ভূতচতুর্দশীর সঙ্গে কোন কাহিনী জড়িয়ে রয়েছে জানেন?
Do you know any stories related to Bhuta Chaturdashi?

The Truth Of Bengal, Mou Basu : আলোর উৎসবের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে রামের অযোধ্যায় ফেরার গল্প। রামায়ণ মতে দশেরায় রাবনকে বধ করে সীতা উদ্ধারের পর অযোধ্যায় ফেরেন রাম, লক্ষ্মণ ও সীতা। ১৪ বছরের বনবাস কাটিয়ে যখন ঘরের ছেলে ঘরে ফিরলেন তখন অযোধ্যা সেজে উঠল আলোয় আলোয়। দীপমালার সাজে সে দিন অযোধ্যায় পালিত হয়েছিল দীপাবলি। বারো বছর বনবাস ও এক বছর অজ্ঞাতবাসের পর দীপাবলিতেই হস্তিনাপুরে ফিরে এসেছিলেন পাণ্ডবরা। দীপাবলীর সঙ্গে বিনি সুতোর ডোরে ধরা দিয়েছে সমুদ্র মন্থনের কাহিনিও। দীপাবলির ঠিক আগে স্বর্গরাজ্যে তৈরি হল প্রদীপ, পাকানো হল সলতে, তেলের সোহাগে ভরিয়ে তুলে ঠিক যখন প্রদীপ জ্বালানো হবে তখন আত্মগর্বে গর্বিত হয়ে পড়লেন ইন্দ্র। তাঁর গলায় থাকা মহর্ষি দুর্বাসার দেওয়া দিব্যমাল্য ছুড়ে ফেললেন বাহন ঐরাবতের কণ্ঠে। ঐরাবত নিরীহ, সে কিছু না বুঝেই মালাটি ছিঁড়ে কুঁটিকুঁটি করল। অপমানে ক্রোধে অন্ধ মহর্ষি দুর্বাসা সঙ্গে সঙ্গে স্বর্গরাজকে অভিশাপ দিলেন । ইন্দ্র তাঁর ভুল বুঝতে পারলেন। শুরু হল স্বর্গের শ্রী ফেরানোর জন্য সমুদ্র মন্থন। মন্থনের এক একদিনে এক একটি জিনিস উঠে আসতে লাগল। পঞ্চম দিনে উঠলেন শ্রীলক্ষ্মী। শুরু হল আলোর উৎসব। দীপাবলিতে শ্রীবিষ্ণুর গলায় বরমাল্য পরিয়ে দেন দেবী। হিন্দু ধর্ম ছাড়া অন্য ধর্মেও দীপাবলির মাহাত্ম্য রয়েছে। জৈন ধর্মে বলে দীপাবলিতেই নির্বাণ লাভ করেছিলেন মহাবীর।
ঊনবিংশ শতাব্দীর সংস্কৃত ভাষার বিখ্যাত অভিধান শব্দকল্পদ্রুমে বলা হচ্ছে শিবই কাল বা কালবোধক। তাঁর পত্নী কালী। মা কালী মা দুর্গা বা পার্বতীর সংহারী রূপ। তিনি সময়ের, পরিবর্তনের, শক্তির, সংহারের দেবী। তিনি কৃষ্ণবর্ণা বা মেঘবর্ণা এবং ভয়ংকরা।কালীর অন্য নাম শ্যামা বা আদ্যাশক্তি।বাঙালি হিন্দু সমাজে কালীর মাতৃরূপের পুজো বিশেষ জনপ্রিয়। দুষ্টের দমন আর শিষ্টের পালনের জন্যেই দেবী কালীর পুজো করা হয়। দীপান্বিতা কালীপুজোর দিনটিতে ভারতের অন্যান্য জায়গায় দীপাবলি উৎসব পালিত হয়। সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে এই দিন লক্ষ্মীপুজো অনুষ্ঠিত হলেও বাঙালি, অসমীয়া ও ওড়িয়ারা এই দিন কালীপুজো করে থাকেন| ভূত অর্থাৎ অতীত, এবং চতুর্দশী অর্থাৎ কৃষ্ণপক্ষের চোদ্দ তম দিন। পিতৃ এবং মাতৃকুলের সাত পুরুষের উদ্দেশ্যে বাতি প্রদান। পুরাণ মতে, এইদিন মহাকালী ধীরে ধীরে জাগ্রত হতে শুরু করেন। অশুভ শক্তির বিনাশের পূর্বক্ষণ এই ভূত চতুর্দশী। পুরাণ রীতি অনুযায়ী, ভূত চতুর্দশীর রাতে শিবভক্ত রাজা বলি ও তাঁর অনুচরেরা মর্ত্যে পুজো নিতে আসেন। চতুর্দশী তিথির ভরা অমাবস্যার অন্ধকারে রাজা বলির অনুচরেরা যাতে পথ ভুলে বাড়িতে ঢুকে না পড়েন, তার জন্য পথ দেখানোর উদ্দেশে এই প্রদীপ জ্বালানো হত। আবার অন্য একটি প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, পিতৃপক্ষের সময় পিতৃপুরুষদের মর্ত্যে আগমন হয়। তারপর এই চতুর্দশী তিথিতেই শুরু হয় তাদের ফেরার পালা। সেই সময় অন্ধকারে পথ দেখানোর জন্য ১৪ প্রদীপ জ্বালানো হয়।
পুরাণ মতে, ভূত চতুর্দশী (Bhoot Chaturdashi)-তে চোদ্দ শাক খাওয়ার রীতি প্রচলন করেন ঋক্ বেদের বাস্কল বা শাক দ্বীপি ব্রাহ্মণরা। তবে কথিত আছে, এক ব্রাহ্মণ ও তাঁর স্ত্রী নিজেদের বাড়ি খুব নোংরা করে রাখতেন। পরিষ্কারের কোনো বালাই ছিল না। ফলে ক্রমশ নোংরা জমতে থাকে বাড়িতে। এর ফলে বাড়িতে আগমন হতে থাকে ভূতের। একদিন ওই ব্রাহ্মণের নজরে পড়ে সেই ভূতেদের শোরগোলে। এর পরই তাঁর টনক নড়ে। বাড়ি-ঘর পরিষ্কার শুরু করেন তিনি। চোদ্দ ধরনের গাছের পাতা দিয়ে পুরো বাড়িতে গঙ্গার জল ছেটানো হয়। এর পর থেকেই চোদ্দ শাক খাওয়ার নিয়ম শুরু হয়েছে। তাই প্রকৃতি থেকে সংগ্রহ করা চোদ্দ রকমের শাক মৃত চোদ্দ পুরুষের উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করা হয়।
FREE ACCESS