পারস্পরিক সম্মতিতে বিবাহিত দুইজনের শারীরিক সম্পর্ক অপরাধ নয়: কলকাতা হাইকোর্ট
Sexual relations between two consensual marriages not a crime: Calcutta HC

Truth of Bengal: জলপাইগুড়ির সার্কিট বেঞ্চে কলকাতা হাইকোর্ট জানিয়েছে, দুইজন বিবাহিত মানুষ যদি পারস্পরিক সম্মতিতে শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন, তবে তা আইনত অপরাধ নয়, এমনকি যদিও তা বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক হয়। বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, যদি উভয়েই একে অপরের বিবাহিত অবস্থা সম্পর্কে সচেতন থাকেন এবং সম্পর্কটি সম্মতিতে হয়, তাহলে তা প্রতারণা বা জোরজবরদস্তি হিসেবে গণ্য করা যাবে না।
এই রায়টি আসে একটি মামলার শুনানিতে, যেখানে এক বিবাহিত মহিলা অভিযোগ করেন, এক বিবাহিত পুরুষ তাকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হন। তবে আদালত মনে করে, শুরু থেকেই সম্পর্কটি ছিল পারস্পরিক সম্মতিতে এবং তাই ওই পুরুষের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাটি খারিজ করে দেওয়া হয়।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ওই মহিলা ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪-এ ময়নাগুড়ি থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। তিনি ভারতীয় দণ্ডবিধির (ভারতীয় ন্যায় সংহিতা – BNS) ৬৯ নম্বর ধারা (প্রতারণামূলক উপায়ে যৌন সম্পর্ক) ও ৩৫১(২) ধারা (আসামি কর্তৃক হুমকি) অনুসারে অভিযোগ আনেন।
তদন্তে জানা যায়, ওই নারী ও অভিযুক্ত পুরুষ প্রায় দু’বছর ধরে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে ছিলেন। দু’জনেই জানতেন যে, তারা বিবাহিত। একপর্যায়ে মহিলার স্বামী সম্পর্কের কথা জেনে যান এবং তার সঙ্গে থাকা বন্ধ করেন। এরপর ওই মহিলা অভিযুক্তকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। কিন্তু পুরুষটি তাতে রাজি না হওয়ায়, তিনি প্রতারণার অভিযোগে মামলা দায়ের করেন।
বিচারপতি বিবাস রঞ্জন দে বলেন, “উভয় পক্ষ বিবাহিত এবং একে অপরের অবস্থান সম্পর্কে অবগত। এমন পরিস্থিতিতে দেওয়া সম্মতি জোরপূর্বক নয়, বরং পারস্পরিক আকর্ষণ থেকেই এসেছে বলেই ধরা হবে। এ ধরণের সম্পর্কে শারীরিক সম্মতি অপরাধ হিসেবে ধরা যাবে না।”
তিনি আরও জানান, এই মামলায় অপরাধপ্রবণ মনোভাব বা গোপন উদ্দেশ্যের কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তাই অভিযুক্ত পুরুষের বিরুদ্ধে ফৌজদারি কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়।
এই রায়টি সুপ্রিম কোর্টের পূর্ববর্তী মন্তব্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। ২০২৪ সালের এক রায়ে শীর্ষ আদালত বলেছিল, “দীর্ঘদিন ধরে চলা সম্মতিমূলক সম্পর্ক, ভেঙে যাওয়ার পর তা ফৌজদারি মামলার মাধ্যমে অপরাধ হিসেবে তুলে ধরা উদ্বেগজনক প্রবণতা।”
এই রায় আবারও প্রমাণ করে, সম্মতিতে হওয়া সম্পর্ককে অপরাধ হিসেবে বিচার না করে বাস্তব পরিস্থিতি বিবেচনা করাই আইনসম্মত ও ন্যায়নিষ্ঠ।