খেলা

‘কলকাতা ডার্বি’ তে কেকেআর-এর হার!

KKR loses in the 'Kolkata Derby'!

Truth Of Bengal: যুধাজিৎ মুখোপাধ্যায়, বিসিসিআই কোচ, প্রাক্তন ক্রিকেটার: অবাক লাগছে? ভাবছেন, লখনউ সুপার জায়ান্ট তো কলকাতার দল নয়! তাহলে কলকাতা ডার্বি কি করে হল? হ্যাঁ এবার ঠিক ধরেছেন, লখনউ এর মালিক তো আমাদের শহরের বাসিন্দা। তাই নিজের শহরের দল কেকেআরকে তাদেরই ঘরের মাঠে মাত্র ৪ রানে হারিয়ে লখনউ এর মালিক সঞ্জীব গোয়েঙ্কা শেষ হাসি হাসলেন।

এত কাছে এসে এই পরাজয় কিন্তু বেশ বেদনার- বিশেষত আইপিএল টুর্নামেন্ট এর শেষ বেলায় এই দুই পয়েন্ট অনেক মূল্যবান হয় উঠতে পারে। কিন্তু কেনো এই হার? আসলে দলের ভরকেন্দ্র বা ভারসাম্য অনেকটাই নড়ে গেছে নানা কারণে। গুরু গৌতম গম্ভীর চলে গেছেন ভারতের কোচ এর দায়িত্ব নিয়ে।

জয়ী দলনায়ক শ্রেয়সকে ও রাখা হয়নি। গত বারের সফল দুই তারকা ওপেনিং ব্যাটার ফিল সল্ট এবং বোলার (২০২৪ সালের ফাইনাল ম্যান অফ দ্য ম্যাচ স্টার্ককেও ছেড়ে দিতে হয়েছে। এর ওপরে যুক্ত হয়েছে দুই ‘বয়স্ক’ মহাযোদ্ধা নারিন- রাসেলের অফ ফর্ম! গতবার সারা টুর্নামেন্ট জুড়ে কেকেআরের নারাইন রাসেল সল্ট বা বরুণ শীর্ষ ১০ প্রভাবশালী খেলোয়াড়দের মধ্যে থাকত। এবারে কে কোথায়?  অধিনায়ক রাহানে ১২ নম্বরে ঢুকল তাও ২০ টি ম্যাচ এর পর- দলের আর কি ভালো অবস্থা হবে?

আগের লেখা গুলোতেই বলেছি যে ‘ভারী’ দলগুলির অবস্থা ভাল নয় একেবারেই। সেরকমই একটা ভারী দল চেন্নাই আবার একটা ক্লোজ ম্যাচ হেরে গেল। যদিও ধোনির মারাত্মক, সেই পুরোনো ‘মাহি মার রাহা হ্যায়’ স্টাইল এর পাওয়ারহিটিং কিছুক্ষণের জন্যে হলেও দেখে নিলো তাঁর ভক্তরা।

কেকেআর, মুম্বই বা চেন্নাই- এদের আসল সমস্যা টা কিন্তু আরও গভীরে, মাঝের ওভারে। অর্থাৎ সপ্তম থেকে ১৫ তম ওভারগুলিতে রান বের করতে পারছে না এরা। কেকেআর এর কথাই ধরা যাক- এ যাবত ৫ টি খেলায় ১৯ উইকেট গেছে (মোট ৩৩ উইকেট গেছে) এবং মাত্র ৮.৩ রান প্রতি ওভার হয়েছে উইকেট প্রতি মাত্র ২১ গড়ে।

অর্থাৎ মাঝের ওই পাওয়ারপ্লে পরবর্তী ৯ ওভারে প্রায় ৬০ শতাংশ উইকেট হারিয়েছে কেকেআর অনেক কম গড় রান প্রতি ওভার এবং রান প্রতি উইকেটে। লখনউয়ের বিরুদ্ধে ১০ ওভার এ ৮ উইকেট হাতে ছিল ১১০ রান করতে হত। সেই জেতা ম্যাচ মাঠে ফেলে এলেন নাইটরা। সেট ব্যাটাররা আউট হতে রাসেল বা রিঙ্কুদের মত পাওয়ার হিটার না নামিয়ে কোন যুক্তিতে রমনদীপ এবং রঘুবংসিকে নামানো হল ব্যাভো-পণ্ডিত মশাইদের কাছে জানতে পারলে ভাল হতো।

আমরা তো কেকেআরকে আগ্রাসী ক্রিকেট খেলতে দেখে অভ্যস্ত। সেখানে ‘মাত্র’ ১১ আসকিং রেটে এই রক্ষণশীল মানসিকতা সত্যই দুর্বোধ্য। এর ফলে কি হল- ১১ থেকে ২০ ওভার- এই দশ ওভার এর মধ্যে পাঁচ-পাঁচটি ওভার-এ ১০ এর কম রানে আটকে রইলো নাইট বাহিনী- এবং শেষ অব্দি মাত্র ৪ রান এ হার স্বীকার করতে বাধ্য হল তারা।

ভাবুন, যদি এই পাঁচটি ওভারের একটিতেও একটি চার বা ছক্কার বাড়ি পড়তো খেলার ফল কি হতে পারতো! ওইদিন এরই আরেকটি হাই স্কোরিং হাই ভোল্টেজ খেলায় চেন্নাই হারলো সেই মাঝের ওভার গুলিতে কম রান করার জন্যে। মিল দেখুন, চেন্নাই এর শেষের সেই ১০ ওভার এ ১০ এর কম রান এর ওভার সংখ্যা সেই পাঁচ! মাঝের ওভার গুলোর গুরুত্ব তাহলে ভেবে দেখুন একবার।

কেকেআর এর কথায় ফিরে যাই। এবার কিন্তু পরিবর্তন করার সময়ে এসে গেছে। যারা সুযোগ পেয়েও সেইরকম সুবিধে করতে পারছেন না তাদের বদলে পাওয়েল নর্টজে মইন গুরবাজদের দেখে নেওয়ার সময় কিন্তু এসে গেছে। জানি কেকেআরের বড় সাহেবরা বেশি পরিবর্তনে বিশ্বাস করেন না।

কিন্তু এখনই একটু অদল বদল করে নিতে না পারলে যখন ক্লাচ পিরিয়ড আসবে তখন দলের সঠিক সমন্বয়ে আসা হয়তো সম্ভব হয়ে উঠবে না। আইপিএল জমে গেলেও কেকেআরকে জলদি ঘুরে দাঁড়াতে হবে- সেইসঙ্গে মুম্বই চেন্নাইকেও। কে না জানে থালা এবং হিটম্যান এখনও কত বড় ক্যাউড পুলার!

Related Articles