লাইফস্টাইলশিক্ষা
Trending

বাড়ির ভেতরের দূষণ রুখতে কী ধরনের ইন্ডোর প্ল্যান্টস রাখবেন?

Truth Of Bengal Desk: প্রতি বছর ক্যানসার, স্ট্রোক, সিওপিডির মতো ফুসফুসের রোগ, অ্যাজমা, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। ঘরের মধ্যের ও বাইরের দূষণই মূলত দায়ী এসব ক্ষতিকারক রোগের জন্য। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-র একটা রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রতি বছর ঘরের ভেতরের বায়ুদূষণের কারণে গোটা বিশ্বে ৪৩ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। ইসকেমিক হার্ট ডিজিজ, সিওপিডি, ফুসফুসের ক্যানসারের মতো নন-কমিউনিকেবল রোগের জন্য অকালেই বছরে ৩৮ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। বাড়ির ভেতরের বায়ুদূষণই মূলত দায়ী এসব রোগের জন্য। ঘরের ভেতরের বায়ুদূষণ আটকাতে বিশেষ ভাবে কার্যকরী বিভিন্ন রকমের ইন্ডোর প্ল্যান্টস।

দেখে নিই কী কী ধরনের ইন্ডোর প্লান্টস বাড়িতে রাখা যায়-

★ অ্যালোভেরা: ড্রয়িং রুমে বা জানলার পাশে টবেতে রেখে দিন অ্যালোভেরা গাছ। পরিচর্যার তেমন দরকার হয় না। জল কম লাগে তবে বেড়ে উঠতে সূর্যের আলো দরকার। শুধু দূষণই কমায় না কাটা, ছেঁড়া, জ্বালা, পোড়ার-সহ ত্বকের যাবতীয় সমস্যা নিরাময় করতে সক্ষম ঔষধি গাছ অ্যালোভেরা। এছাড়া কার্পেট ও পার্টিক্যাল বোর্ডে থাকা ক্ষতিকারক বেঞ্জিন ও ফরমালডিহাইড ফিল্টার করতে পারে অ্যালোভেরা।
★ স্নেক প্ল্যান্ট: আকার ও টেক্সচারের জন্য একে ‘মাদার-ইন-ল’ বা শাশুড়ির জিভ বলেও ডাকা হয়। পরিচর্যা করতে ঝক্কি পোয়াতে হয় না। শুধু ঠিক পরিমাণে জল দিতে হয়। কষ্ট সহিষ্ণু এই গাছ প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও বেড়ে উঠতে পারে। বাতাসে থাকা ক্ষতিকারক বেঞ্জিন, ফরমালডিহাইড, জাইলিন, টোলুইন, ট্রাইক্লোরোইথলিন শুষে নিতে সক্ষম স্নেক প্ল্যান্ট। কার্বন ডাই-অক্সাইড শুষে নিয়ে রাতে অক্সিজেন ছাড়ে স্নেক প্ল্যান্ট। তাই বাড়িতে এই গাছ সরাসরি অক্সিজেনের জোগান বাড়বে।
★স্পাইডার প্ল্যান্ট: স্পাইডার প্ল্যান্টকে এয়ার প্ল্যান্ট বলেও ডাকা হয়। খুব সহজে ও তাড়াতাড়ি বেড়ে ওঠে। ডিটারজেন্ট, রঙ, ফার্নিচার ওয়াক্স, থিনার থেকে আসা দূষণ সৃষ্টিকারী কার্বন মনোক্সাইড, বেঞ্জিন ও ফরমালডিহাইডকে শুষে নিয়ে বাতাস বিশুদ্ধ করে স্পাইডার প্ল্যান্ট। অ্যালোভেরার মতো স্পাইডার প্ল্যান্টেরও এক টুকরো পাতা কেটে নিয়ে টবে পুঁতে দিন। দেখুন কামাল, কীভাবে আপনাআপনি বেড়ে উঠছে। সরাসরি সূর্যের আলো বা প্রচণ্ড ঠান্ডা আবহাওয়ায় রাখার প্রয়োজন নেই। আলো বাতাস চলাচল করে এমন উজ্জ্বল খোলামেলা পরিবেশে রাখলেই হবে। ঘরের মধ্যে কিংবা অফিস করিডরে রাখলে খুব সহজেই বেড়ে উঠবে স্পাইডার প্ল্যান্ট। প্রায় ২০০ রকমের প্রজাতি পাওয়া যায়।
★ব্যাম্বু পাম: বেডসাইড টেবিলের পাশে টবে রেখে দিন ব্যাম্বু পাম বা রিড পাম। নিয়মিত রোজ জলও দিতে হয় না। সহজে বেড়ে ওঠা এই ইন্ডোর প্ল্যান্ট খুব ভালো ভাবে বেঞ্জিন, ফরমালডিহাইড, ট্রাইক্লোরোইথলিন, জাইলিন আর টোলুইন বাতাস থেকে শুষে নিতে সক্ষম।
