রাজ্যের খবর

ভার্চুয়াল যুগে নিখাদ বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ার অনন্য অনুষ্ঠান

A unique program to build true friendships in the virtual age

Truth of Bengal: এ এক অন্যরকম বন্ধুত্বের নজির। ভার্চুয়াল যুগে এখনও চিরাচরিত রীতি মেনে বাঁকুড়ার আকুইগ্রামে আয়োজন করা হয় সয়লা মেলার। সয়লা মেলায় হিন্দু-মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের মানুষ মালাবদল করেন। অঙ্গীকার করেন একে অপরের আপদে-বিপদে পাশে দাঁড়াবেন। হাই-হ্যালোর যুগে এই আন্তরিক সম্পর্ক বজায় রাখার পরম্পরা আলাদা ছাপ রাখে। হাইটেক যুগে বন্ধুত্বের চিরন্তন সম্পর্ক বজায় রাখার অনন্য নজির গড়ল বাঁকুড়ার আকুইগ্রাম।

বর্তমান সভ্যতা -যন্ত্র নির্ভর। তাই সবটাই যেন যান্ত্রিক হয়ে পড়ছে।ডিজিটাল যুগে, ফেসবুক-ওয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে ভার্চুয়াল বন্ধুত্ব গড়া বা বজায় রাখার চল দেখা যায়। সামনাসামনি না দেখা হলেও দূর থেকে মনের মানুষের সঙ্গে সম্পর্কে বাঁধা পড়ার ট্রেন্ড এখন বড় দেখা যায়। হাই-হ্যালোর যুগে মনের বাঁধন শক্ত করতে প্রথা মেনে বাঁকুড়ার আকুইগ্রামে আয়োজন করা হয় সয়লা মেলার। যেখানে নিখাদ বন্ধুত্বের নির্দশন রেখে মালাবদল করা হয়।

আট থেকে আশি, পরম্পরা বজায় রেখে বন্ধুত্বের ডোর শক্ত করার চেষ্টা করেন। একে অপরকে আলিঙ্গন করেন,আবদ্ধ হন অঙ্গীকারে। শপথ নেন,আপদ-বিপদে, পাশে থাকবেন প্রকৃত বন্ধুর মতো। হিন্দু,মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের মানুষ বন্ধুত্বের বন্ধন শক্তিশালী করার অনুষ্ঠানে অংশ নেন। সামাজিক সংহতির ধারা অব্যাহত রাখার এই অন্যরকম ভাবনা ডিজিটাল যুগে বড় আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে।

চেনা হোক বা অচেনা, ভার্চুয়াল দুনিয়ায় ডিজিট্যাল স্ক্রিনে এক ক্লিকে বন্ধুত্বের প্রস্তাব পাঠানো বা প্রস্তাব গ্রহণই যখন দস্তুর তখন বাঁকুড়ার প্রত্যন্ত আকুই গ্রামের সয়লা উৎসব যেন সন্ধান দেয়  প্রকৃত বন্ধুত্বের। সংস্কৃতে বলে, উৎসবে ব্যসনে চৈব দুর্ভিক্ষে রাষ্ট্রবিপ্লবে, রাজদ্বারে শ্মশানে চ যস্তিষ্ঠতি স বান্ধবঃ। অর্থাত্ উত্সবে, দুর্ভিক্ষে, রাষ্ট্রবিপ্লবে, শ্মশানে যিনি পাশে থাকেন, তিনিই বন্ধু।

চিরাচরিত সম্পর্ক রক্ষা করার জন্য জাতি–ধর্মের বেড়া ভাঙার এই প্রয়াস সমাজজীবনে বিশেষ বার্তা দেয়। প্রায় দেড় শতক আগে জাতি ও বর্ণ বৈষম্যের জেরে এলাকায় বিরাজ করত অশান্তি। তৎকালীন বর্ধমান রাজার এক নায়েব এলাকায় খাজনা আদায় করতে গিয়ে লক্ষ্য করেন অশান্তি, যা তাঁকে বেদনা দেয়।  সেই অশান্ত এলাকাকে শান্ত করতে বুদ্ধিমান নায়েব খুঁজে বের করেন এক সামাজিক দাওয়াই।

তাঁর উদ্যোগেই বাঁকুড়া ও বর্ধমান জেলার সীমানা লাগোয়া এলাকায় এই আকুই গ্রাম সহ আশপাশের গ্রামে চালু হয় সয়লা উৎসব। এই উৎসবের আয়োজন হয় ৪ থেকে ১২ বছর অন্তর। এই উৎসবের মূল সূত্র জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে প্রত্যেক মানুষকে খুঁজে নিতে হবে এক বন্ধুকে।

তারপর সেই বন্ধুর সঙ্গে ফুলের মালা বদল করে সই পাতিয়ে একে অপরকে চন্দনের ফোঁটা দিয়ে শপথ নিতে হয় সারা জীবন সুখে, দুঃখে, বিপদে-আপদে একে অপরের পাশে থাকার। প্রাচীন রীতি মেনে সয়লা উৎসবে যে বন্ধুত্ব বজায় রাখার উদ্যোগ সমাজকে শিক্ষা দিল। অন্ততঃ যাঁরা জাত-ধর্ম নিয়ে বজ্জাতি করেন তাঁদের কাছে এই সনাতন সম্পর্ক স্থাপন সত্যিই শিক্ষা দেয়।

Related Articles