অফবিট

দেশি-বিদেশি ভাষার প্রবাহ পেরিয়ে বাংলা ভাষা আজ আরও সজীব সাবলীল হয়ে উঠেছে

Bengali language is alive and fluent beyond the flow of domestic and foreign languages

The Truth of Bengal,Mou Basu: একটা সময় ছিল যখন মানুষ অঙ্গভঙ্গি করেই মনের ভাব প্রকাশ করত। ক্রমে ক্রমে কালের বিবর্তনে দীর্ঘদিন কথা বলার তাগিদ থেকেই জন্ম হয় ভাষার। তারপর যত দিন গড়িয়েছে নানা ভাঙা গড়ার মধ্যে দিয়েই এগিয়েছে ভাষার ইতিহাস। কথাতেই আছে, ভাষা স্রোতস্বিনী নদীর মতো সদা প্রবাহমান। যেমন আমাদের মাতৃভাষা বাংলা-চর্যাপদ থেকে শুরু। তারপর সংস্কৃত, ফারসি, আরবি, ইংরেজি, ফরাসি, ল্যাটিন, উর্দু, জার্মানি, গ্রিক এবং আরও অনেক দেশি-বিদেশি ভাষার প্রবাহ পেরিয়ে উত্তরোত্তর বাংলা ভাষা আজ আরও সজীব ও সাবলীল হয়ে উঠেছে। আজ বাংলা ভাষার প্রসাদগুণ আরও বেশি বেড়েছে। ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ইউনেস্কো প্যারিস অধিবেশনে ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। ২০০০ সাল থেকে ২১ ফেব্রুয়ারি দিনটি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালন করা শুরু হয়। ২০১০ সালের ২১ অক্টোবর রাষ্ট্রসংঘের অধিবেশনে বাংলাদেশ প্রতি বছর ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করার প্রস্তাব আনে। এই প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়।

কিন্তু প্রশ্ন হল? প্রাত্যহিক জীবনে কি সত্যিই আমরা আমাদের মাতৃভাষা বাংলাকে অতটা গুরুত্ব দিই? যতটা গুরুত্ব একজন তামিলভাষী তার মাতৃভাষা তামিলকে বা একজন পঞ্জাবী নিজের মাতৃভাষাকে দেয়। বোধহয় না। তা যদি হত তাহলে আধুনিক বঙ্গজীবন হত ওই এক বিজ্ঞাপনী ক্রিমের মতোই সুরভিত এবং উদ্ভাসিত। কিন্তু সে ছবি দেখি কই?

ভাষার হাত ধরেই বাঙালি আজ আন্তর্জাতিক স্তরে প্রাধান্য পেয়েছে। সাহিত্য, সিনেমা সব ক্ষেত্রে পুরস্কার উঠেছে বাংলা ভাষার দৌলতেই। সে কবিগুরুর গীতাঞ্জলি’র ইংরেজি অনুবাদেই হোক কিংবা সত্যজিতের আদ্যন্ত বাঙালি জীবনের পটভূমিকায় তোলা পথের পাঁচালি’র সৌজন্যে। ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ইউনেস্কো প্যারিস অধিবেশনে ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। ২০০০ সাল থেকে ২১ ফেব্রুয়ারি দিনটি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালন করা শুরু হয়। সারা বিশ্বের মোট ১৮৮টি দেশে দিনটি পালিত হচ্ছে মহাসমারোহে। এটি নিশ্চয়ই ‘ভাষার’ ইতিহাসে এক অনন্য নজির ও সম্মানের।

কিন্তু অতীব দুঃখের বিষয় এত আন্তর্জাতিক হয়েও নিজভূমেই বাংলা ভাষা যেন কোণঠাসা। সাজানো বাগান যেন আজ অনৈতিক শব্দ দৈত্যদের দাপটে বাস্তুহারা এলোমেলো। ব্যবহারের ঔদাসিন্যে ক্রমশ আজ বাঙালি ক্রমশ নিজের মাতৃভাষাকেই ঠেলে দিচ্ছে বিস্মরণের কুঠুরিতে। প্রতিনিয়ত আধুনিক কেতাদুরস্ত বঙ্গজীবনে হিন্দি ও অন্য ভাষার দাপটে মৃত্যু ঘটছে সুন্দর, মাধুর্য মাখা শব্দবন্ধগুলির। অথচ ভাবুন, ব্যবহারের নিরিখে বাংলা ভাষার স্থান পৃথিবীতে চতুর্থ। বর্তমানে প্রায় ৩০ কোটি মানুষের মুখের ভাষা হল বাংলা। বাংলাদেশ ছাড়া পশ্চিমবঙ্গ, আন্দামান-নিকোবর, দণ্ডকারণ্য, ত্রিপুরার মানুষ বাংলায় কথা বলে। এছাড়াও অসম, মেঘালয়, ঝাড়খণ্ড, বিহারের কিছু অংশের মানুষের মুখের ভাষাও বাংলা। তবু অর্থনীতি, রাষ্ট্রনীতির প্রভাব ও ক্ষমতায়নের প্রভাবে বাংলা ভাষার আজ চরম দূরবস্থা। প্রতিনিয়ত প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক চাপ ও প্রভাবে বাংলা ভাষা আজ বিস্মরণের মলিনতায় বিপন্ন।

বাঙালি এখন বিদ্যালয় যায় না-যায় School য়ে। সকালে জলখাবার খায় না, খায় Breakfast। মহাবিদ্যালয় শব্দটা তো কবেই খরচের খাতায় হয়েছে college। এরকম করেই সুপ্রভাত আজ good morning, ধন্যবাদ আজ thank you হয়ে সর্বজনগ্রাহ্য হয়েছে। এরকম বহু বাংলা শব্দ আজ অন্য ভাষার দাপটে অপ্রচলিত হয়ে গেছে। আবার কিছু এমন শব্দ আমাদের ভাষায় ঢুকে উচ্চারণের বিকৃতিতে হয়ে গেছে আমাদের ভাষার মতোই সুমধুর। যেমন, আলমারি, রেস্তোরাঁ।আসল কথা হল, চাপাচাপি হোক কিংবা ভাগাভাগি যাই হোক না কেন, ভাষা যেন মধুর আর গতি হয় যেন ঋজু। মাধুর্য্য আর গতিময়তার গুণেই ভাষা এগিয়ে চলে যুগ থেকে যুগে মানুষ থেকে মানুষ।

Related Articles