গর্ভস্থ সন্তানের ঠিকমতো বেড়ে ওঠার জন্য গর্ভবতীদের ডায়েটে অবশ্যই থাকুক ফলিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ শিম
Folic acid rich beans must be included in the diet of pregnant women for proper growth of the fetus

The Truth Of Bengal , Mou Basu : শীত পেরিয়ে এখন বসন্ত চলছে। কিন্তু এখনো বাজারে দেখা মিলছে শীতের সবজি সবুজ অথবা সাদা শিম। সবুজ শিম যেমন বিভিন্ন রকম শাক চচ্চড়ির অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ তেমনই সাদা শিম ছাড়া সরস্বতী পুজোর গোটা রান্না বা সেদ্ধ অসম্পূর্ণ। দারুণ পুষ্টিকর সবজি শিম নিজেই প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও মিনারেল বা খনিজ পদার্থে ভরপুর।
শিমকে খুবই পবিত্র ও রাজকীয় বলে মানা হত প্রাচীন মিশরে। এমনকী ফারাওদের সমাধিতেও শিম দেওয়ার প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন পাওয়া গেছে। মনে করা হয়, দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়া বিশেষত উত্তর-পশ্চিম ভারত, পাক-ই-স্তান, তাজাখ-ই-স্তান, উজবেকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান, কিরজ-ই-স্তান প্রভৃতি জায়গায় প্রথমে শিম চাষ শুরু হয়। ক্রিস্টোফার কলম্বাসের পর মার্কিন মুলুকে শিমের আগমন ঘটে। প্রথম শতাব্দীতে চিনেও প্রবেশ ঘটে শিমের। ধীরে ধীরে ইউরোপেও চাষ শুরু হয়। শিমের ইংরেজি নাম স্নো পি (Snow Pea)। অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় গর্ভস্থ সন্তানের ঠিকমতো বেড়ে ওঠার জন্য গর্ভবতী নারীদের ফলিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। প্রচুর পরিমাণে ফলিক অ্যাসিড আছে শিমে। শিমে থাকা ফলিক অ্যাসিডের পাশাপাশি ভিটামিন সি ও ভিটামিন কে ভ্রুণের গঠনের ক্ষেত্রে খুবই উপকারী।
এছাড়াও শিমে আছে প্রচুর পরিমাণে ফাইটোস্টেরল যা রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। শিমে থাকা ডায়েটারি ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা কমায়, কোলেস্টেরলের মাত্রা ঠিক রাখার পাশাপাশি নিয়ন্ত্রণে রাখে দেহের ওজনও।
শিমে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, বি১, বি২, বি৩, সি ও কে। এছাড়া আছে পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম, তামা, দস্তা, সেলেনিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ আর লোহা। ক্যারোটিন, লিউটেন, জিয়াজ্যান্থিনের মতো অ্যান্টি অক্সিড্যান্টস ফ্ল্যাভোনয়েডস থাকায় শিম খাওয়া দৃষ্টিশক্তি বাড়িয়ে তোলে, ফুসফুস ও মুখগহ্বরের ক্যানসার থেকে রক্ষা করে।
শিমে থাকা পটাসিয়াম রক্তচাপ কমিয়ে হৃদযন্ত্রকে ভালো রাখে। ভিটামিন সি ধমনীর ক্ষত মেরামত করে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কমায়।
এছাড়া লোহা, পটাসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজের মতো খনিজ সমৃদ্ধ শিম নিয়মিত খেলে বোন মিনারেল ডেনসিটি বাড়ে। কমে অস্টিওপরোসিসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা।
রক্তে শর্করার মাত্রাও ঠিক রাখে শিম। প্রচুর পরিমাণে ডায়েটারি ফাইবার রক্তে গ্লুকোজ আর ইনসুলিনের মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণে রাখে, বাড়ায় হজমশক্তির ক্ষমতা।
এছাড়া শিমে ক্যারোটিন থাকায় কমে ক্যানসার কোষ তৈরির আশঙ্কা। এছাড়া ভিটামিন সি ও এনজাইমস ভেঙে দেয় ক্যানসার সৃষ্টিকারী কোষের গঠন।
শিমে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ থাকলেও ফ্যাট ও ক্যালরির পরিমাণ খুব কম। তাই ওজন কমাতে খুবই সহায়ক।
শিমে থাকা লোহা অ্যানেমিয়া বা রক্তশূন্যতা কমাতে সাহায্য করে। রক্তের লোহিত কণিকা (RBC Cell) তৈরি হয় নিয়মিত শিম খেলে। উচ্চ রক্তচাপকে কমিয়ে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম শিম। শিমে থাকা ভিটামিন-সি আমাদের বোন হেল্থের জন্য খুবই উপকারী। নিয়মিত শিম খেলে হাড় মজবুত হয়, হাড় ক্ষয় প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়।
শিম মস্তিষ্কের নার্ভের টেনশন কমিয়ে, পেশীকে নরম করে। মস্তিষ্কের মধ্যে রক্ত সঞ্চালন ঠিক রাখে, মানুষ ঠিকমতো ঘুমোতে পারে। তাই যারা অনিদ্রা রোগে ভুগছে তাদের কাছে শিম অব্যর্থ দাওয়াই। শিমে থাকা ভিটামিন সি রক্তের শ্বেত কণিকার সংখ্যা বাড়ায়। এভাবেই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে ওঠে।
ম্যাগনেসিয়ামের ঘাটতির কারণে অনেকের পায়ের পেশীতে টান ধরে। অনেকের পিঠের পেশীতে টান ধরে, প্রচণ্ড যন্ত্রণা হয়। সেক্ষেত্রে শিম খেলে এধরণের সমস্যা কমে। ম্যাগনেশিয়াম কমলে ডিপ্রেশন বা অবসাদে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে। প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম থাকায় নিয়মিত শিম খেলে অবসাদজনিত সমস্যা রোধ করা সম্ভব।
ব্যাড কোলেস্টেরল, ক্লট, কিডনি স্টোনও ধ্বংস করতে পারে শিম। হেয়ার ফলিকলসকে নারিশ করতে ও চুলের বৃদ্ধি করতে খুবই উপকারী শিম।
Free Access