
The Truth of Bengal, Mou Basu: মরু রাজ্য রাজস্থান বললেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে বড়ো বড়ো কেল্লা, প্রাসাদ, মরুভূমির ছবি। ইতিহাসের ওঠাপড়ার নানা ঘটনাসমৃদ্ধ এই রাজ্য ভারতের অন্য রাজ্যের মতো শস্য-শ্যামলা নয়। ব্যতিক্রম হল মরুরাজ্য রাজস্থানের রাজসমন্দ জেলায় অবস্থিত পিপ্লানত্রী গ্রাম। রাজসমন্দ জেলায় অবস্থিত এই গ্রামটির চারিদিকে সবুজের সমারোহ। যেদিকে চোখ যায় সেদিকেই ছোট বড়ো নানান গাছের সারি।
হঠাৎ এমন সবুজ বনানী কীভাবে গড়ে উঠল পিপ্লানত্রীতে?
এর কারণটি সম্পূর্ণ ভিন্ন। প্রকৃতিগত ভাবে নয় গ্রামবাসীদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় সফল হয়েছে এই উদ্যোগ। খবরের শিরোনামে প্রায়সই নজরে আসে কন্যাভ্রুণ হত্যা, পণের দাবিতে বলি মহিলারা, নারী নির্যাতনের হরেক রকমের ঘটনা। সেখানে রাজস্থানের পিপ্লানত্রী গ্রামটি সত্যিই ব্যতিক্রম। এই গ্রামে কন্যা সন্তান জন্মানোয় গুনে গুনে ১১১টি গাছের চারা পোঁতা হয়।
ব্যাপারটা কেমন অভিনব তাই না?
যে রাজ্যে উন্নতমানের সংস্কৃতি চর্চার পাশাপাশি কুসংস্কারও কম নয়, সেখানে এ জাতীয় উদ্যোগ ও চিন্তা মানুষকে বেশ কিছুটা ভাবায় বইকি! আসলে সচেতনার বিষয়টি এমনই যে তাতে যখন মানুষ উদ্বুদ্ধ হয় তখন তার প্রকাশও হয় নানা আশ্চর্যের উদাহরণ। কন্যাসন্তানের জন্মকে এখনো যে দেশে বহু শিক্ষিত পরিবারেও অবাঞ্ছিত ঘটনা বলে মানা হয় সেখানে এরকম আত্মিক ও সামাজিক উন্নতি হতে পারে, দেখলে এবিষয়ে অভিভূত হয়ে যেতে হয়।
বছর কয়েক আগে, পিপ্লানত্রী গ্রামের গ্রাম প্রধান শ্যামসুন্দর পালিওয়ালের কন্যা কিরণ অকালে মারা যায়। শোকে না ডুবে থেকে গ্রামের অন্য পরিবারগুলিকে কন্যাসন্তান বাঁচাতে উৎসাহিত করেন শ্যামসুন্দর। এর আগে ওই গ্রামে নির্বিচারে কন্যাভ্রুণ হত্যা করা হত। গ্রামপ্রধানের কথায় অনুপ্রাণিত হয়ে কন্যাসন্তানের জন্মে আগ্রহী হয় গোটা পিপ্লানত্রী গ্রাম। কন্যা বাঁচানোর পাশাপাশি প্রকৃতিকে রক্ষা করতেও উদ্যোগী হয়েছেন পিপ্লানত্রী গ্রামের বাসিন্দারা। কয়েক বছরের প্রচেষ্টায় গ্রামটি এখন গাছগাছালিতে ঢাকা। ১ হাজার হেক্টর জমিতে সাড়ে ৩ লাখ গাছ লাগানো হয়েছে।
শুধু গাছের চারাই নয় যে বাড়িতে কন্যা সন্তান জন্মায় সেই কন্যার বাবার কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা নেওয়া হয়। গ্রাম থেকে ২১ হাজার টাকা দিয়ে, মোট ৩১ হাজার টাকা মেয়েটির নামে ফিক্সড ডিপোজিট করা হয়। মেয়েটির ২১ বছর বয়স হলে পুরো টাকা তার হাতে তুলে দেওয়া হয়। এছাড়াও মেয়েটির বাবাকে হলফনামা দিতে হয় যে কোনো ভাবেই ১৮ বছরের আগে মেয়ের বিয়ে দেবেন না। কারোর মৃত্যু হলে তাঁর নামে ১১টি গাছ পোঁতা হয়। শুধু গাছ পোঁতাই নয় প্রতিটি গাছের রক্ষণাবেক্ষণের দিকেও সদা তৎপর পিপ্লানত্রীর বাসিন্দারা।