ইন্ডিয়াজোটে স্বার্থপরতার গন্ধ, সিপিএমের আজব অঙ্কের সমীকরণ
Sitaram Yechury Kerala left blow to india unity no Bengal

The Truth of Bengal: সিপিএম আছে সিপিএমেই। ২০২৩ সালে দাঁড়িয়ে যখন বিজেপি বিরোধী দলগুলি সম্মিলিতভাবে শক্তিশালী হচ্ছে, চব্বিশের রণকৌশল সাজাতে ব্যস্ত, তখন নিজের খেয়ালে আপন মগনে অস্তিত্বহীন ধ্বজা নিয়ে চিৎকার করতে ব্যস্ত।
রাজনৈতিকমহলে প্রশ্ন অনেক উঠছে, তীরে এসে তরী ডোবানোর চেষ্টা কে চালাচ্ছে? মাঝ সমুদ্রে জাহাজে ফুটো করে নোনা জল ঢোকানোর চেষ্টা কে চালাচ্ছে? ক্ষুদ্র অংশীদারিত্বে কারা বড় ভাগ চাইছে? উত্তর মিলবে ঠিক সময়ে, কিন্তু সঙ্কেত যে এখন থেকেই মিলতে শুরু করেছে!
বঙ্গে সিপিএমের ভিত্তি শূন্য। দেড় দশক আগে যে দলের শীর্ষ নেতারা অহমিকায় চূড় ছিলেন, এই বলে, যে আমরা ২৩৬ আর ওরা ৩৬। সেই সিপিএম নেতৃত্বাধীন বামজোট আজ বিধানসভায় শূন্য। সংখ্যা কমেছে, কিন্তু অহমিকার দাপট এখনও রয়েছে? সিপিএমের শীর্ষ নেতৃত্ব সিদ্ধান্ত নিয়েছে, চব্বিশের নির্বাচনে তারা বঙ্গে তৃণমূলের সঙ্গে আসন সমঝোতায় যাবে না। এবং কেরেলাতেও তারা কংগ্রেসকে জমি ছাড়তে নারাজ। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত রিপোর্টের সূত্র ধরলে একটা কথা পরিষ্কার ভাবে বোঝা যাচ্ছে। সিপিএম বিজেপিকে যেমন শত্রু মনে করছে, ঠিক তেমনই তৃণমূলকেও তারা শত্রু মনে করছে।
গত সপ্তাহেই নয়াদিল্লিতে এনসিপি প্রধান শরদ পাওয়ারের বাসভবনে অনুষ্ঠিত হয় প্রথম কো-অর্ডিনেশন কমিটির বৈঠক। সেই বৈঠকে উপস্থিত থাকতে পারেননি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। কারণ তাঁকে একই দিনে হাজিরা দিতে নোটিস জারি করেছিল ইডি। আর ওই একই দিনে কো-অর্ডিনেশন কমিটির বৈঠকে উপস্থিত ছিল না সিপিএমের কোনও প্রতিনিধি। আসলে বিরোধী জোটের উপর চাপ সৃষ্টি করতেই এই কৌশল।
সিপিএমের দলীয় সূত্রের খবর, অতি সম্প্রতি পলিট ব্যুরোর একটি বৈঠক হয়। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়, বিজেপি বিরোধী জোটে যাতে ভোট কাটাকাটির ফলে বিজেপির সুবিধা না হয়, তার দিকে নজর দিতে হবে। কিন্তু সেই কৌশল কীভাবে সফল হবে, তার সমাধান রাস্তা কী, তা নিয়ে বিস্তারিত কোনও আলোচনা হয়নি। বা রফাসূত্রও বেরোয়নি। উল্টোদিকে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিপিএম, তার সুফল মিলবে বিজেপির ঘরে। এখন প্রশ্ন হল, বিজেপি বিরোধী জোটের তিনটি সফল বৈঠকের পর সিপিএমের শীর্ষ নেতৃত্বের এমন আচরণ কেন? রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞমহলের মত, সিপিএমের এই কৌশল লুকিয়ে রয়েছে ইতিহাসে।
বিংশ শতাব্দীর গোড়া থেকে মহম্মদ আলি জিন্না যখন বুঝেছিলেন, ভারতীয় রাজনীতিতে স্বাধীনতা সংগ্রামে জওহরলাল নেহেরু ও মহাত্মা গান্ধী যে জায়গা দখল করে আছে, সেখানে আলাদা করে জায়গা করে নেওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই। তাই তিনি আলাদা মুসলিম রাষ্ট্রের পক্ষে সওয়াল করেছিলেন। অবশেষে ইসলাম ধর্মালম্বীদের জন্য একটি দেশ হওয়া উচিত। জিন্না মোটেও ধার্মিক ছিলেন না। ইসলাম ধর্মে যেসমস্ত নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, তিনি প্রত্যেকটি করতেন। অথচ, ইসলাম ধর্মকে হাতিয়ার করে দু টুকরো করে দিলেন।
