সম্পাদকীয়

ইঁদুর ছানা ভয় মরে (না)

The baby mouse is scared to death (no)

Truth Of Bengal: অর্ক গোস্বামী (বিশিষ্ট প্রবন্ধকার): ‘হ্যামলিনের বাঁশিওয়ালা’। শহরের বেড়ে যাওয়া ইঁদুরের সংখ্যা কমানোর উদ্দেশ্যে পাড়ি দিয়েছিলেন- এমনটাই বলছে আখ্যান। সেই আখ্যানে বর্ণিত সমস্যা আবার মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে। বিগত সাতবছর যাবৎ ভার্জিনিয়ার রিচমন্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের করা সমীক্ষা বলছে বিশ্বের সুবৃহৎ ১৬টি শহরে বিপদ্দনক হারে ইঁদুরের জনসংখ্যা বেড়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও বিশ্বব্যপী ইঁদুরের সংখ্যা বৃদ্ধির সঠিক সংখ্যা না পাওয়া গেলেও যথেষ্ট চিন্তার বিষয় হয়ে দাড়িয়েছে।

গবেষকদের মতে, এই সংখ্যা বৃদ্ধির পেছনে থাকা একাধিক কারণের মধ্যে সবচেয়ে বড় হল বিগত কয়েক দশকে পরিবেশের প্যারামিটারগুলির বিপুল ঋণাত্মক পরিবর্তন। শহরাঞ্চলের গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে ইঁদুর সহ বিভিন্ন রোডেন্টদের কর্মক্ষমতা শীতল তাপমাত্রা অপেক্ষা অধিক বৃদ্ধি পায়। দ্বিতীয়ত, এমন শহরগুলিতেই ইঁদুরের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে যেখানে পূর্বে বনাঞ্চল বেশি ছিল। বন কেটে মানব বসতি গড়ার ফলে টান পড়েছে প্রাণীদের বাসস্থানের। পাশাপাশি শহরাঞ্চলে খাদ্যের অভাব তুলনামূলক ভাবে কম হওয়ায় ইঁদুরদের খাদ্য সরবরাহ যথেষ্ট সুরক্ষিত। যার ফলে সংখ্যা বৃদ্ধিতে কোনও বাধা নেই।

জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে শহরাঞ্চলে ব্যপক হারে খাদ্যের উচ্ছিষ্ট তৈরি হয় যা ইঁদুর গোত্রীয় প্রাণীদের খাদ্য শৃঙ্খল সুরক্ষিত করে। বিশেষত টোকিও, শিকাগো শহরের ওপরে করা সমীক্ষা এই তত্ত্বকে সমর্থন করছে যা ভারতের মেগাসিটির ক্ষেত্রেও সম্ভাব্য সত্য। বাড়তে থাকা ইঁদুরের এই সংখ্যা ধীরে ধীরে বদলে দিতে পারে শহরের কম জটিল খাদ্য শৃঙ্খলকে। ইঁদুর যেহেতু নিজে খাদ্য উৎপাদক নয় বরং নিজেই সাপ, পাখি সহ অন্যান্য প্রাণী শিকার তাই অদূর ভবিষ্যতে শহরাঞ্চলের প্রাণী বৈচিত্রে বদলের সম্ভাবানা প্রবল। যার থেকে জনস্বাস্থ্যের ওপর নিত্যনতুন বিপর্যয় নেমে আসার সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তাই বিশ্বজুড়ে চলতে থাকা জলবায়ু পরিবর্তনকে উপযুক্ত আন্তজার্তিক সহায়তা এবং সহযোগিতার মাধ্যমে রুখতে হবে। পাশাপাশি নির্দিষ্ট শহরাঞ্চলে জনঘনত্ব কমিয়ে আনার জন্য বিকল্প বাসস্থান হিসেবে উপনগরী গড়ে তুলতে হবে যাতে পৌরসংস্থার পক্ষে  সহজেই খাদ্য এবং খাদ্যজনীত উচ্ছিষ্টের সঠিক প্রক্রিয়াকরণ করা সম্ভবপর হয়।