বিয়ের আসরে ২০ লক্ষ ও গাড়ির ‘বায়না’ হবু বরের! উচিত শিক্ষা দিলেন সাহসী কনে
এই দাবিতে রাজি না হওয়ায় কনের পরিবারকে অপমান করা হয় এবং বর বিয়ে না করেই বরযাত্রী ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দেয়।
Truth Of Bengal: বিয়ের অনুষ্ঠান শুরুর ঠিক আগে বরযাত্রী নিয়ে এসে বিপুল পরিমাণ যৌতুক দাবি। হবু বরের অন্যায় দাবিতে শেষ মুহূর্তে চরম সিদ্ধান্ত নিলেন কনে। উত্তরপ্রদেশের বেরেলির ঘটনাটি। বরযাত্রী আসার পর বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হলেও, শেষ মুহূর্তে বর নগদ ২০ লক্ষ টাকা ও একটি ব্রেজা গাড়ি দাবি করেন। এই দাবিতে রাজি না হওয়ায় কনের পরিবারকে অপমান করা হয় এবং বর বিয়ে না করেই বরযাত্রী ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দেয়।
এরপর কনে নিজেই এই লোভী পাত্রকে বিয়ে করতে অস্বীকার করেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে বর সহ তিনজনকে আটক করেছে। সদর বাজার এলাকার মুরলী মনোহরের মেয়ে জ্যোতির সঙ্গে প্রেম নগর এলাকার নৈ বস্তির ব্যবসায়ী ঋষভের আট মাস আগে বাগদান সম্পন্ন হয়। ঋষভ রাইস মিলের যন্ত্রাংশের ব্যবসা করেন।
View this post on Instagram
কনের বাবা মুরলী মনোহর জানান, বিয়ের সময় ঋষভের বাবা রাম অবতার বলেছিলেন, মেয়েকে শুধুমাত্র এক জোড়া পোশাকে বিদায় দিলেও হবে, তাঁরা যৌতুক চান না। এরপরেও, গত মে মাসে শহরের একটি বড় হোটেলে বাগদানের জন্য প্রায় তিন লক্ষ টাকা খরচ করা হয়। এছাড়াও, বরকে একটি সোনার আংটি, চেন ও নগদ পাঁচ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়।
কনের পরিবারের অভিযোগ, এরপর থেকে বরের পরিবার প্রতিদিন কোনও না কোনও জিনিসের দাবি করতে থাকে। মেয়ের সুখের কথা ভেবে তাঁরা সেই সব দাবি মিটিয়ে যাচ্ছিলেন। বৃহস্পতিবার যখন বিয়ের কার্ড দিতে বরের বাড়িতে যান, তখন তাঁরা এসি, ফ্রিজ, ওয়াশিং মেশিন, আসবাবপত্র, গয়না এবং শুভ কামনা হিসাবে নগদ ১.২০ লক্ষ টাকা দেন।
শুক্রবার রাতে সদর বাজারের যুগবীণা লাইব্রেরিতে বরযাত্রী নিয়ে আসে বরের পরিবার। কনের পরিবার জানায়, এই ব্যয়বহুল ভেন্যুটিও বরের পরিবারের চাহিদা অনুযায়ী বুক করা হয়েছিল। সব রীতিনীতি মেনে বরযাত্রীকে স্বাগত জানানো হয়।
বিয়ের আচার শুরু হওয়ার কিছুক্ষণ পরেই, সাত পাকের ঠিক আগে বর পক্ষ নগদ ২০ লক্ষ টাকা এবং একটি ব্রেজা গাড়ি দাবি করে বসে। কনের বাবা অনেক অনুনয় বিনয় করলেও বর তাঁর দাবিতে অনড় থাকেন। কনের বাবা বরকে বলেন, এত অল্প সময়ে ২০ লক্ষ টাকা এবং একটি ব্রেজা গাড়ির ব্যবস্থা করা অসম্ভব। বিয়ের পরে এ ব্যাপারে আলোচনা করা যেতে পারে। কিন্তু বর পক্ষ কোনও কথা শুনতে রাজি হয়নি।
বর ঋষভ স্পষ্ট জানান, তাঁদের দাবি পূরণ না হলে তিনি সাত পাক করবেন না এবং বরযাত্রী নিয়ে ফিরে যাবেন। এরপর বর পক্ষ ফিরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে শুরু করে। কনের বাবা ও তাঁর ছেলে বাধা দিতে গেলে বরের লোকজন তাঁদের ধাক্কা দেয় বলে অভিযোগ।
পরিস্থিতি গুরুতর আকার ধারণ করলে কনের পরিবার ক্যান্ট পুলিশকে খবর দেয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছলে বর, তাঁর বাবা রাম অবতার এবং ভগ্নিপতিকে আটক করে।
এই ঘটনার খবর পেয়ে কনে জ্যোতি ঘটনাস্থলে এসে কাঁদতে কাঁদতে বলেন, “আমি নিজেই এই লোভী এবং মাদকাসক্ত ঋষভকে বিয়ে করতে চাই না। যে এখন যৌতুকের জন্য আমার পরিবারকে অপমান করছে, সে ভবিষ্যতে আমাকে কীভাবে সম্মান করবে? আমি এই ছেলেকে বিয়ে করব না, বরযাত্রী ফিরিয়ে নিয়ে যান।”
কনে আরও বলেন, “এরা কেমন মানুষ? তাঁদের কি বাড়িতে মেয়ে নেই? বিয়ের সময় তাঁরা গাড়ি আর ২০ লক্ষ টাকা চাইল। আমার বাবা এত দ্রুত কীভাবে সেই ব্যবস্থা করবেন? তাঁরা সকলের সামনে আমার ভাইকে মেরেছে। তাই আমি বিয়ে করতে অস্বীকার করেছি।”
কনের বাবা জানান, এ পর্যন্ত প্রায় ১৫ লক্ষ টাকা বিয়েতে খরচ হয়ে গেছে। অন্যদিকে, ক্যান্টনমেন্ট পুলিশ জানিয়েছে, মেয়ের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ পেলে সমগ্র ঘটনায় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।