★ওয়ারনেক ড্র্যাকেনিয়া: নাম শুনে ভিড়মি খাবেন না। রঙ, ডিটারজেন্ট পাউডার, ভার্নিশ, তেলের মতো রাসায়নিক থেকে দূষণ ঠেকাতে পারে এই গাছ। সরাসরি সূর্যের আলো দরকার হয় না বেড়ে উঠতে। ঘরের তাপমাত্রাতেই ১২ ফুট পর্যন্ত বেড়ে উঠতে পারে ওয়ারনেক ড্র্যাকেনিয়া। খুব বেশি জল এই গাছের জন্য বিষ।
★ইংলিশ আইভি: সুন্দর এই হাউজপ্ল্যান্ট বাড়ির মধ্যে থাকা দূষণ সৃষ্টিকারী রাসায়নিকের ক্ষতিকারক প্রভাব দূর করে। সরাসরি সূর্যের আলো বা ছায়ায় বেড়ে উঠতে পারে। ভালো ভাবে পরিচর্যা করলে বহু বছর বাঁচে।
★চাইনিজ এভারগ্রিন: খুব সহজ পরিচর্যায় বেড়ে ওঠে এই গাছ। কম থেকে মাঝারি আলোর দরকার। এক থেকে দু ফুট পর্যন্ত উচ্চতা হয়। বাড়ির বাতাস স্বাস্থ্যকর রাখতে এই গাছ খুবই উপকারী। তবে এই গাছ পোষ্য কুকুর-বেড়ালদের জন্য বিষাক্ত।
★জার্বেরা ডেইজি: সুন্দর এই ইন্ডোর প্ল্যান্টস শুধু বাতাস থেকে বেঞ্জিন শুষে নেয় না। বিশুদ্ধ বাতাসের পাশাপাশি ঘরের সৌন্দর্যও বাড়ায়। তবে ঠান্ডা নয় জার্বেরা ডেইজির বেড়ে উঠতে গরম আবহাওয়া (৭৫ ডিগ্রির বেশি) দরকার।
★ ড্রাগন ট্রি: সবুজ কিংবা বেগুনি পাতাওয়ালা এই বাহারি গাছ বাড়ির পাশাপাশি অফিসেও রাখা যায়। কম আলোতেও বেঁচে থাকতে পারে এই হাউজপ্ল্যান্ট।
★ পিস লিলি: ফরমালডিহাইড, কার্বন মনোক্সাইডের মতো ক্ষতিকারক গ্যাস শুষে নিতে পারে পিস লিলি। পরিচর্যা সহজে করা যায়। কখন জলের প্রয়োজন তা গাছের পাতা ঝিমিয়ে পড়া দেখে বোঝা যায়। পোষ্যদের জন্য হালকা ক্ষতিকারক। তাই এই গাছ ছুঁলে জল দিয়ে হাত ধুয়ে নিন।
★মাস কেন/কর্ন প্ল্যান্ট: বাতাস থেকে ক্ষতিকারক ফরমালডিহাইড শুষে নিতে পারে। সবুজ থেকে হলুদ পাতাওয়ালা এই গাছ ইন্ডোর প্ল্যান্ট হিসাবে খুবই জনপ্রিয়।
★রাবার ট্রি: রাবার ট্রির বড় বড় গ্লসি পাতা কার্বন ডাই-অক্সাইড শুষে নিয়ে অক্সিজেন ছাড়ে। এমন টবে রাখতে হবে যেখানে জল বেরিয়ে যেতে পারে খুব ভালো ভাবে। নিয়মিত জল দিতে হবে। বেড়ে ওঠার সময় তরল সার দেওয়া প্রয়োজন।
★লেমন বাটন ফার্ন: ঘরের মধ্যে থাকা বিষাক্ত গ্যাস শুষে নেয়। অন্য ফার্ন প্রজাতির মধ্যে এটি সবচেয়ে কষ্ট সহিষ্ণু। এক ফুট পর্যন্ত উচ্চতা হতে পারে। ছায়ায় বেড়ে উঠতে পারে।
★ গোল্ডেন পথোস: ডেভিলস আইভি নামেও ডাকা হয়। ঝোলানো বাস্কেট বা কন্টেনারে রেখে দিন এই ইন্ডোর প্ল্যান্ট। ঘরের মধ্যে থাকা বাতাসে ক্ষতিকারক বেঞ্জিন, ফরমালডিহাইড, টোলুইন, কার্বন মনোক্সাইড, জাইলিনের মতো গ্যাস শুষে নেয়।
★ফিলোডেনড্রন: বিভিন্ন আকার ও রঙের হয়। বিভিন্ন আকারের পাতা হয়। এই গাছের অন্য নাম জানাডু। ছায়ার পাশাপাশি মাঝারি ও সরাসরি সূর্যের আলোয় বেড়ে উঠতে পারে এই গাছ। কার্পেট ও ক্লিনিং প্রোডাক্টের মধ্যে থাকা বিষাক্ত ফরমালডিহাইড শুষে নেয় ফিলোডেনড্রন।
★পার্লর পাম: রানি ভিক্টোরিয়ার আমল থেকে জনপ্রিয় এই ইন্ডোর প্ল্যান্টস। অল্প পরিচর্যায় খুব সহজে বেড়ে উঠতে পারে এই গাছ। ঘর কিংবা অফিস রুমে রাখলে বেঞ্জিন, ট্রাইক্লোরোইথলিন শুষে নেয়।

Related Articles