নাগরিক হত্যার দায়ে ইয়েমেনে মৃত্যুদণ্ডের মুখে ভারতীয় তরুণী
Indian woman faces death penalty in Yemen for killing citizen

Truth Of Bengal: নতুন বছরের প্রথম মাসেই কার্যকর হবে নিমিশা প্রিয়ার মৃত্যুদণ্ড। ভারতীয় এই নার্সের মৃত্যুদণ্ডের রায়ে সিলমোহর দিয়েছেন ইয়েমেনের প্রেসিডেন্ট রাশাদ আল-আলিমি। সাত বছর ইয়েমেনের জেলে বন্দি অভিবাসী তরুণীর জীবন সংশয় হয়ে যাওয়ায় বিচলিত দেশ। প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বিদেশ মন্ত্রকও। পাশাপাশি বিদেশ মন্ত্রক পরিবারকে আশ্বাসের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
জানা গিয়েছে, একমাসের মধ্যে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হবে নিমিশা প্রিয়ার৷ ইয়েমেনের নাগরিককে হত্যার দায়ে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন তিনি৷ সোমবার ইয়েমেনের প্রেসিডেন্ট রাশাদ আল-আলিমি এই মালয়ালী নার্সের মৃত্যুদণ্ডে অনুমোদন দিয়েছেন। এরপরেই মনে করা হচ্ছে, এক মাসের মধ্যে নিমিশা প্রিয়ার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হবে ।
আদতে কেরলের পালাক্কাডের কোলানগোডের বাসিন্দা নিমিশা প্রিয়া৷ অভিযোগ, তালাল আবদু মেহেদি নামে একজন ইয়েমেনি নাগরিককে হত্যা করেছেন তিনি৷ ২০১৭ সালের ওই হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডের সাজা দেওয়া হয়েছে এই ভারতীয় নার্সকে।
২০১২ সালে নার্স হিসেবে কাজ করতে ২০১২ সালে ইয়েমেনে আসেন নিমিশা। ২০১৫ সাল থেকে তালাল আবদু মেহেদির সঙ্গে ইয়েমেনে একটি ক্লিনিক চালাতে শুরু করেন তিনি। কিন্তু অভিযোগ ওঠে, নিমিশাকে খুব ভাল করে চিনতেন না তালাল৷ তা সত্ত্বেও তিনি ক্লিনিকের শেয়ারহোল্ডার হিসাবে নিমিশার মাসিক আয়ের অর্ধেক নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন । পরে তালাল নিজেকে নিমিশার স্বামী বলেও পরিচিতি দেয় বলে জানা গিয়েছে।
পরবর্তীকালে, এই নিয়ে তালাল ও নিমিশার মধ্যে ঝামেলা শুরু হয়। এমনকি এও অভিযোগ ওঠে, তালাল নিমিশার উপর শারীরিক অত্যাচার শুরু করেন৷ তিনি তাঁকে বাধ্য করেন তাঁর বন্ধুদের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করতে। এর পরেই ২০১৭ সালের জুলাই মাসে নিমিশা তালালকে ড্রাগ ইনজেকশন দিয়ে হত্যা করেন । তবে নিমিশা তখন জানান, তালালকে হত্যা করার উদ্দেশ্য ছিল না তাঁর ৷
নিমিশার উদ্দেশ্য ছিল, তালালের কাছ থেকে নিজের পাসপোর্ট উদ্ধার করা। যেটি তালাল নিজের কাছে নিয়ে রেখেছিল৷ কিন্তু ওভারডোজের কারণে মৃত্যু হয় তালালের। এর পর অন্য এক জনের সাহায্য নিয়ে তালালের দেহ টুকরো টুকরো করে কেটে জলের ট্যাঙ্কে ফেলে দেন তিনি। ইয়েমেন থেকে পালানোর সময় ধরা পড়ে যান।
তবে আদালত নিমিশার কোনও যুক্তিকে গ্রাহ্য করেনি। এমনকি নিমিশার মা প্রেমাকুমারী ইয়েমেনে পৌঁছে গিয়েছিলেন সেই সময়৷ তিনি তালালের পরিবারের সঙ্গে দেখা করে নিমিশার মুক্তি নিশ্চিত করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তেমনটা হয়নি৷ ২০১৮ সালে ইয়েমেনের শীর্ষ আদালত এই মামলায় ট্রায়াল কোর্টের রায় বহাল রাখে এবং নিমিশার সাজা কমানোর আবেদনও খারিজ করে দেয়।
নিমিশা প্রিয়ার মামলা দেখার জন্য ভারতীয় দূতাবাসের তরফে আইনজীবী আবদুল্লাহ আমীরকে নিযুক্ত করা হয়৷ তিনি গত সেপ্টেম্বরে মাসে মিনিশার মুক্তি নিয়ে আলোচনা শুরুর জন্য দ্রুত ১৬.৬০ লক্ষ টাকা প্রাক-আলোচনা ফি-এর দ্বিতীয় কিস্তি মেটানোর দাবি জানান। পাশাপাশি মুক্তির প্রক্রিয়া তখন স্থগিত হয়ে যায় এবং আইনজীবীকে জানানো হয়, এই অর্থ স্থানান্তর করার পরেই আলোচনা শুরু হবে।
প্রথম কিস্তির টাকা হিসাবে ১৯ হাজার ৮৭১ মার্কিন ডলার ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রকের মাধ্যমে আইনজীবীর কাছে ৪ জুলাই হস্তান্তর করা হয়। আইনজীবী প্রাথমিকভাবে বলেছিলেন, আলোচনা শুরু করতে মোট চল্লিশ হাজার মার্কিন ডলার প্রয়োজন এবং এটি দু’টি কিস্তিতে দিতে হবে।
মঙ্গলবার বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেছেন, ‘গোটা পরিস্থিতি নিয়ে ভারত সরকার ওয়াকিবহাল। নিমিশার পরিবারও সব রকম চেষ্টা করেছে। সরকার যথাসাধ্য সাহায্য করছে।’