অফবিট

গলগল করে অনর্গল বেরিয়ে আসছে রক্তের ধারাস্রোত, কোথায় আছে রক্তলাল জলপ্রপাত

Streams of blood are flowing freely, where is the blood-red waterfall?

Truth of Bengal: মৌ বসু: অনর্গল গলগল করে বেরিয়ে আসছে রক্তের ধারাস্রোত। না, মানব বা কোনো প্রাণীর দেহ থেকে নয়। আন্টার্কটিকায় রয়েছে এমন এক বিরল ব্লাড রেড জলপ্রপাত। আন্টার্কটিকার ম্যাকমুরডো ড্রাই ভ্যালিতে রয়েছে এমন জলপ্রপাত। অনবরত টেলর হিমবাহ থেকে রক্তের মতো টকটকে লাল জলের ধারাস্রোত বেরিয়ে এসে মিশছে লেক বনি হ্রদের জলে।

মনে রাখবেন, আন্টার্কটিকা হল বরফে ঢাকা। বরফের রাজ্যে তীব্র ঠান্ডা আবহাওয়ার মধ্যে জলপ্রপাত থাকাই বেশ অদ্ভুতের। রক্তের ধারা নয় রক্তের মতো টকটকে লাল রঙের জলের ধারাস্রোত বেরিয়ে আসছে অনর্গল জলপ্রপাত থেকে।
লক্ষাধিক বছর আগে আন্টার্কটিকার পূর্ব প্রান্তে সমুদ্রের জলস্তর বেড়ে গিয়ে ভাসিয়ে দেয় স্থলভাগ। নোনতা জলের হ্রদ তৈরি হয়। ধীরে ধীরে হ্রদের জলের ওপরে হিমবাহ তৈরি হয়।

হিমবাহর কারণে ৪০০ মিটার গভীরে আটকে যায় হ্রদের জল। রেড ব্লাড জলপ্রপাতের চেয়ে তলায় থাকা সাবগ্লেসিয়াল হ্রদের জল ৩ গুন বেশি নোনতা। হিমবাহ বরফে জমাট বেঁধে যাওয়া শুরু করলে হ্রদের জল বেশি পরিমাণে নোনতা হয়ে যায়। কোয়ার্টার মাইল পুরু বরফের চাদরে ঢাকা পড়ে আছে হ্রদ। গোটা আন্টার্কটিকার থেকে একেবারে বিচ্ছিন্ন হিমবাহর নীচে থাকা হ্রদ। সূর্যের আলো পৌঁছোয় না এই হ্রদে। অক্সিজেন নেই জলে। লোহার পরিমাণ বেশি হ্রদের জলে। আগে মনে করা হত লাল রঙের অ্যালগির কারণে জলের রঙ লাল।

কিন্তু এখন নানান রকমের বৈজ্ঞানিক পরীক্ষার মাধ্যমে জানা গেছে লোহার জন্য জলের রঙ লাল। হ্রদের জল টেলর হিমবাহর ফাটল থেকে বেরিয়ে এসে পড়ে নীচের লেক বনির জলে।লোহায় পরিপূর্ণ জল ঠান্ডা বাতাসের সংস্পর্শে এসে জমাট বেঁধে যায়। নীচে বনি হ্রদে পড়ার সময় বরফের চাদরে লাল রঙের ধারাস্রোত জমাট বেঁধে যায়। দূর থেকে দেখলে মনে হয় যেন রক্ত গলগল করে অনর্গল বেরিয়ে আসছে। অক্সিজেন না থাকলেও সাব গ্লেসিয়াল হ্রদের জলে বেঁচে থাকতে পারে বহু মাইক্রোব বা অনুজীবী।

১৯১১ সালে জিওসায়েন্টিস্ট গ্রিফিথ টেলর আন্টার্কটিকার রক্ত লাল জলপ্রপাতের ও লাগোয়া উপত্যকার খোঁজ পান। আশপাশের আবহাওয়া হিমাঙ্কের ১৯ ডিগ্রি নীচে থাকলেও হ্রদের জল বরফে জমাট বেঁধে যায় না। সমুদ্রের জলের চেয়েও বেশি পরিমাণে নোনতা অক্সিজেনবিহীন হ্রদের জলে ব্যাক্টেরিয়া, অনুজীবীরা কেমোসিন্থেসিস প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বেঁচে থাকে।