শিক্ষা

জগদীশ চন্দ্র দক্ষ হওয়ার সত্ত্বেও পেতেন কম বেতন!

The Truth Of Bengal Desk, Mou Basu: বিজ্ঞান ক্ষেত্রে অসামান্য প্রতিভা ও দক্ষতা থাকা সত্ত্বেও দিনের পর দিন বঞ্চনার শিকার হতে হয়েছে আচার্য জগদীশচন্দ্র বসুকে। প্রেসিডেন্সি কলেজের ব্রিটিশ অধ্যাপকদের চেয়ে বিজ্ঞান প্রতিভায় ও দক্ষতায় কোনো অংশে কম ছিলেন না জগদীশচন্দ্র। কিন্তু শুধুমাত্র নেটিভ ইন্ডিয়ান বা অশ্বেতাঙ্গ হওয়ার কারণে নিজ জন্মভূমিতে, ব্রিটিশ শাসিত ভারতে দিনের পর দিন কর্মজগতে বঞ্চিত হয়েছেন তিনি। লর্ড রিপন তাঁকে প্রেসিডেন্সি কলেজের অধ্যাপক পদে নিয়োগ করেন। দিনের পর দিন, মাসের পর মাস প্রেসিডেন্সি কলেজের ব্রিটিশ অধ্যাপকদের চেয়ে কম বেতন পেতেন জগদীশচন্দ্র। ব্রিটিশ অধ্যাপকরা যেখানে মাসে ৩০০ টাকা করে বেতন পেতেন সেখানে আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু বেতন পেতেন ২০০ টাকা। কিন্তু ঋজু, দৃঢ়চেতা জগদীশচন্দ্র বিনা বাক্যে মাথা নীচু করে বঞ্চনা মেনে নেন। তিনি প্রতিবাদ করেন। ব্রিটিশ সরকারের কাছে ব্রিটিশ অধ্যাপকদের সমান বেতন দাবি করেন। ব্রিটিশ সরকার সেই দাবি মানেনি। প্রতিবাদে বিনা বেতনে প্রেসিডেন্সি কলেজের অধ্যাপনার দায়িত্ব পালন করেন আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু। ৩ বছর তিনি বিনা বেতনে পড়াতেন। পরে অবশ্য প্রেসিডেন্সি কলেজ কর্তৃপক্ষ নিজেদের ভুল বুঝতে পারে। স্থায়ী অধ্যাপকের চাকরি দেওয়া হয় আচার্য জগদীশচন্দ্র বসুকে। বকেয়া অর্থ মিটিয়ে দেওয়া হয়।

শুধু বেতনের দিক থেকেই বঞ্চনার শিকার হননি জগদীশচন্দ্র বসু। কর্মজগতেও আরও নানান রকম অসুবিধার মুখে পড়েন তিনি। ব্রিটিশ অধ্যাপকরা প্রেসিডেন্সি কলেজের যে ল্যাবরেটরিতে গবেষণা করতেন সেখানে ঢোকার অনুমতি ছিল না ‘নেটিভ ইন্ডিয়ান’ জগদীশচন্দ্রের। অসাধারণ মেধাবী জগদীশচন্দ্র ২৪ স্কোয়্যার ফুটের একটি ছোট্ট ঘরেই তিনি নানান অসামান্য গবেষণা চালান।
১৯০১ সালে লন্ডনের রয়্যাল সোসাইটিতে তিনি ক্রেসকোগ্রাফ নামক যন্ত্রের সাহায্যে তিনি প্রমাণ করেন যে তিনি গাছেরও আছে প্রাণ। গাছেদেরও আছে অনুভূতি। রেডিও ওয়েভ নিয়ে গবেষণা করেন তিনি। Coherer নামক যন্ত্রের উন্নতি ঘটিয়ে তার সাহায্যে এই গবেষণা চালান। পাশাপাশি ওয়ারলেস টেলিগ্রাফিও আবিষ্কার করেন জগদীশচন্দ্র। ১৮৯৫ সালে তিনি এই গবেষণা করেন। তবে পেটেন্ট নেননি তিনি। ১৮৯৭ সালে ইতালির বিজ্ঞানী গুগলিয়েলমো ম্যারকনি একই গবেষণা করেন। পেটেন্টের আবেদন করেন ম্যারকনি। ওয়ারলেস টেলিগ্রাফি নিয়ে অসামান্য কাজ করলেও জগদীশচন্দ্র নয় ম্যারকনি আবিষ্কারের সমস্ত কৃতিত্ব পান। ১৯৭৭ সালে নোবেলজয়ী স্যর নেভিল মট জানান, নিজের সময়ের চেয়ে ৬০ বছর এগিয়ে ছিলেন আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু।