৭২ থামল পঙ্কজের গলা, শিল্পীর মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ সঙ্গীত জগত
72 Pankaj's voice stopped, the music world is saddened by the artist's death

The Truth of Bengal: নতুন বছরে একের পর এক প্রথিতযশা শিল্পীর মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ ভারতীয় সঙ্গীত জগত। সোমবার সকাল সাড়ে এগারোটায় চলে গেলেন গজলের কিংবদন্তী শিল্পী পঙ্কজ উদাস। দীর্ঘ বার্ধক্যজনিত রোগভোগের পর ৭২ বছর বয়সে সুরলোকে পাড়ি দিলেন তিনি। রেখে গেলেন ‘আহট’, ‘নশা’, ‘মেহফিল’, ‘রুবাই’-এর মতো সুপারহিট মিউজিক অ্যালবাম। শিল্পীর প্রয়াণের খবর ছড়াতেই শোকস্তব্ধ বলিউড। পরিবারের তরফে আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দিয়ে পঙ্কজ উদাসের মৃত্যু সংবাদ জানানো হয়। সোশ্যাল মিডিয়ায় বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘অত্যন্ত ভারী মনের সঙ্গে জানাচ্ছি, পদ্মশ্রী পঙ্কজ উদাস প্রয়াত হয়েছেন, ২৬শে ফেব্রুয়ারি। দীর্ঘদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন’। গায়কের কন্যা নায়াব উদাস ইনস্টাগ্রামে বাবার মৃত্যুর খবর ভাগ করে নেন। মহান এই শিল্পীর মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ বলিউড থেকে টলিউড সকলেই।
রাজকোটের চারখাদি নামের এক ছোট্ট শহরে ১৯৫১ সালের ২৭শে মে জন্ম পঙ্কজ উদাসের। ছোট থেকেই সঙ্গীতের পরিবেশে বড় হয়ে ওঠা তাঁর। ছেলেকে রাজকোটের সঙ্গীত অ্যাকাডেমিতে ভর্তি করান পঙ্কজ উদাসের বাবা কেশুভাই উদাস। শুরুতে তবলার তালিম নিলেও পরবর্তীতে গুলাম কাদির খান সাহেবের কাছে ভারতীয় ধ্রুপদী সঙ্গীতের তালিম নেওয়া শুরু করেন। পরে মুম্বইয়ে এসে গোয়ালিয়ার ঘরনার শিল্পী নবরঙ্গ নাগপুরকরের কাছে সঙ্গীত শিক্ষা শুরু করেন। পরবর্তীকালে, ভারতীয় গজলকে তিনি অন্য মাত্রায় তুলে ধরেন বিশ্বের দরবারে। তাঁর মিস্টি গলায় গজলের ধুন আজও অমলিন হয়ে আছে। ১৯৮০ সালে প্রকাশিত ‘আহাট’ ছিল তাঁর ডেবিউ গজল অ্যালবাম। পরের বছর মুক্তি পায় মুকারার, ১৯৮২ সালে তারান্নুম, ১৯৮৩ সালে মেহফিল… একের পর এক হিট অ্যালবাম আশির দশকে উপহার দিয়েছেন তিনি।গজলের পাশাপাশি হিন্দি ছায়াছবিতেও তাঁর অসংখ্য জনপ্রিয় গান। তালিকায়, মহেশ ভাট পরিচালিত ‘নাম’ ছবির ‘চিঠ্ঠি আয়ি হ্যায়’, ‘সজন’ ছবির ‘জিয়ে তো জিয়ে ক্যয়সে’, ‘দিল আশনা হ্যায়’ ছবির ‘কিসি নে ভি তো না দেখা’র মতো গান।
দীর্ঘ চার দশকের কেরিয়ারে তিনি কাজ করেছেন লক্ষ্মীকান্ত প্যায়ারেলাল, শঙ্কর জয়কিষণ, আনন্দ মিলিন্দ, বাপ্পি লাহিড়ি, অন্নু মালিক, নাদিম শ্রবণের মতো সুরকারের সঙ্গে। ‘এক হি মকসদ’ ছবির সুরকার ছিলেন তিনি। নিজের সুরে গাওয়া ‘চাঁদি জ্যায়সা রূপ হ্যায় তেরা’ সেই সময় প্রচণ্ড জনপ্রিয় হয়েছিল। এছাড়া, নব্বইয়ের দশকে ‘ঘায়েল’ ছবিতে লতা মঙ্গেশকরের সঙ্গে ডুয়েট গেয়েছিলেন প্রয়াত শিল্পী এবং মোহরা ছবিতে সাধনা সরগমের সঙ্গে জুটি বেঁধে ‘না কজরেকি ধার’ জনপ্রিয়তার শীর্ষে উঠেছিল। আবার সাজন ছবিতে তাঁর গাওয়া জিয়ে তো জিয়ে ক্যায়সে গানটি এখনো বলিউডের দর্শককে নাড়া দেয়।
সঙ্গীত জগতে অবদানের জন্য অজস্র সম্মান ও পুরস্কার পেয়েছেন প্রয়াত শিল্পী। ২০০৬ সালে ভারত সরকারের তরফে পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত হন গায়ক। পঙ্কজ উদাসের মৃত্যুতে শোকের ছায়া সঙ্গীতের দুনিয়ায়। হারিয়ে যাওয়া গজলকে তিনি যেভাবে তুলে ধরেছিলেন বিশ্বমাঝে সেই পথে যে সত্যিই ছেদ পড়ে গেল ২৬ ফেব্রুয়ারি শিল্পীর প্রয়াণে তা একবাক্যে স্বীকার করেনিলেন সকলেই।