
The Truth of Bengal, Mou Basu: এনসিইআরটি সম্প্রতি দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাসের বই থেকে মোগল সাম্রাজ্য বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঠিক সে সময় মোগল ইতিহাস বিশেষজ্ঞ বিখ্যাত বাঙালি ইতিহাসবিদ অশোককুমার দাশকে ডিলিট সম্মানে ভূষিত করল লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়। মোগল সাম্রাজ্যের বিশেষজ্ঞ অশোককুমার দাস ৬ দশক আগে কলকাতার ভারতীয় জাদুঘর থেকে তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন। ইতিহাসে অসামান্য অবদানের জন্য তাঁকে জীবনকৃতী সম্মানে সম্মানিত করা হয়েছে।
যে কোনো সিনেমা তৈরির সময় বিভিন্ন চরিত্রের ছবি, সিনেমার শট যেমন নিজের খেরোরখাতায় এঁকে রাখতেন সত্যজিৎ রায়। তেমনই সিনেমায় ব্যবহৃত সমস্ত প্রপস বা জিনিসপত্র নিয়েও খুঁতখুঁতে ছিলেন তিনি। তাই “হীরক রাজার দেশ” হোক কিংবা “শতরঞ্জ কে খিলাড়ি” বানানোর সময় আসল মোগল আমলের বন্দুক ও কামান ব্যবহার করতে চেয়েছিলেন সত্যজিৎ। সে সময় জয়পুরের মহারাজা সওয়াই মান সিং (দ্বিতীয়)-র নামে নামাঙ্কিত সংগ্রহশালার দায়িত্বে ছিলেন অশোককুমার দাশ। সিনেমায় ব্যবহার করার জন্য প্রপসের খোঁজে সত্যজিৎ তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। জয়পুরের মহারানি গায়ত্রী দেবীর হস্তক্ষেপে রাজস্থানের তৎকালীন মুখ্যসচিব মোহন মুখোপাধ্যায় সেই অনুমতি দেন। আসল জিনিসই প্রপস হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছিল সত্যজিৎ রায় পরিচালিত ২ বিখ্যাত ছবিতে।
১৯৩৬ সালে মেদিনীপুরের গড়বেতায় জন্ম অশোককুমার দাশের। প্রাথমিক পড়াশোনা গড়বেতার স্কুলেই। ইতিহাস নিয়ে মেদিনীপুর কলেজ থেকে স্নাতক হন। প্রাচীন ইতিহাস ও সংস্কৃতি নিয়ে স্নাতকোত্তর পাশ করেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। পরে মিউজিওলজি নিয়েও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। কলকাতা থেকে আইন পাশ করেন। ১৯৬৪ সালে কমনওয়েলথ স্কলারশিপ পেয়ে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় পড়তে যান। লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে স্কুল অফ ওরিয়েন্টাল অ্যান্ড আফ্রিকান স্টাডিজে পড়াশোনা করেন। পিএইচডি করেন মোগল সম্রাট জাহাঙ্গীরের আমলের মিনিয়েচার পেইন্টিং বা অঙ্কনশিল্প নিয়ে।
ইতিহাসবিদ অশোককুমার দাশের পিএইচডি থিসিস পরে বইয়ের আকারে বেরিয়েছে। ১৯৬৭ সালে প্রকাশিত সেই বইয়ের নাম হল “Mughal Painting During Jahangir’s Time”। ৬০টির বেশি বই লিখেছেন অধ্যাপক অশোককুমার দাশ। মূলত রাজস্থানী, মোগল ও পাহাড়ি অঙ্কনশিল্পে বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক অশোককুমার দাশ লন্ডনের বিখ্যাত ভিক্টোরিয়া অ্যান্ড অ্যালবার্ট মিউজিয়াম বা নিউইয়র্কের মেট্রোপলিটন মিউজিয়াম অফ আর্টে পরামর্শদাতা হিসাবে কাজ করেছেন। এছাড়াও বিশ্বভারতীর কলাভবনেও অধ্যাপনা করেছেন। ভিজিটিং প্রফেসর হিসাবে অধ্যাপনা করেছেন জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অফ আর্টস অ্যান্ড অ্যাস্থেটিকসেও। গত জুলাই মাসেই অশীতিপর অধ্যাপক অশোককুমার দাশকে ডিলিট সম্মানে সম্মানিত করে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়। সেই অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন অধ্যাপক অশোককুমার দাশের স্ত্রী শ্যামলীদেবী, ছেলে, মেয়ে, পুত্রবধূ ও নাতনি। অধ্যাপক অশোককুমার দাশের পাশাপাশি এবছর ডিলিট সম্মান পেয়েছেন ব্রিটিশ শিল্পী সনিয়া বয়েস, যিনি ভেনিসে গোল্ডেন লায়ন পুরস্কার জিতেছিলেন।