স্বপ্ন একটাই, একটি দেশের তিনি হবে প্রধানমন্ত্রী। আর তাঁর এই স্বপ্ন পূরণের জন্য, মূল্য চোকাতে হয়েছিল লক্ষাধিক সাধারণ গরিবগুর্বো মানুষকে। সিপিএমেরও হাল হয়েছে তাই, নিজেদের অস্তিত্বহীন অস্তিত্বকে জাহির করতে, একটি শক্তিশালী জোটকে ভাঙার চেষ্টা চালাচ্ছে। জিন্না যেভাবে নেহেরুকে ব্ল্যাকমেল করেছিল, সেই একই পন্থায় কংগ্রেসসহ কয়েকটি শক্তিশালী বিরোধীদের প্রতি চাপ সৃষ্টির চেষ্টা চালাচ্ছে।
অনেকে মনে করছেন, জিন্না যে ফর্মুলায় নিজেদের অস্তিত্বকে তুলে ধরে ভারতকে ধ্বংসের পথে নিয়ে গিয়েছিল, সেই ইতিহাসের পাতাকেই বাস্তব রূপ দিতে চাইছে সিপিএম। কিন্তু এখন ২০২৩। সিপিএম নিজেদের আদর্শ থেকে সরে গিয়েছে বহু দিন হয়েছে। এমন আচরণ করলে আগামী দিনে আরও খারাপ অবস্থা হবে। টিমটিম করে কেরালায় যে প্রদীপ জ্বলছে, তাও একদিন নিভে যেতে পারে। প্রশ্ন উঠছে, বঙ্গে মমতার বিরোধিতা কেন? কেন্দ্রীয় স্তরে মমতার পাশে বসতে সিপিএম নেতৃত্বের অনীহা কেন?
বিশেষজ্ঞমহল মনে করছে, ৩৪ বছরে সিপিএমের নেতৃত্বাধীন বামজোট রাজ্যের গরিব গুর্বো মানুষদের যে সমাজতন্ত্র শাসন ব্যবস্থার স্বপ্ন দেখিয়েছিল, তার বাস্তব রূপ দেখা গিয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আমলে। স্কুল ছুটের সংখ্যা কমেছে, বাল্যবিবাহের সংখ্যা কমেছে। কন্যাশ্রী, সবুজসাথী, গ্রামের রাস্তা, পানীয় জলের ব্যবস্থা, গ্রামের মধ্যে স্বাস্থ্যকেন্দ্র, গণবণ্টন ব্যবস্থা, লক্ষ্মীভাণ্ডার আরও কত প্রকল্প আজ তৃণমূলস্তরে পৌঁছে গিয়েছে।
আর যদি গ্রামের মানুষদের বাম আমলের প্রকল্পের কথা জিজ্ঞেস করা হয়! তাহলে এক বাক্যে অনেকেই বলে উঠবেন, সন্ত্রাসের কথা, সিপিএম নেতৃত্বের লোকাল কমিটি থেকে জেলানেতৃত্বের সালিশির কথা। আর প্রকল্প? সেতো সোনার পাথরবাটি! কেন্দ্রের কী প্রকল্প ছিল, তাই জানতো না গরিব গ্রামীণ মানুষেরা। আর এখানেই পুরো জমি হারিয়ে ফেলেছে সিপিএম। ফলত জিন্নার মতোই অবস্থা হয়েছে সিপিএম নেতৃত্বের। বাংলার প্রত্যন্ত গ্রামে তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা নেই। সাধারণ মানুষ এখনও মনে করে না, বিজেপির বিরুদ্ধে টক্কর দেওয়ার মতো কোনও সিপিএম নেতা বঙ্গে নেই। আর এই সত্যটি বুঝে গিয়েছে পলিটব্যুরোর নেতারা।
তাই তাদের হাতে এখন একটাই পথ খোলা, দেশ বাঁচুক না বাঁচুক, যে জোটে তাদের গুরুত্ব নেই, সেই জোট ভাঙাই প্রধান লক্ষ্য। তাতে বিজেপির সুবিধা হল, কি হল না কিস্সু আসে যায় না। অনেকটাই জিন্নার ফর্মুলার মতো। জিন্না চেয়েছিলেন কায়েদ-এ-আজম হতে, সেটা হয়েছিলেন, কিন্তু এমন কোনও শক্তিশালী সংবিধান রচনা করতে পারেননি, যার ভিত্তি ধরে পাকিস্তান অগ্রগতি করবে। তাই পাকিস্তান ক্রমেই শেষ হয়ে আসছে। লড়াই, দ্বন্দ্ব, গৃহযুদ্ধের দোরগড়ায় দাঁড়িয়ে। ভারতের সিপিএম নেতৃত্বের অবস্থাও অনেকটাই তাই। যেন আত্মঘাতী ফিদাইন বাহিনীর মতো, নিজেদের স্বার্থ না মিললে, ধ্বংস করো।
সিপিএমের কৌশল যাই থাক, বিরোধী শক্তি যে আরও পরিণত হচ্ছে, শক্তিশালী হচ্ছে, তা সাবধানী পদক্ষেপেই প্রমাণিত।