ খবরও নজরে পড়ে যায়। সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকেই নেতিবাচক খবর দিনভর দেখে চলেন। আপনিও আছেন নাকি এদের দলে? জানেন, দীর্ঘ সময় ধরে নেতিবাচক খবর দিনভর দেখলে তার সরাসরি কুপ্রভাব যেমন মনের ওপর পড়ে তেমনই পড়ে শরীরের ওপরও?
নিরন্তর নেতিবাচক খবর দিনভর দেখলে তার জন্য যেমন মনে রাগ, ফ্রাস্ট্রেশন তৈরি হয় তেমনই দুঃখ, ভয়ও তৈরি হয়। খবর নিয়ে আপডেট থাকা যেমন জরুরি তেমনই আমাদের মন ও আবেগের ভারসাম্য বজায় রাখাও দরকার। “Caught in a Dangerous World: Problematic News Consumption and Its Relationship to Mental and Physical Iii-Being” নামক জার্নালে প্রকাশিত গবেষণায় দেখা গেছে, নিরন্তর নেতিবাচক খবর দেখা ১৬% ব্যক্তি শারীরিক ও মানসিক অসুস্থতার শিকার হয়েছেন।
সোশ্যাল মিডিয়া ও সংবাদ মাধ্যমে নিরন্তর দিনভর নেতিবাচক খবর দেখাকে ইংরেজিতে বলে Doomschrolling। এই বদভ্যাস এতটাই গাঢ় ভাবে একেক জনের মনে প্রভাব ফেলে যে সারাদিন তো বটেই এমনকি না ঘুমিয়ে রাতেও অনেকে সংবাদ মাধ্যমে বা সোশ্যাল মিডিয়ায় নেতিবাচক খবর দেখে চলে। নেতিবাচক খবর দেখার আসক্তির কুপ্রভাব পড়ে মনের ওপর।
আসুন দেখে নিই কী কী খারাপ প্রভাব পড়ে
১) শরীরে টক্সিন পদার্থ ঢুকলে যেমন শরীরে রোগ বাসা বাঁধে। শরীর ফুলে ওঠে তেমনই নিরন্তর নেতিবাচক খবর দেখলেও শরীর ফুলে ওঠে। University of Buffalo এর গবেষকরা নিরন্তর নেতিবাচক খবর ও শরীর ফুলে ওঠার মধ্যে গবেষণা চালান। Medical Internet Research নামক জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে গবেষণাপত্র। ১৭১ জন যুবক যুবতীর ওপর গবেষণা চালানো হয়। এঁদের ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, স্ন্যাপচ্যাট, এক্স হ্যান্ডেল ব্যবহারের ওপর নজর রাখেন গবেষকরা। রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে ফোলা ভাব দেখা হয়। নির্দিষ্ট অ্যাপ ব্যবহার করা হয়।
২) মানসিক অবসাদ, উদ্বেগ যেমন বৃদ্ধি পায় তেমনই নিরাশায় ডুবে যান এমন ব্যক্তি। বৃদ্ধি পায় মনের মধ্যে ভয়, রাগ। জীবন সম্পর্কে সার্বিক ভাবে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়।
৩) দিনভর নেতিবাচক খবর দেখলে স্ট্রেস হরমোন কর্টিসল ও অ্যাড্রেলিন হরমোনের নিঃসরণ হয়। লাগাতার খারাপ নেতিবাচক খবর দেখলে মস্তিষ্কের ইমোশনাল সেন্টার বলে পরিচিত amygdala ওভারস্টিমিউলেট হয়ে ওঠে। এর ফলে আবেগের বিস্ফোরণ হয়। সিদ্ধান্ত নিতে সমস্যা হয়। যুক্তিবাদী চিন্তাভাবনা লোপ পায়।
৪) লাগাতার খারাপ নেতিবাচক খবর দেখলে বাস্তব থেকে আমাদের চিন্তাভাবনা, মননকে দূরে ঠেলে দেয়। সহমর্মিতা, সমবেদনা কমে যায়।
নেতিবাচক খবর যাতে মনের ওপর খারাপ প্রভাব না ফেলতে পারে তার জন্য কী করবেন?
১) সারাক্ষণ সোশ্যাল মিডিয়ায় খারাপ খবর দেখবেন না। আসক্তি নিজেই কাটিয়ে উঠতে হবে আপনাকে। কী দেখবেন আর কতটা দেখবেন, ভারসাম্য বজায় রাখুন।
২) কৃতজ্ঞতা স্বীকার করতে শিখুন। এতে ডোপামিন হরমোনের নিঃসরণ হয়। কমে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা।
৩) পরিবার পরিজনদের নিয়ে কোয়ালিটি সময় কাটান। মানসিক উদ্বেগ, যন্ত্রণা কমবে। সুরক্ষিত বোধ তৈরি হবে। ইতিবাচক মনোভাবে অক্সিটোসিন হরমোনের নিঃসরণ হয়।
৪) ঘুমের আগে ডিজিটাল ডিটক্স করুন। ঘুমোতে যাওয়ার আগে রিল্যাক্স করুন। কম্পিউটার, ল্যাপটপ বা স্মার্টফোনে কোনো খবর দেখবেন না। সোশ্যাল মিডিয়া দেখবেন না। এতে ঘুম ভালো হবে।
৫) স্ক্রিন টাইম থেকে নিয়মিত ২০-৩০ মিনিট ব্রেক করুন। চোখ আর মনকে রেস্ট দিন। সোশ্যাল মিডিয়ায় কী দেখবেন তার কনটেন্ট ভেবেচিন্তে পছন্দ করুন।