অফবিট

এসো মা লক্ষ্মী বসো ঘরে, বাংলার নিজস্ব শিল্প আল্পনায় মা লক্ষ্মীকে আহ্বান

Lakshmi pujo 2023

The Truth of Bengal,Mou Basu: এসো মা লক্ষ্মী বসো ঘরে আমার এ ঘরে থাকো আলো করে…এই আহ্বান শুধু বাঙালির নয়, বাঙালি-অবাঙালি নির্বিশেষে আপামর ভারতবাসীর মনের আকুতি, প্রাণের ডাক। শরৎকালে দেবী মহামায়া দুর্গার পুজোর পরেই পূর্ণিমায় বাংলার ঘরে ঘরে হয় কোজাগরী লক্ষ্মীপুজো।আল্পনা আঁকা বাংলার নিজস্ব ঐতিহ্যবাহী লোকশিল্প। সাধারণত আতপ চাল বেটে বা গুঁড়ো করে তা দিয়ে পিটুলি তৈরি করে আল্পনা আঁকা হয়। এই চালও সম্পদ, সমৃদ্ধির প্রতীক। তাই আল্পনা এঁকে তার মাধ্যমে মা লক্ষ্মীর কৃপা প্রার্থনা করা হয়।লক্ষ্মীপুজোয় যে আল্পনা আঁকা হয় তাতে নানা রকম প্রতীক যেমন ধানের মারাই, পুকুর, মুকুট, বালা, হার, ইত্যাদী আঁকা হয়। এসব প্রতীকের গুরুত্ব অপরিসীম। লক্ষ্মীপুজোয় দরজা থেকে পুজো যেখানে হচ্ছে সেখান পর্যন্ত ঘরের দিকে মুখ করা জোড়া পায়ের আল্পনা দেখা যায়।

চালের গুঁড়ো জলে ভিজিয়ে তা দিয়ে পিটুলির গোলা তৈরি করে একটুকরো কাপড়ের সাহায্যে যে পিটুলির গোলা তৈরি করে আল্পনা দেওয়া হয় তা শুধু মাঙ্গলিক পরিবেশের অলঙ্করণ নয়। এর অন্তর্নিহিত তাৎপর্য রয়েছে। দরজা থেকে ঘরের অভিমুখে যে আল্পনা আঁকা হয় তাতে জোড়া পায়ের ছাপের মানে এই ছাপের ওপর দিয়ে সচলা মালক্ষ্মী ঘরে ঢুকে অচলা হয়েই থেকে যাবেন। এছাড়া আল্পনায় ধানের মারাই, পুকুর, গয়না আঁকা হয় তা শুধু প্রাচুর্যের প্রতীক নয় সদিচ্ছারও প্রকাশ ঘটে। আবার আল্পনায় রয়েছে নিজস্ব মঙ্গলদায়ী দিকও। পায়ের ছাপ মানে শুভাগমন। শিল্পাচার্য অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরও তাঁর ‘বাংলার ব্রতকথা’-য় লিখেছেন, ‘আলপনাগুলি থেকে পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে মানুষের অন্তরের কামনার সঙ্গে তার হাতের কাজগুলির বেশ একটি যোগ রয়েছে।

‘সৌভাগ্য, সম্পদ ও মঙ্গলের দেবী লক্ষ্মীর পুজোর উপাচারে ধান, চিঁড়ে, মুড়ি, নারকেল, চাল, ডাব, ফুল, ফল, পাতা, ঘট, পট, আল্পনা প্রভৃতি দেখা যায়। বিয়ে হোক কিংবা পুজো, যে কোনো মাঙ্গলিক অনুষ্ঠানেই আঁকা হয় আল্পনা। আল্পনার অনেক রকমফের আছে। সাধারণ ভাবে জনপ্রিয় রঙ্গোলিও আল্পনারই এক রকম। তবে বাঙালিদের আঁকা আল্পনার একটা নিজস্বতা আছে। আল্পনা কথাটি এসেছে সংস্কৃত ‘আলিম্পনা’ থেকে যার মানে প্রলেপ দেওয়া। কথায় বলে আর্যদেরও সময়ের আগে থাকতে আল্পনার প্রচলন। আল্পনা আঁকায় প্রচণ্ড দক্ষতার প্রয়োজন হয়। মনে করা হয়, কৃষক সমাজই অশুভ শক্তি বিনাশ করার তাগিদে আল্পনা আঁকার প্রচলন করে। সাদা রঙ শুভত্বের প্রতীক, তাই রঙ্গোলিতে বহু রঙের ব্যবহার দেখা গেলেও আল্পনায় একমাত্র সাদা রঙই থাকে।

Free Access